‘এক মচ্ছর আদমি কো…’। সত্যিই তো ছোট্ট একটা মশার কামড়ে যে এমন লঙ্কা কাণ্ড হতে পারে, কে তা জানতো। ম্যালেরিয়ার সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও গত কয়েক বছরে এ রাজ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ যে হারে বেড়েছে, তাতে কপালে ভাঁজ পরেছে বঙ্গবাসীর। কারণ দিনে দিনে চরিত্র বদলাচ্ছে এই রোগ। বাড়ছে শরীরের কষ্টও। এমনকী মৃত্যুও ঘটছে অনেকের। এদিকে আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যা খাওয়া শুরু করলে প্রাথমিক অবস্থাতেই এই রোগকে বেঁধে ফেলা সম্ভব। তাতে দ্রুত প্লেটলেট কমে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনি রোগীর খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না। ভাবছেন, কী কী প্রাকৃতিক উপাদানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কমানোর ক্ষমতা রয়েছে? জেনে নিন আমাদের থেকে।
ডেঙ্গু জ্বর কেন হয়? (Dengue Fever Causes)
বিশেষ কিছু ভাইরাসের আক্রমণে এই রোগ ঘাড়ে চেপে বসে। এই ভযঙ্কর ভাইরাসটা আপনার শরীরে প্রবেশ করায় কে জানেন? ছোট্ট একটা মশা। স্ত্রী Aedes mosquito হল এই ভাইরাসের বাহক। আর ঘটনাচক্রে সেই মশা যদি একবার আপনাকে কামড় বসায়, তাহলেই বিপদ! কারণ রক্তে এই ভাইরাস মেশা মাত্র মারাত্মক জ্বর আসে। সঙ্গে দেখা দেয় আরও কিছু লক্ষণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের সন্ধান মেলে। সেগুলি হল DEN ১, DEN ২, DEN ৩ এবং DEN ৪।
এই রোগে (dengue) আক্রান্ত হলে প্রথমেই রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন পরে। কারণ এক্ষেত্রে দ্রুত গতিতে প্লেটলেট কাউন্ট কমে যায়। সেই সঙ্গে লেজুড় হয় মাথা যন্ত্রণা, পেশীতে যন্ত্রণা, জয়েন্টে ব্যথা এবং skin rash-এর মতো সমস্যাও। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন ধরুন-
১| হাই ফিবার
২| প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা
৩| চোখে যন্ত্রণা
৪| অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া
৫| মাথা ঘোরা এবং বারে বারে বমি হওয়া
৬| হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে যাওয়া
৭| প্রচন্ড পেটে যন্ত্রণা
৮| শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
৯| শরীরের নানা জায়গায় লাল হয়ে ফুলেও যেতে পারে
ডেঙ্গুর লক্ষণ (Symptoms of Dengue)
আলবাত সম্ভব! এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। তাই এক জনের থেকে আরও অনেকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু খেয়াল করে বাড়ির প্রতিটা কোণা পরিষ্কার রাখাতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ির নানা জায়গায় ছোট ছোট পাত্রে এসেনশিয়াল তেল রাখলে মশার প্রকোপ কমবে। কোথাও যেন জল জমে না থাকে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শরীরের সিংহভাগই ঢেকে রাখবে এমন পোশাক পরে বাড়ির বাইরে বেরতে হবে। কারণ, ভুলে গেলে চলবে না ডেঙ্গুর মশা কিন্তু দিনের বেলা কামড়ায়। এই সব নিয়মগুলি মেনে চলার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন- এয়ার-কন্ডিশনারের ভিতরে জল জমে আছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে, রাতে শুতে যাওয়ার আগে মনে করে Mosquito Repellent লাগাতে হবে এবং যত বেশি করে সম্ভব অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তাতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। ফলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাই আর থাকবে না।
ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো কি সম্ভব? (Prevention of Dengue)
এত সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও যদি এই রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে হাতের কাছে থাকা বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের উপর ভরসা রাখতে ভুলবেন না যেন। তাতে রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগবে না। এখন প্রশ্ন হল কোন-কোন ঘরোয়া উপাদানগুলি ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা নেয়?
