শীতকাল কলকাতায় কি কি নিয়ে আসে তার তালিকা করতে বসলে রীতিমতো চোখ কপালে উঠে যায়! আর বাঙালি যেখানে, সেখানে সিনেমার কথা হবে না তা কি সম্ভব? কিছুদিন আগেই কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক কলকাতা (Kolkata) চলচ্চিত্র উৎসব। সামনের মাসেই বাঙালির প্রাণের মেলা ‘বইমেলা’। এই উৎসবের রেশকে ধরে রেখেই আগামী শনি ও রবিবার হতে চলেছে জাপানি ছবির উৎসব (Japanese Film Festival)। এই উৎসবের আয়োজন করেছেন কনসুলেট অফ জাপান। সহযোগিতায় আছেন জাপান ফাউনডেশান, নন্দন, পশ্চিমবঙ্গ ফিল্ম সেন্টার, আই অ্যান্ড সি এ বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
কবে ও কোথায়
দুদিনের এই উৎসবে দেখানো হবে মোট চারটি ছবি। ৮ ও ৯ ই ডিসেম্বর অর্থাৎ আগামী শনি ও রবিবার হবে এই উৎসব। নন্দন (Nandan) দুইতে এই চারটি ছবি চলবে। কোনও প্রবেশমূল্য বা টিকিটের কোনও দাম লাগবে না। তবে আসন পেতে গেলে তাড়াতাড়ি আসতে হবে। ছবি শুরু হওয়ার দশ মিনিট আগে হলের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।
কি কি ছবি
৮ ই ডিসেম্বর ৩ টের সময় দেখানো হবে ‘সিঙ্গ মাই লাইফ’ (Sing My Life) (মূল ছবির নাম ‘আয়াশি কানোজো’ বা সন্দেহজনক মহিলা)। এটি একটি হরর কমেডি। ৭৩ বছর বয়সী মহিলা কাতসুর জীবনে অনেক স্বপ্নই পূর্ণ হয়নি। অথচ তার স্বপ্ন ছিল তিনি একদিন নামকরা গাইয়ে হবেন। এই বয়সে তা কি সম্ভব? সম্ভব হল যখন কাতসুর আত্মা প্রবেশ করল বছর কুড়ির সেতসুকোর শরীরে। সেতসুকোর মাধ্যমেই অধরা স্বপ্নকে পূর্ণ করতে নামলেন কাতসু। কিভাবে? সেটা জানতে হলে দেখতে হবে এই ছবিটি।
একই দিনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দেখানো হবে ‘আ লিভিং প্রমিস’ ছবিটি, (মূল ছবির নাম ‘জিনসেই নো ইয়াকুসোকু’)। ছবির গল্প অনেকটা এইরকম- জাপানের একটি বিখ্যাত আইটি কোম্পানির সি.ই.ও হলেন ইউমা নাকাহারা। কাজ ছাড়া ইউমা কিছুই বোঝেন না। তার একটাই লক্ষ্য কোম্পানিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এমন সময় তার কাছে ফোন আসে পুরনো সহকর্মী কোউহেইর কাছ থেকে। কোউহেইর সঙ্গে তিন বছর আগে মনোমালিন্য হয়েছিল ইউমার। কোথায় আছে এখন কোউহেই? তাকে খুঁজতে ইউমা পাড়ি দেয় বন্ধুর গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখে কোউহেই মারা গেছে। তবে সে লড়াই করেছে যাতে তার গ্রামে হিকিয়ামা উৎসব পালন হয়। আর্থিক কারণে এই উৎসব চলে গেছে পাশের গ্রামে। বন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে মাঠে নামলেন ইউমা। ফিরিয়ে আনলেন এই উৎসব আর নিজেও ফিরে এলেন জীবনের কাছে।
রবিবার ৯ই ডিসেম্বর ৩ টের সময় দেখানো হবে ‘দা ভ্যাঙ্কুভার আসাহি’ (মূল ছবির নাম ‘বাঙ্কুবা নো আসাহি’)। এই ছবিটি সত্য ঘটনার উপর আধারিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে জাপানিরা গড়ে তোলে একটি বেসবল দল। উনিশ শতকের প্রথমদিকে বহু জাপানি পরিবার ভ্যাঙ্কুভার পাড়ি দেয়। সেখানে অকথ্য নির্যাতন সহ্য করে তারা। কানাডার এই অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতেই জাপানিরা গড়ে তোলে ভ্যাঙ্কুভার আসাহি। তারা কি পারল কানাডাকে হারাতে? টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এই ছবি টি দেখলেই এর উত্তর পাওয়া যাবে।
উৎসবের শেষ ছবি হল ‘আ স্পার্কল অফ লাইফ’ (মূল ছবির নাম ‘সানসান’) দেখানো হবে রবিবার সাড়ে পাঁচটায়। দীর্ঘদিন অসুস্থ স্বামীর সেবা করেও তাকে বাঁচাতে পারলনা ৭৭ বছরের সুরুমোতো। একঘেয়ে জীবন কাটিয়ে যখন তিনি ক্লান্ত, একদিন রাস্তার একটি দোকানে চোখে পড়ল একটি বিয়ের গাউন। সুরুমোতো ভাবলেন বিয়ে দেওয়ার ব্যবসা শুরু করলে কেমন হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ নেমে পড়লেন বিয়ে দেওয়ার ব্যবসায়। আর এভাবেই একদিন আলাপ হল মোরিগুচির সাথে, যে কিনা আবার সুরুমোতোর মৃত স্বামীর প্রিয় বন্ধু। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে প্রেম আবার ধরা দিল সুরুমোতোর আঙিনায়। জীবন তাকে আবার ভরিয়ে দিল।
দেখলেন তো প্রত্যেকটি ছবিই কিন্তু দারুণ প্লট নিয়ে আসছে। জাপানি ভাষা জানেন না বলে মোটেও ভয় পাবেন না। সব ছবিতেই ইংরিজি ভাষায় থাকছে সাবটাইটেল। তাহলে শনিবার নন্দনে দেখা হচ্ছে। আমি তো যাবই। আপনি আসছেন তো?
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন