বাংলায় প্রবাদ আছে ‘লাখ কথার পরে বিয়ে ঠিক হয়।’ কথাটা একদম সত্যি। লাখ কথা, কোটি কথার পরে যা বা বিয়ে ঠিক হল তখন মাথায় আরেক চিন্তা বিয়েতে কি পরব? বাঙালি মেয়ের বিয়ে যখন তখন সে লাল টুকটুকে বেনারসিই পড়বে। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। থামো বস! লাল বেনারসি ছাড়াই অনেকে দিব্যি ড্যাংড্যাং করে বিয়েতে বসে পড়ছে। কিন্তু তারাও লজ্জা লজ্জা মুখ করে সেই বেনারসিই পরছে। তা হোক না সে অন্য বিদঘুটে রঙ!
আসল কথা কি জানেন, এটা আপনার জীবনের এমন একটা বিশেষ দিন যা বার বার আসবেনা। বিয়ের কনে হবে তাজা গোলাপের মতো সুন্দর। সেখানে কোনও খুঁত, কোনও দাগ থাকবেনা। ভাবছেন ব্যাপারটা খুব সোজা। হাজার হাজার শাড়ির দোকান আছে, লক্ষ লক্ষ অনলাইন সাইট আছে সেখান থেকে একটা বেনারসি কেনা যাবেনা? সেটা হয় নাকি? নিশ্চয়ই না। সে আপনি দুম করে একটা শাড়ি কিনতেই পারেন। কিন্তু সেটা পরে সেজেগুজে এলেন আর পাশের বাড়ির ঠোঁটকাটা কাকিমা ফস করে বলে বসলেন, “এমা, কি ক্যাটক্যাটে রঙ রে তোর বেনারসির!” আবার এমনও হতে পারে বরযাত্রীদের সমবেত ফিসফাস গুনগুন শুনতে পেলেন যে জমকালো গয়নার কাছে শাড়িটা বড়ই ম্যাড়ম্যাড়ে লাগছে। অবশ্য সব সময়ই যে খারাপ হবে এমনটা নয়। আপনাকে রাজরানির বেশে দেখতে আমরাও চাই। আর সেইজন্যই তো এত গৌরচন্দ্রিকা করলাম। আপনার বিয়ের জন্য সঠিক বেনারসি বাছার দায়িত্ব আমাদের। আপনি শুধু আমাদের পাশে থাকলেই হবে।
আরও পড়ুনঃ বেনারসির সাথে পরার স্টাইলিশ ব্লাউজের ডিজাইন
পকেট বুঝুন
শাড়ি কেনার আগে প্রথমেই যেটা মাথায় রাখতে হবে যে এই বিয়ের মূল বাজেট কত। অর্থাৎ বেনারসির জন্য কত টাকা বরাদ্দ। আপনি নিজে চাকুরে হলে মনের খুশিতে লাখ টাকার শাড়ি কিনতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন বিয়ের পর সেই বেনারসি আলমারিতে ঢুকলে সহজে বেরোয় না। পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকার বেনারসি পাওয়া যায় বাজারে। নিজের পকেট বুঝে তবেই শাড়ি কিনবেন।
বেনারসি বুঝতে হবে
সঠিক শাড়ি খুঁজতে গেলে সঠিক শাড়ি বুঝতেও হবে। ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ নেই।যে সব হ্যাহ্যা হিহি করা বান্ধবী বা রাঙা জেঠির সঙ্গে আপনি শাড়ি কিনতে যাচ্ছেন, জেনে নিন তারা আদৌ বেনারসি সম্পর্কে কিছু জানে তো? বেনারসির কিন্তু অনেক রকমের ফ্যাব্রিক, প্যাটার্ন, ডিজাইন ও জরির কাজ হয়। পারলে নিজেই একটু পড়াশোনা করে নিন। বছরের কোন সময়ে মানে কোন ঋতুতে আপনি বিয়ে করছেন শাড়ি বাছার ক্ষেত্রে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি এবং অবশ্যই আপনি
শাড়িটা তো দোতলার দাসবাবুর মেয়ে পরবেনা, পরবেন আপনি। সুতরাং আপনার ভালো লাগাটা প্রথমে রাখবেন। তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠাণ্ডা মাথায় দেখুন। কি বলছে আয়না? আপনি লম্বা ও ছিপছিপে? তাহলে চোখ বুজে জমকালো, বড় ডিজাইন, চওড়া পার এবং ব্রাইট রঙের বেনারসি কিনুন।আর যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ আপনি উচ্চতা যদি কম হয় এবং চেহারা যদি গোলগাল হয় তাহলে হাল্কা রঙের সরু পারের লম্বালম্বি ডিজাইনের বেনারসি কিনুন।
গায়ের রঙ
আপনার রঙ যদি ঈষৎ ফ্যাকাসে হয় তাহলে গোলাপি, সফট সোনালি, হলুদ ও পিচের হাল্কা শেড পরতে পারেন। ফর্সা হলে তো যে কোনও উজ্জ্বল রঙ যেমন লাল, হলুদ ও নীল এ আপনাকে দিব্যি মানাবে। শ্যামবর্ণ বা জলপাইয়ের মতো গায়ের রঙ হলে একটু মেটালিক শেড বা ব্রিক রেডের মতো ঘন রঙ বেছে নেবেন। লাল বেনারসির বিয়েতে কোনও জুড়ি নেই। তবে মাথায় রাখবেন লালের কিন্তু অনেক শেড হয়। আর যে বেনারসি পছন্দ হবে সেটা দিনের বেলা দেখে এলেও রাতেও একবার দোকানে গিয়ে দেখে নেওয়া ভালো। কারণ অনেক সময় চড়া আলোর বিচ্ছুরণে রঙ পাল্টে যায়।
সবশেষে আপনার মতো মিষ্টি কনের জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা।