এ বাবা, তুই ফেসবুক (facebook) করিস না? ইস, কত দিন পর দেখা হল, আমাকে প্লিজ ফেসবুকে (facebook) একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিস প্লিজ! কী করিস আজকাল? ফেসবুকে অনলাইন দেখি না একদম! খুব চেনা-চেনা সংলাপ তাই না? ফেসবুক (facebook) করে না এরকম লোক (people) খুঁজে বের করতে পারলে সরকার আপনাকে পুরস্কৃত করবে! সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল হতেই পারে, কিন্তু সব নেশার বাবা হচ্ছে এই ফেসবুক। এই যে অ্যামেরিকাতে বসে জুকেরবাবার্গবাবুর মাথায় আচমকা খেয়াল আয়া, আরে বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি। এমন একখান নেটওয়ার্ক অ্যাপ তৈরি করে বাজারে ছাড়ব না, হুহু বাওয়া, একবার এখানে ঢুকলেই ধুতে থাকো, ধুতে থাকো! সত্যি! কী আজব দুনিয়া এই ফেসবুকের (facebook)। কত রকম লোকজন (people) যে আছে এখানে। ভাল-মন্দ, কবি-লেখক, বুড়ো-বুড়ি থেকে শুরু করে পাড়ার রোল বিক্রেতা, সব্বাই এর নেশায় মশগুল। আপনি যদি নিয়মিত ফেসবুক করেন, তাহলে বুঝবেন এখানে কিছু বিশেষ বিশেষ ধরণের প্রজাতি…ইয়ে মানুষজন আছেন। তাঁরা যাকে বলে এক একখানা যন্তর পিস! আমরা শ্রেণীবিভাগ করেছি তাঁদের। দেখুন তো আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে (friendlist) এরকম লোকজন আছেন কিনা!
১) লাইকাশ্রী
সেই যে লাইকা বলে একটা ঝুমুর-ঝুমুর লোমওয়ালা কুকুর ছিল না? যে সেই চাঁদ না মঙ্গল কোথায় যেন একা একা গিয়ে খুব তালেবর হয়েছিল। এখন সেই কুকুর সবাইকে লাইক করত নাকি সেই কুকুরকে সবাই লাইক করত বলে তার নাম লাইকা ছিল কে জানে বাবা! তবে ফেসবুকে এই প্রথম ক্যাটিগরি আমরা তাকেই উৎসর্গ করলাম। কারণ, এই শ্রেণিতে যাঁরা পড়েন, তাঁরা শুধুই লাইক দিয়ে যান। আপনার বাড়ির ছবি, গাড়ির ছবি, হাঁড়ির ছবি, শাড়ির ছবি…সে গুষ্টির পিণ্ডি যাই হোক না কেন। তাঁরা লাইক দেবেনই!
২) মেম্বার অফ ঘোড়ার ডিম
এঁরা ফেসবুকে ঊনকোটি ছাপান্নটা group-এর মেম্বার হয়ে বসে থাকেন। তার মধ্যে বেশিরভাগ group হয় সিনেমার নয়তো রান্নার… আর বাকিগুলো বকওয়াস। এই সব group-এ তাঁরা ন্যাকা-ন্যাকা প্রশ্ন করেন। আর সেই ন্যাকা প্রশ্নের দেড় হাজার বোকা উত্তরও থাকে! যেমন, আজ থেকে পাঁচশ বছর আগের একটা সাদা-কালো সিনেমার ছবি দিয়ে তাঁরা জানতে চান, বলো তো এটা কোন নায়িকার ছবি? বা আজ আমি ডালের সঙ্গে বেগুনভাজা খাব না আলুভাজা? শুক্তোতে কি চিজ কুচিয়ে দেওয়া যায়…এসব হাবিজাবি প্রশ্ন। আরে বাপু আপনি ডালের সঙ্গে আলুভাজা খান কি টিকটিকির ন্যাজ, তাতে আমাদের কী?
৩) ছবি বিশ্বাস
হ্যাঁ, এঁরা শুধু ছবিকেই বিশ্বাস করেন। বাকি দুনিয়া যায় তেল লেনে! ভোরবেলা উঠে ইয়ে করা থেকে রাত্তিরে কেলান্ত হয়ে বিছানায় ধপাস হওয়া পর্যন্ত এঁরা নিজেদের নানা পোজে ছবি দিয়ে যান। সে ছবি দেখে আপনি চক্ষু সার্থক করে যাতে অল্পবিস্তর জ্ঞানও লাভ করেন, তার জন্য ছবির নীচে দু’কলম লিখেও দেন। যেমন, সূর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে লেখেন গুডমর্নিং ফ্রেন্ডজ! বা ইটিং বিরিয়ানি অ্যাট অমুক রেস্তোরাঁ। তা বাপু, গপগপিয়ে গিলছ সে তো দেখতেই পাচ্ছি, তা আবার বলা কী আছে, অ্যাঁ?
৪) পেঁড়াও আবার পদ্য লেখে?
এই হচ্ছে মুশকিল জানেন তো? আপনার রাত দুপুরে বাতের ব্যথা হলে একটা ডাক্তার পাবেন না। মেয়ের বিয়ে দিতে যান একটা ভাল পাত্র পাবেন না, কিন্তু অলিতে গলিতে, বনে বাদাড়ে, রণে বনে সব জায়গায় একটা করে আস্ত কবি পেয়ে যাবেন। এই ব্যাপারে চ্যাম্পিয়ন হল বাঙালিরা। কারণ, একমাত্র এই জাতিই “আমিও রবীন্দ্রনাথ হতে পারি” রোগে আক্রান্ত। এঁরা ফেসবুকে দিনরাত এক করে লিখে চলেন, লিখেই চলেন। সে আপনার দেওয়াল, আপনার খেয়াল লিখুন না। কিন্তু এঁরা আপনার কানের মাথা খেয়ে নেবেন, এইটা বলে যে এই সব বিকট পদ্য আপনাকে পড়তেও হবে, আবার মতামতও দিতে হবে! মেলা জ্বালা!
৫) প্রতিবাদী আত্মা
এঁরা শুধু প্রতিবাদ করেন। মানিকতলায় জল নেই কেন, পঞ্জাবের ট্রেন লেট কেন? গুজরাতের খাকরায় ঝাল কেন? ইংরেজ এখনও ভারত ছাড়েনি কেন? এসব নানা প্রশ্ন তাঁদের কুরে-কুরে খায় আর এঁরা জ্বালাময়ী পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ করে যান। তবে নিশ্চিন্দি হওয়ার মতো কথা হল এই যে, এঁদের কথায় কেউ কান দেয় না!
৬) আঁতলা ভিড় পাতলা হ!
পাক্কা আঁতেল, বুঝলেন? নাঃ, এঁরা কী লেখেন আমার কেন, আইজ্যাক নিউটনের বাবাও বুঝবেন না! নিজেদের ভাষাকে এঁরা নাক কুঁচকে ভাসা-ভাসা জানেন, আর কোথায় পেরু বা হনলুলুতে কোন লেখক বা পরিচালক আছেন, তাঁকে নিয়ে খুব মাতামাতি করেন। এঁরা বেশিরভাগই ইঞ্জিরিতে লেখেন আর এমন সব লোকজনের নাম করেন, যাঁদের নাম উচ্চারণ করতে গেলে পোকা দাঁত খুলে হাতে চলে আসে!
৭) মন্তব্যকূলচূড়ামণি
ইয়েস! এঁরা হলেন কমেন্ট মাস্টার। মানে কমেন্ট করায় এঁরা মাস্টার্স করে বসে আছেন! যে কোনও বিষয় হোক, বিশ্বাস করুন যে-এ-এ কোনও বিষয় হোক, এঁরা একটা মন্তব্য করবেনই। করিনার চুল হোক, দীপিকার কানের দুল হোক বা কোনও নেতার ঐতিহাসিক ভুল হোক, এঁরা বলবেনই।
৮) ময়না কথা কয় না
এঁরা আছেন! ব্যস ওটুকুই। নো লাইক, নো কমেন্ট, নো পোস্ট, কিস্যু না। আপনি তাঁদের সৌজন্যসূচক হ্যালো, হাই, নমস্কার থেকে শুরু করে ফরাসি, জাপানি, স্প্যানিশ যে-কোনও ভাষাতেও ডাক দিন না কেন, এঁরা জাস্ট স্পিকটি নট হয়ে বসে থাকেন।
৯) আমাকে দেখুন
এঁরা হচ্ছে শোঅফ পার্টি। এঁরা সবচেয়ে বেশি বর বা বউয়ের জন্মদিন ও নিজেদের বিবাহবার্ষিকীতে এইয়া লম্বা পোস্ট দিয়ে নিজেদের ভাব ভালবাসা জাহির করেন। কেন রে বাপু? সক্কাল-সক্কাল উঠে হ্যাপি বার্থডে বলে দিতে মুখে ফোস্কা পড়ে? তাপ্পর এঁরা গাড়ি কিনলে, বর হিরের আংটি দিলে বা বউ খাঁটি চামড়ার ওয়ালেট দিলে ঘটা করে ছবি দিয়ে সব্বাইকে সোনুমোনু, গুলুগুলু এইসব বলে থাঙ্কু বলেন। আর বরাত জোরে ফরেনে গেলে তো কথাই নেই। পাক্কা এক থেকে দেড় লাখ ছবি পোস্ট করবেনই। যাচ্ছেতাই!
১০) জ্ঞানরত্ন, জ্ঞানসাগর
ইস এঁরা যে কত জানেন। নিজেকে মুখ্যু মনে হয় গো! এঁরা বিশ্লেষণ করেন। আর প্রতিটি পোস্টে জাহির করেন নিজেদের জ্ঞান! সারা পৃথিবীতে কী হচ্ছে আর কী হচ্ছে না, এঁরা তার পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাখেন এবং সেটা সবাইকে জানান। এঁদের উপরেই আছে ভুবনের ভার। অভিনেতা, গায়ক, নায়ক, লেখক থেকে শুরু করে সিরিয়ালের উঠতি নায়িকার জম্মদিন স-অ-অ-ব এঁরা মনে রাখেন। আর গোটা বিশ্ব যে খবর জেনে যায়, সেটা তাঁরা নিজেদের দেওয়ালে শেয়ার করে দায়িত্ব পালন করেন। সাবাস!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!