বাঙালির চিরপরিচিত এই শাড়িটি ঠিক কবে থেকে বোনা শুরু হয়েছিল এবং কীভাবেই বা এই শাড়িটি আমাদের সকলের মনে পাকাপাকিভাবে বাসা বেঁধে ফেলল, তার কোনও ইতিহাসসম্মত দলিল ঠিক পাওয়া যায় না। কিন্তু এই শাড়িটি ছাড়া কোনও বাঙালি মহিলার আলমারি অসম্পূর্ণ, তা তিনি যত আধুনিকাই হোন না কেন! আমরা যতই বলি, এই ধরনের শাড়ি খুব কড়া ধাতের, সহজে পরা যায় না আবার বেশিদিন টানা পরলেই প্যাতপ্যাতে হয়ে যায়, কিন্তু ঢাকাই বিনে বিয়ের তত্ত্ব সাজাতে পারবেন? কিংবা ধরুন দুর্গাপুজোর কেনাকাটা সম্পূর্ণ হবে? মোটেই না। তাই জামদানির আজকাল অনেক ভ্যারাইটি! সনাতনী জামদানির পাশাপাশি, লিনেন ঢাকাই জামদানি, সফট ঢাকাই জামদানি ইত্যাদি নানা রকমফেরে সেই সাবেকি ঢাকাই (Dhakai) জামদানি, যা বাঙালি মহিলার স্নিগ্ধ সাজের অন্যতম অঙ্গ ছিল, সেটাই যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে! তাই আজ এই প্রতিবেদনে আমরা জামদানির যাত্রাপথ নিয়ে আলোচনা তো করবই, সেই সঙ্গে জানিয়ে দেব কলকাতার কোন দোকানে পেয়ে যাবেন আপনার সাধের জামদানি, একেবারে সাধ্যের মধ্যে।
ঢাকাই সৃষ্টির ইতিহাস
আসলে ব্যাপারটার গোড়াতেই গলদ! শাড়িটির নাম আদৌ ঢাকাই না, বরং জামদানি (Jamdani)! অধুনা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কারিগররাই গোড়ায় এই ধরনের শাড়ি (Sarees) বুনতেন বলে এই নাম প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল লোকের মুখে-মুখে! খ্রিস্ট পূর্বাব্দ তিনের সময় থেকেই ঢাকার তাঁতিরা এই জামদানি বোনা শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলে! জামদানি শব্দটি আদতে পারস্য থেকে এসেছে। জাম শব্দের অর্থ ফুল এবং দানি মানে ফুলদানি, দুয়ে মিলে জামদানি। তাই মূলত এই ধরনের শাড়িতে ফুলপাতার নকশাই দেখা যায়। পরে মোঘল অনুপ্রেরণা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় এই শাড়ির বাহার আরও খোলে। গোড়াতে শুধুমাত্র সুতির সুতো দিয়েই এই শাড়ি বোনা হত। যত সূক্ষ্ম সুতো, তত দামি জামদানি! পরে সিল্কের সুতোও ব্যবহার করা শুরু হয়। ঢাকার আশেপাশে জামদানি উপযোগী তুলোর চাষ করা হত। পরে অনেক চেষ্টা করা হলেও, এই বিশেষ ধরনের কার্পাস তুলোর ফলন আর কোনও জায়গায় মাটিতেই সম্ভব হয়নি। তাই ঢাকাই জামদানি আজও অদ্বিতীয়ই রয়ে গিয়েছে! তবে দেশভাগের পরে বহু বাংলাদেশি হিন্দু কারিগর ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁরাই এখানে জামদানি বোনার প্রচলন শুরু করেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে বোনা জামদানি এবং খাঁটি ঢাকাই জামদানি যে অনেকটাই আলাদা, তা স্বীকার করবেন যে-কোনও জামদানিপ্রেমীই!
