রাত পোহালেই মাদার্স ডে। তা মায়ের জন্য কী-কী করবেন, ভেবে রেখেছেন তো? কেউ হয়তো মায়ের জন্য নিজের হাতে রান্না করবেন, কেউ বা মায়ের জন্য কিছু অন্যরকম গিফট কিনবেন, কেউ হয়তো মায়ের সঙ্গে বাইরে লাঞ্চ আর সিনেমা দেখার প্রোগ্রাম করবেন আবার কেউ বা শুধু একটা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা স্টেটাস আপডেট করেই ক্ষান্ত থাকবেন! কিন্তু এসবের মধ্যেও একজনকে কিন্তু আমরা ভুলে যাই। কারণ, তিনি আপনার নিজের ‘মা’ নন, তিনি সম্পর্কে শাশুড়ি-মা। শাশুড়ি মানেই ভয়ের ব্যাপার, অপছন্দের একজন মানুষ। টিভি খুললেই দেখবেন, সিরিয়ালে শাশুড়ি-বউমার (saas-bahu) কোঁদল। এই শাশুড়ি মনে-মনে ছক কষছেন যে, কীভাবে বউমাকে মাত দেবেন, আবার অন্য দিকে বউমা দিব্যি শাশুড়ির প্রতিটা চালের বিরুদ্ধে মোক্ষম চাল আগে থেকেই সাজিয়ে রাখছেন! সম্পর্ক তো নয়, যেন দাবা খেলা। যাই হোক, আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, ওই মানুষটিকে কিন্তু আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
আবার সব শাশুড়িই ( mother-in-law) যে গীতা দে (পুরনো বাংলা সিনেমার ভয়ঙ্কর কুচুটে শাশুড়ির) হবেন তা তো নয়, কেউ-কেউ আছেন যিনি কিন্তু একেবারে নিরূপা রায় (শাশুড়ি কম, মা বেশি), আবার কেউ বা মুখে মিষ্টি, কিন্তু সব সময় ভাবছেন কীভাবে বউমাকে (daughter-in-law) সাত গোল দেওয়া যায়! তা হলে চলুন না, মাদার্স ডে-র প্রাক্বালে একটু মজার ছলে শাশুড়ি-দের চুলচেরা বিচার করা যাক।
উচ্চাকাঙ্ক্ষী শাশুড়ি
ওঁর ছেলের জন্য আপনার চেয়েও আরও ভাল বউ উনি খুঁজে আনতে পারতেন, যদি উনি নিজে ছেলের বিয়ের দায়িত্বটা নিতেন! কত বড়-বড় ঘর থেকে ছেলের জন্য সম্বন্ধ এসেছিল, কিন্তু ছেলে শেষ পর্যন্ত আপনাকে বিয়ে করল…এ নিয়ে ওঁর দুঃখের শেষ নেই!
কীভাবে তাঁকে সামলাবেন: শান্তভাবে কথার ছলে একদিন শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করুন যে, ঠিক কোন কারণে উনি আপনাকে পছন্দ করেন না। ছেলে যদি ওঁর নয়নের মণি হয়, তা হলে তার পছন্দও (অর্থাৎ আপনি) তো ওঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত, তাই না?
বউমা যদি বলতে পারত, তা হলে বোধ হয় বলত – কিছু করার নেই মা, এটাই আপনাকে মেনে নিতে হবে, ঠিক যেভাবে আমি আপনাকে মেনে নিচ্ছি!
হিংসুটি শাশুড়ি
ইনি সারাক্ষণ ছক কষেন যে কীভাবে ছেলের থেকে বেশি অ্যাটেনশন পাবেন। ছেলে যদি বউমাকে বেশি ভালবেসে ফেলে তা হলে ওঁর জীবনের সব সুখ-শান্তি যেন চলে যায়!
কীভাবে তাঁকে সামলাবেন: – এই সমস্যাটা কমবেশি সব শাশুড়ির মধ্যেই থাকে। আসলে আপনি বিয়ে হয়ে আসার আগে পর্যন্ত তো সংসারের সকলের দায়িত্ব ওঁর উপরেই ছিল এবং বাড়ির সকলে দরকারে-অদরকারে ওঁর উপরেই নির্ভর করতেন। আপনি আসার পর হতে পারে ওঁর এমন মনে হয় যে, ওঁর যে জায়গাটা বা গুরুত্ব সংসারে ছিল, সেটা ধীরে-ধীরে কমে যাচ্ছে। এটা দোষের নয়, আর এই সমস্যাটা শুধুমাত্র শাশুড়ির নয়, যে-কোনও মানুষেরই হয়।
বউমা যদি বলতে পারত, তা হলে বোধ হয় বলত, আপনি যে সবসময় আমার সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতায় নামতে চান, তাতে কি আপনার আদৌ কোনও লাভ হয়? বরং মানসিক অশান্তি বাড়ে!
‘আই অ্যাম দ্য বস’ শাশুড়ি
উনি কারও সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করেন না, ওঁর সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে হয়। ওঁর কোনও কথাকে নিছক কথা হিসেবে ধরবেন না, ওটা আদেশ এবং সেটা পালন করা আপনার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে! শ্বশুরবাড়িটা বাড়ি কম, মিলিটারি ক্যাম্প বেশি – এটাই মনে হয় বউমার!
কীভাবে তাঁকে সামলাবেন: ওঁকে মাঝেমধ্যেই বোঝান যে, আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং ওঁর ছেলের বউ। আপনাকে উনি কাজ শেখাতে নিশ্চয়ই পারেন, কিন্তু আদেশ করতে পারেন না। ওঁর এই ব্যবহারে আপনি যথেষ্ট অপমানিত বোধ করেন এবং তার চেয়েও বেশি কষ্ট পান। আর আপনি কষ্ট পেলে ওঁর ছেলেও কষ্ট পায়। আশা করি, সেটা উনি কখনওই চান না।
বউমা যদি বলতে পারত, তা হলে বোধ হয় বলত, সরি মা, কিন্তু আমি আপনার আদেশ মানতে বাধ্য নই। শুধুমাত্র অশান্তি এড়ানোর জন্য আমি হাসিমুখে আপনার সঙ্গে কথা বলি।
শাশুড়ি নন, উনি মা
আপনি কোনওদিন ইউনিকর্ন দেখেছেন? দেখেননি তো, শুধু শুনেছেন বা রূপকথার বইয়ে পড়েছেন ইউনিকর্নের ব্যাপারে? ইনিও ঠিক সেরকম! এঁর ব্যাপারে শোনা যায়, গল্পে এই ধরনের চরিত্রের কথা পড়া যায়, আবার মাঝেমধ্যে সিনেমা-সিরিয়ালে এঁকে দেখাও যায়…কিন্তু বাস্তবে? নাঃ, বাস্তবে উনি এগজিস্টই করেন না।
আমাদের মা-বাবার জায়গা কেউ নিতে পারে না, কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন, বিশেষ করে শ্বশুর-শাশুড়িরও কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে যায় আমাদের জীবনে। শাশুড়ি থেকে মা হয়ে ওঠার জন্য শাশুড়িকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে, ঠিক সেভাবেই ওঁকে মা হিসেবে মন থেকে মেনে নেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু বউমারও ঠিক ততটাই। তাঁকে সামলানোর উপায় তো আমরা বলেই দিলাম, এবার বল আপনার কোর্টে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!