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় কাজে লাগাতে পারেন এই ঘরোয়া উপাদানগুলিকে:
এক মুঠো পেঁপে পাতা নিয়ে ঝটপট রস তৈরি করে ফেলুন। এবার সেই রসে অল্প করে মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার খান। এমনটা করলে দেহে অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং ভিটামিন সি-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। ফলে কমজোরি হয়ে পড়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনরায় এত শক্তিশালী হয়ে উঠবে যে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কমতে সময় লাগবে না। পেঁপে পাতা প্লেটলেট কাউন্ট বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে।
আরও পড়ুন: নিয়ম করে এই ফলগুলি (fruits) খেলে কমবে ওজন (weight)
১| পেঁপে পাতার রস (Papaya Leaf Juice)
এতে উপস্থিত ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফাইবার এবং আরও সব ভিটামিন এবং মিনারেল দেহে প্রবেশ করা মাত্র রক্তক্ষরণ কীভাবে বন্ধ করা যায়, সেই চেষ্টায় লেগে পরে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ভাইরাসের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। দূর হয় ক্লান্তিও। এত সব উপকার পেতে এক কাপ গরম জলে চামচ দুয়েক মেথি বীজ, মিনিট পাঁচেকের জন্য ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর তাতে অল্প করে মধু মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পান করতে হবে। প্রতিদিন বার তিনেক এই মিশ্রণ খাওয়া শুরু করলে দেখবেন উপকার মিলবে হাতে-নাতে।
২| মেথি বীজ (Fenugreek Seed)
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নানা রোগের চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার চোখে পড়ে। এর পিছনে কারও আছে। কী কারণ? এই প্রাকৃতিক উপাদানটির শরীরে মজুত রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফাইবার, আয়রন, নিয়াসিন, পটাশিয়াম এবং জিঙ্কের মতো একাধিক উপকারী উপাদান, যা বেশ কিছু রোগের চিকৎসায় বিশেষ ভূমিকা নেয়। বিশেষত, ডেঙ্গু রোগের প্রকাপ কমাতে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। কারণ, এতে উপস্থিত curcumin এবং নানা অ্যান্টিভাইরাল উপাদান, ডেঙ্গু ভাইরাসকে নিমেষে ধ্বংস করে। সঙ্গে ইমিউনিটিকেও বাড়িয়ে তোলে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
৩| হলুদ (Turmeric)
এক কাপ গরম জলে এক মুঠো তুলসি পাতা ফেলে মিনিট পাঁচেক জলটা ফোটান। এই সময় তাতে এক চিমচে গোল মরিচ যোগ করতে ভুলবেন না যেন! সময় হয়ে গেলে আঁচটা বন্ধ করে জলটা ছেঁকে নিয়ে পান করুন। প্রয়োজনে এই মিশ্রণে এক চামচ মধুও মিশিয়ে দিতে পারেন। প্রতিদিন বার তিনেক এই মিশ্রণ পান করলে তুলসি পাতায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডান্টের প্রভাবে ভাইরাসের শক্তি কমতে শুরু করবে। সঙ্গে রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলিও শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ তো কমবেই, সেই সঙ্গে ছোট-বড় নানা রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
৪| তুলসি পাতা এবং গোল মরিচ (Basil Leaves and Black Pepper)
বলেন কী গুড় এবং পেঁয়াজ একসঙ্গে খেলে ডেঙ্গু জরের সেরে যায়? একেবারেই! কারণ পেঁয়াজে রয়েছে Antipyretic Properties, যা জ্বরের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। অন্যদিকে প্লেটলেট কাউন্ট বাড়াতে গুড়ের কোনও বিকল্প নেই। তাই তো গুড়ের সঙ্গে পেঁয়াজ মিশিয়ে খেলে উপকার মেলে হাতে-নাতে। কী পরিমাণে খেতে হবে গুড় এবং পেঁয়াজ? মাঝারি মাপের একটা গুড়ের টুকরো নিয়ে মিহি করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এবার তাতে চামচ তিনেক পেঁয়াজ কুঁচি মিশিয়ে ভাল করে মেখে নিয়ে খেতে হবে। তবে মনে করে দিনে দু’বার এই মিশ্রণ খেতে হবে, তবেই কিন্তু উপকার মিলবে।
৫| গুড় এবং পেঁয়াজ (Jaggery and Onion)
