স্তনের মাপ (breast size) এক এক মহিলার এক এক রকম। কেউ নিজের গঠন নিয়ে খুশি। কেউ বা গঠনের পরিবর্তন চান। বড় বা ছোট করতে চান স্তনের মাপ। যদি আপনি স্তনের গঠন ছোট (reduce) করায় আগ্রহী হন, তা হলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারেন এই প্রতিবেদনে। প্রথমেই বলে রাখা ভাল, যা করতে চান, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবে করুন।
স্তনের মাপ কেমন হবে, তা অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আসলে শারীরিক গঠন, কার কেমন হবে, সেটা তো নিজেরা ঠিক করা যায় না। আস্তিকেরা বলবেন, ঈশ্বরের দান। আবার নাস্তিকেরা তার মধ্যেই বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা খুঁজে বের করেন। মোদ্দা কথা হল, বেশ কয়েকটি বিষয় আপনার কেমন তার উপর অন্যান্য প্রত্যঙ্গের মতোই স্তনের মাপও নির্ভর করে।
আপনার জিন কেন, তার উপর স্তনের মাপ অনেকটাই নির্ভর করে। ধরুন, আপনার মা বা দিদিমা যদি ভারী স্তনের অধিকারী হন, সেক্ষেত্রে আপনারও ভারী স্তন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জিনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্রেস্ট টিস্যুতে কোন হরমোন কতটা পৌঁছবে, তা নির্ভর করে।
আপনার ওজন কম নাকি বেশি, তার উপরও নির্ভর করে স্তনের মাপ। ব্রেস্ট টিস্যুর অনেকটা জুড়ে থাকে ফ্যাট। অর্থাৎ ওজন বাড়লে বা কমলে তার প্রভার পড়ে স্তনের আকারে।
বয়সের ওপর নির্ভর করে স্তনের মাপ। কারণ অ্যাডভান্স স্টেডে স্তনের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। ফলে স্তনের মাংসপেশী ঝুলে যায়। সেক্ষেত্রে আকারে অনেক বড় লাগতে পারে স্তন।
হরমোনের বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়াও স্তনের মাপে প্রভাব ফেলতে পারে। এই বিষয়টা সম্পূর্ণ প্রতিটি মেয়ের ক্ষেত্রে আলাদা। কার দেহে কোন কারণে কোন হরমোনের বৃদ্ধি বা হ্রাস হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সন্তানকে স্তন্যপান করানোর উপরও স্তনের মাপ নির্ভর করে। আসলে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর পর অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই স্তনের মাপ বড় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
ওষুধের সাইড এফেক্টের কারণে স্তনের মাপের বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটতে পারে। অনেক ওষুধে দেহে ফ্যাট জমে বেশি। সেক্ষেত্রে স্তনের টিস্যুতেও ফ্যাট জমে তার আকার বৃদ্ধি ঘটতে পারে।
প্রাকৃতিক উপায়ে স্তনের মাপ কমানোর কোনও উপায় আদৌ রয়েছে কিনা, দেখে নেওয়া যাক।
প্রাকৃতিক উপায়ে স্তনের মাপ কমানোর জন্য আদর্শ হল আদা। রান্নায় আদা থাকলে তা দেহের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ আদা এক কাপ জলে নিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর ঠাণ্ডা করে তাতে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। দিনে তিন বার এই তরলটি খেলে তিন মাসের মধ্যে স্তনের ফ্যাট যে কমছে তা বুঝতে পারবেন। মধু না পাওয়া গেলে শুধু আদাও গরমজলে দিয়ে খেতে পারেন।
ফ্ল্যাক্স সিড বা তিসি বীজের উপকারিতা অনেক। এক টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড এক গ্লাস গরম জলে গুলে খেতে পারেন। প্রতিদিন একবার করে এই মিশ্রণ খেলে প্রাকৃতিক উপায়ে কমতে পারে স্তনের মাপ। অথবা পাউডার ফ্ল্যাক্স সিড ছড়িয়ে নিতে পারেন আপনার প্রিয় কোনও পদের ওপর। তাতেও একই রকম উপকার পাবেন। এটি স্তনের কোষে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। দিনে তিন থেকে চার কাপ গ্রিন টি ট্রাই করতে পারেন। ইচ্ছে হলে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের মেটাবলিক রেটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
জলে কয়েকটি নিমপাতা ভাল করে ফুটিয়ে সেই জল ঠাণ্ডা করে নিন। এবার অল্প হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন স্বাদের কারণে। কয়েক মাস প্রতিদিন এই মিশ্রণ খেলে স্তনের মাপ কমবে। প্রেগন্যান্সি বা ব্রেস্ট ফিডিং করানোর পর এই টোটকা ট্রাই করলে আরও তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন।
ডিমের সাদা অংশ দেহের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। আবার কুসুম ফ্যাট বাড়ায়। ফলে স্বাদের কথা ভুলে কুসুম বাদ দিয়ে শুঢু ডিমের সাদা অংশ খান। এতে মাসল ফ্যাট কমবে। স্তনের মাপ ছোট হবে।
স্তনের মাপ কমাতে মাছের তেল খাওয়া খুবই উপকারি। মাছের তেলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বিপুল পরিমাণে থাকে। যা দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডায়েটে মাছের তেল রাখাটা মাস্ট।
খাবারে নুন এবং চিনির পরিমাণ কমিয়ে দিন। চিনি ছাড়া চা বা কফি ট্রাই করুন। কাঁচা নুন খাওয়া একেবারে বন্ধ করতে হবে। এর ফলে দেহের ফ্যাট কমবে। স্তনের ফ্যাট কমলে আকারেও ছোট হবে।
নারকোল তেল বা অলিভ অয়েল নিয়ে প্রতিদিন সার্কুলার মোশনে ব্রেস্ট মাসাজ করুন। এর ফলে স্তনের টিস্যুর ফ্যাট কমবে। মাসাজের পর ওয়াশ করে নিন।
স্তনের মাপ কমানোর ক্ষেত্রে ডায়েটের বড় ভূমিকা রয়েছে। যখন দেহের যে পরিমাণ ক্যালোরির প্রয়োজন, তার থেকে বেশি নেওয়া হয়, আর তা কোনওভাবেই বার্ন করা হয় না, তখনই ফ্যাট জমতে থাকে। ওজন বাড়ে। একই সঙ্গে স্তনের মাপও বড় হতে থাকে। মাছ, মাংস, ফল, শাকসব্জি সবই খাবেন। তবে প্রয়োজন মতো এক্সসারসাইজ করে নিতে ভুলবেন না। রেড মিট, চিজ, ক্রিম, অয়েলি স্ন্যাক্স এড়িয়ে চলুন।
সঠিক ব্রা চিরতরে স্তনের গঠন বদলে দিতে পারে। সুতরাং মাপ মতো ব্রা বেছে নিন। যাতে স্তনের গঠন ঠিক থাকে। আবার এক্সট্রা স্ট্র্যাপের জন্য ঘাড় বা কাঁধে ব্যথা না হয়, এমন ব্রা খুঁজে নিন। কোয়ালিটির দিক থেকে কোনওরকম কম্প্রোমাইজ করবেন না। অনেক স্টোরে ফ্রি ব্রা ফিটিং সার্ভিসের অপশন থাকে। প্রয়োজন হলে তার সাহায্য নিন।
নিয়ম মেনে ব্যায়াম করলেও কমতে পারে স্তনের মাপ। কোন কোন ব্যায়াম এক্ষেত্রে উপযোগী দেখে নেওয়া যাক।
হাতের তালু মাটিতে রাখুন। আঙুলের সাহায্যে সাপোর্ট তৈরি করুন। হাতে ভর দিয়ে শরীরের ওপরের অংশ মাটি পর্যন্ত নিয়ে আসুন আবার তুলুন। ১০ বার রিপিট করার পর ব্রেক নিয়ে আবার ১০ বার করুন এই ব্যায়াম।