জামদানির রকমফের
১. ঢাকাই জামদানি: খাঁটি জামদানি, যা শুধুমাত্র ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বোনা হয়, শেষ হতে প্রায় বছরখানেক লাগে। স্থানীয় ফুল-লতাপাতার মোটিফ দিয়ে এই শাড়ি বোনা হয়। সারা শাড়িতে কাজ, চওড়া পাড়, আঁচলে ঠাসা কাজ, এই ধরনের কাজই মূলত বোনা হয়। তবে জমিতে ছোট বুটি আর আঁচলে কাজ, এরকম শাড়িও তৈরি করা হচ্ছে আজ। কিছু জনপ্রিয় মোটিফ, যা এই ধরনের শাড়িতে বোনা হয়, তা হল, হাজার বুটি, পান্না হাজার, কল্কা, বুটিদার, ফুলওয়ার, তেরচা, দুরিয়া, চারকোণা।
যদি অনলাইনে ঢাকাই জামদানি কিনতে চান, তা হলে এখান থেকে কিনতে পারেন…
২. টাঙ্গাইল জামদানি: এই ধরনের জামদানি শাড়ি বোনা হয় বাংলাদেশেরই টাঙ্গাইল জেলায়। এই শাড়ির প্যাটার্ন একটু আলাদা। সারা জমিতে ছোট্ট-ছোট্ট জ্যামিতিক বুটি, চওড়া পাড় আর ঠাসা আঁচল। মোটিফের ধরনেও অনেকটাই আলাদা। মূলত পদ্মফুল, মাছের আঁশ বা প্রদীপের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয় এই ধরনের জামদানি শাড়ির পাড়ে।
যদি অনলাইনে টাঙ্গাইল জামদানি কিনতে চান, তা হলে এখান থেকে কিনতে পারেন…
৩. শান্তিপুরি জামদানি: পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুর গ্রামে তৈরি জামদানিই হল শান্তিপুরি জামদানি। অনেকটা টাঙ্গাইল জামদানির ধাঁচের মোটিফই বোনা হয় এই শাড়িতে। তবে সাধারণত তা কোণাকুণি আকারে বোনা হয়। এই ধরনের শাড়ি অনেক বেশি মিহি সুতোয় বোনা। ফলে ঢাকাই জামদানির তুলনায় তা অনেকটাই হালকা এবং সহজেই ভাঁজ করা যায়।
যদি অনলাইনে শান্তিপুরি শান্তিপুরি জামদানি কিনতে চান, তা হলে এখান থেকে কিনতে পারেন…
৪. ধনিয়াখালি জামদানি: ধনেখালি গ্রমের তাঁতিরা যে জামদানি বোনেন, তা অন্য সব জামদানির চেয়ে একেবারেই আলাদা। এই শাড়ি অনেক বেশি টাইট করে বোনা হয়। শাড়ির রংও বেশ জমকালো হয় ও পাড় হবে জমির রংয়ের কনট্রাস্টে।
যদি অনলাইনে ধনিয়াখালি জামদানি কিনতে চান, তা হলে এখান থেকে কিনতে পারেন…
কলকাতার সেরা জামদানির ঠেক
কলকাতার অলিগলিতে শাড়ির দোকান আর প্রায় সব দোকানেই আসল ঢাকাই জামদানি পাওয়া যায় বলে দাবি জানানো হয়! দোকান ছাড়াও আছে নানা বুটিক, সকলেই আজকাল প্রায় নানা ধরনের, নানা রংয়ের জামদানি রাখেন। আমরা এখানে এমন কয়েকটি দোকানের সন্ধান দিচ্ছি, যেখানে সাধ্যের মধ্যে মোটামুটি ভাল কোয়ালিটির জামদানি পেয়ে যাবেন…
১. আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়, গড়িয়াহাট
পাঁচতলা এই শাড়ি মলে একটি তলা বরাদ্দ আছে শুধুমাত্র ঢাকাই জামদানির জন্য! পকেটসই এবং দেখনসই শাড়ি কিনতে চাইলে যেতে হবে এঁদের কাছেই!
ঠিকানা: ১৬৮ রাসবিহারি অ্যাভিনিউ, ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক, বালিগঞ্জ, কলকাতা ৭০০০২৯। ফোন: ০৯৯০৩৫ ৭২০০৭
২. আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলাল
সাবেকি থেকে শুরু করে আধুনিক সফট ঢাকাই, সব ভ্যারাইটিই পাবেন এই দোকানে। চাইলে পেয়ে যাবেন ঢাকাইয়ের সঙ্গে পরার মতো নানা ধরনের রেডিমেট ব্লাউজ ও কস্টিউম জুয়েলারি। সঙ্গে আছে স্বর্ণালী কাঞ্জিলালের টিপস ও আতিথেয়তা!
ঠিকানা: ৭৯/২ মহাত্মা গাঁধী রোড, কলেজ স্কোয়্যার ওয়েস্ট, কলেজ রো, কলকাতা ৭০০০১৯। ফোন: ০৩৩ ২৪৪১ ১২৪৬
৩. বলরাম সাহা অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড
ঠিকানা: প্রথম তল, ১৪/৬ গড়িয়াহাট রোড, একডালিয়া, কলকাতা ৭০০০১৯। ফোন: ০৩৩ ২৪৪০ ৮৬৭৬
৪. বস্ত্রকুট্টিম
একটু অন্যরকম ধাঁচের জামদানি চাইলে ঢুঁ মারুন এই দোকানটিতে। দাম একটু বেশির দিকে হলেও, শাড়িটি এক্কেবারে এক্সক্লুসিভ হবে।
ঠিকানা: ১৩/৮ অনিল মৈত্র রোড, একডালিয়া, বালিগঞ্জ, কলকাতা ৭০০০১৯। ফোন: ০৩৩ ২৪৪০ ৪০৯৪
৫. শাড়ি কুটির
ফুলিয়ার বেশ কিছু তাঁতি মিলে সমবায় প্রথায় চালু করেছিলেন এই দোকানটি। এখনও সরাসরি তাঁতিরাই এখানে শাড়ি পৌঁছে দেন। যে-কোনও সময়ে ধনেখালি বা শান্তিপুরি জামদানি শাড়ি কিনতে চাইলে চলে যান এখানে।
ঠিকানা: ৯ একডালিয়া রোড, বালিগঞ্জ, কলকাতা ৭০০০১৯। ফোন: ০৩৩ ২৪৬০ ৩৬৩৩
৬. প্রিয়গোপাল বিষয়ী
যদিও এঁদের আসল সুনাম বেনারসি বিক্রিতে, কিন্তু নানা ধরনের জামদানির প্রচুর স্টকও আছে এঁদের কাছে।
ঠিকানা: ১১৩/১ এ রাসবিহারি অ্যাভিনিউ, ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের বিপরীতে, কলকাতা ৭০০০২৯। ফোন: ০৩৩ ২৪৬৫ ৮২৪৬
মূল ছবি সৌজন্য: ইনস্টাগ্রাম
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!