এক কাপ আপেলের রসে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দু’বার খেলে শরীরে ব্লাড সেলের পরিমাণ বাড়তে শুরু করবে। ফলে প্লেটলেট কাউন্টের উন্নতি ঘটবে। সঙ্গে আপেলে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডান্ট, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলবে। ফলে শরীর সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগবে না। এমনকী এই রোগের বাকি লক্ষণগুলিও ধীরে ধীরে কমে যাবে। বাড়বে দেহের ক্ষমতাও।
৬| আপেলের রস (Apple Juice)
নানা ধরনের সংক্রমণ কমাতে তো বটেই, সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি ঘটাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটির জুড়ি মেলা ভার। এমনকী ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর চিকিৎসাতেও নিম পাতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে দিনে বার দুয়েক নিম পাতা দিয়ে তৈরি চা পান করতে হবে, তাতেই উপকার মিলবে। কীভাবে তৈরি করতে হবে নিম টি? এক মুঠো নিম পাতা নিয়ে এক কাপ জলে মিশিয়ে জলটা মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর জলটা ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে। নিয়মিত নিম পাতা দিয়ে তৈরি চা পান শুরু করলে প্লেটলেট কাউন্ট তো বাড়বেই, সঙ্গে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণও বাড়তে শুরু করবে। ফলে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠতে দেখবেন সময়ই লাগবে না।
আরও পড়ুন: সারা বছর জুড়ে neem leaves খাওয়া উচিত কেন জানো!
৭| নিম পাতা (Neem Leaves)
ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিয়মিত যদি সবুজ শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম এবং ডালের মতো ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যায়, তাহলে রক্তক্ষরণ কম হয়। ফলে প্লেটলেট কমে গিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটার আশঙ্কা আর থাকে না।
৮| বেশি করে খেতে হবে ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার (Take High Vitamin Foods)
কমলা লেবু, পাতি লেবু এবং মৌসম্বি লেবুর মতো সাইট্রিক ফলে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডান্ট এবং ভিটামিন সি, যা শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
৯| কমলা লেবুর রস (Orange Juice)
নিয়মিত এক গ্লাস করে পেয়ারার রস খেলে শরীরে ভিটামিন সি সহ বেশ কিছু উপকারী ভিটামিন এবং মিনারেলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যে কারণে প্লেটলেট কাউন্ট তো বাড়েই, সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
১০| পেয়ারার রস (Guava Juice)
লক্ষণ দেখে সন্দেহ হলেই চিকৎসকেরা প্রথমেই রক্ত পরীক্ষা করতে দেন। তাতে যদি দেখা যায় প্লেটলেট লেভেল দ্রুত কমছে, তখন সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করে শুরু হয় লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা। জেনে রাখা ভাল যে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু ভাইরাসকে মেরে ফেলবে এমন ওষুধের আবিষ্কার হয়নি। তাই এক্ষেত্রে যেমন লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, সেই মতো ওষুধ দেওয়া ছাড়া চিকিৎসকেদের হাতে আর কোনও উপায় থাকে না। এই সময় বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাতে হঠাৎ করে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটার আশঙ্কা কমে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
১| ডেঙ্গু ভাইরাস কতদিন শরীরে থাকে?
ভাইরাস দেহে প্রবেশ করার দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে। তখনই প্রকাশ পায় একের পর এক লক্ষণ।
২| ডেঙ্গু জ্বর হলে প্লেটলেট কাউন্ট কমে যায় কেন?
ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করা মাত্র প্রথমেই bone marrow-তে গিয়ে আঘাত করে। সেই সঙ্গে প্লেটলেটকেও ধ্বংস করতে শুরু করে, যে কারণে প্লেটলেট লেভেল দ্রুত কমে যায়।
৩| ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে আছে কিনা জানতে সাধারণত কী কী পরীক্ষা করা হয়?
এক্ষেত্রে মূলত antigen এবং antibody test করা হয়। প্রয়োজন মতো কিছু ক্ষেত্রে নানা ধরনের Molecular Test-ও করে থাকেন চিকিৎসকেরা। তাতে ডেঙ্গু ভাইরাসের খোঁজ মেলে দ্রুত।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!