২০২০ অনেক খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করিয়েছে। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর পরই অনেক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছি আমরা। হাসপাতালে অসুস্থ বৃদ্ধকে যেমন মাটি থেকে তোলার জন্য সাহায্যের হাত কেউ বাড়িয়ে দেয়নি। একইভাবে অনেক অসুস্থ করোনা রোগীর জন্য় এগিয়ে আসেনি কেউ। আমপানের দাপটে অনেক মানুষের বাড়ি ভেঙে পড়েছে, ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু এই সব খারাপের পরেও কয়েকটি ঘটনা আমাদের মানবতায় বিশ্বাস (restored our faith in humanity) ফিরিয়ে এনেছে। বছর শেষে বছরের সেই ঘটনা (stories of 2020) আবার ফিরে দেখা যাক...
লকডাউনে গরিব মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন অনেক ছেলে মেয়ে। বলা ভাল অল্পবয়সী ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছে (stories of 2020)। সেইসব ছবি আমরা পেয়েছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরকম উদাহরণ প্রচুর। সেই উদ্যোগেরই একটা বড় অংশে ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। লকডাউনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা চালু করেন কমিউনিটি কিচেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটি কিচেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই এই রান্নাঘর। নিজেরাই রান্না করে আশপাশে গরিব মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়ে এসেছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে দোকানীদের রোজগার অনেকাংশেই নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাঁদের ব্যবসাতেও ভাটা পড়েছিল। ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদেরও পাশে দাঁড়ান। আবারও স্থানীয় থেকে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে যাদবপুর (restored our faith in humanity)। আবার মানবতায় বিশ্বাস করতে শেখায় ওরা।
আমপানে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনায় মারাত্মক পর্যায়ে ক্ষতি হয়েছিল (stories of 2020)। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল কলকাতা। কিন্তু সুন্দরবনের মতো জায়গা নিমেষেই ধূলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল যেন। অনেক মানুষ সংক্রমণের ভয়কে দূরে ঠেলে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন একাধিক দুর্গত এলাকায়। কারও হাতে ত্রিপল তুলে দিয়েছেন। কাউকে পৌঁছে দিয়েছেন শুকনো খাবার। কলকাতা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের একটার পর একটা ম্যাটাডোর পৌঁছে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুর্গত এলাকায়। মানবিকতা বেঁচে ছিল, তাই মানুষ জিতেছে (restored our faith in humanity)।
হাথরসের গণধর্ষণ ও খুনের খবরে শিউরে উঠেছে দেশ। দূর দূর থেকে মানুষ এসে নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নানারকম ভাবে তাঁদের উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ পিছু হটেননি। তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদেরও হেঁটে হাথরস পৌঁছাতে দেখা গিয়েছে। নির্যাতিতার মা'কে জড়িয়ে ধরে আশ্বাস দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধি। পাশাপাশি সারা ভারতে ঘটনার নিন্দায় তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন (restored our faith in humanity)।
নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে, এই আইন কৃষক বিরোধী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন হলেও সমবেত ভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। কিন্তু দিল্লির সীমান্তে এরপর পঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থান থেকে কৃষকরা এসে জড়ো হন। নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য তাঁরা এখনও আন্দোলন করছেন। এরকম অনেক ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে বৃদ্ধ কৃষকদের উপর লাঠিচার্জ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পুলিশ। আবার এই ছবিও সামনে এসেছে, সেই পুলিশকেই জল ও খাবার তুলে দিয়েছেন কৃষকরা। একসঙ্গে রান্না করছেন, একসঙ্গে প্রার্থনা করছেন তাঁরা। একাধিক ধর্মের মানুষ একসঙ্গে আন্দোলনরত। এটা ভারতীয় সংবিধানের জয়। এই ছবি মনে করায়, সব জায়গা থেকেই এখনও মানবতা মুছে যায়নি। মানুষ অধিকারের জন্যও যেমন লড়াই করেন, একইসঙ্গে মানবতার জন্যও লড়েন। চলছে কৃষক আন্দোলন (restored our faith in humanity)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক জিনিস শেয়ার করি আমরা। সেরকমই একদিন বাবা কা ধাবার ভিডিয়ো শেয়ার হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। উঠে আসে দিল্লির এই ছোট্ট ধাবার গল্প। এর পরদিনই ধাবার সামনে লম্বা লাইন পড়ে যায়। অনেক রাজনীতিবিদ, তারকারা সেই ভিডিয়ো শেয়ার করেন। আজ বাবা কা ধাবা জ়োম্যাটোতেও রয়েছে!
অগাস্টে বিমান দুর্ঘটনা হয় কেরলে। পাইলট সহ প্রায় ২০জন সেই দুর্ঘটনায় মারা যান। যতক্ষণ না সেখানে উদ্ধারকারী দল পৌঁছায়, তার আগেই স্থানীয় মানুষ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। তাঁরা কোভিড সংক্রমণের আতঙ্ক দূরে সরিয়ে রেখেই শুধু একের পর এক মানুষকে উদ্ধার করতে থাকেন। পরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও পুলিশও আসে। তারাও উদ্ধারের কাজ শুরু করে।
২০২০-র অগাস্টে আফ্রিকাকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করে আফ্রিকা রিজিওনাল সার্টিফিকেশন কমিশন।