৩০ সেকেন্ড দৌড়নোর পর এক মিনিট হাঁটুন। এই রুটিন ফলো করুন ২০ থেকে ৩০ মিনিট। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এটা ফলো করলে উপকার পাবেন অনায়াসে।
ভলিবল বা টেনিসের মতো টিম স্পোর্টে অংশ নিন। খুব তাড়াতাড়ি মেদ ঝরতে সাহায্য করে এসব খেলা। অবশ্যই স্তনের মাপ কমিয়ে গঠন ঠিক করার জন্য দারুণ এক্সসারসাইজও বটে।
দিনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠা, নামা করুন। এতে শরীরে ফ্যাট কমবে। আর এই ব্যয়াম এতটাই সোজা কাজের ফাঁকেও প্রত্যেকেই করতে পারবেন।
কার্ডিও এক্সসারসাইজ করলে হার্ট ভাল থাকে, সে তো সকলেরই জানা। এতে দেহের ক্যালোরি এবং ফ্যাট বার্ন হওয়ার কারণে এমনিতেই স্তনের মাপ ছোট হতে থাকে। সবথেকে ভাল ফল পেতে সপ্তাহে তিন থেকে চার বার কার্ডিও এক্সসারসাইজ করা উচিত।
এই ধরনের ব্যায়ামে দেহের মেটাবলিজমের সমতা বজায় থাকে। বডি ফ্যাট কমে। স্বাভাবিক ভাবেই স্তনে জমে থাকা ফ্যাট কমতে থাকে। সপ্তাহে চার দিন ৩০ মিনিট করে এই ব্যায়াম ট্রাই করতে পারেন।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বা একটি চেয়ারে বসে হাতে করে ডাম্বেল তুলতে পারেন। এতেও শরীরে জমে থাকা বাড়তি ফ্যাট দূর হয় খুব তাড়াতাড়ি। যাতে স্তনের মেদ কমতে বাধ্য।
সাইক্লিংয়ের মতো ভাল কার্ডিও এক্সসারসাইজ আর দুটো নেই। আধ ঘণ্টা সাইকেল চালালে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ক্যালোরি বার্ন হয়। ফলে সাইকেল চালান নিয়মিত। রোগাও হবেন। স্তনের গঠনও ভাল হবে।
সাঁতার কাটলে গোটা শরীরের ব্যায়াম হয়। সব প্রত্যঙ্গের মেদ ঝরে খুব তাড়াতাড়ি। তাই সাইকেল চালান, স্তনের মাপ সুন্দর হবে খুব তাড়াতাড়ি।
শিশুকে স্তন্যপান করানোর পর মেয়েদের স্তনের মাপ বড় হয়ে যায়। বিশেষত শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহে তা আরও ভাল বোঝা যায়। কারণ সে সময় স্তনে দুধ আসতে থাকে। এ সময় হরমোনের প্রভাবে সাধারণত ওজন বাড়ে। স্তনের টিস্যুতেও ফ্যাট জমে। এ সময় পুষ্টির খুব প্রয়োজন। সুতরাং ব্যালান্স ডায়েট এবং ব্যায়াম শুরু করে দেওয়া উচিত যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব। বাকিটা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
স্তনের আকার বা গঠন চটজলদি ছোট করার জন্য অনেকেই সার্জারির রাস্তায় হাঁটেন। বিদেশে তো এটা খুব সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু একটা বিষয় জেনে রাখা ভাল, এই ধরনের সার্জারি খরচ সাপেক্ষ। তাছাড়া বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাইড এফেক্টও থাকে।
Liposuction একটি ফ্যাট রিমুভাল পদ্ধতি। যা সাধারণত প্লাস্টিক সার্জারির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। আমেরিকায় এই সার্জারি খুব কমন। তবে আপনি করাবেন কিনা, তার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।
নিপল সার্কুলেশন এবং পার্মানেন্ট ব্রেস্ট শেপিংয়ের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে মূলত কাজ হয় স্তনের টিস্যু নিয়ে।
এই পদ্ধতিকে অ্যাঙ্কর বা ললিপপ ব্রেস্ট রিডাকশন বলা হয়। নিপলের উপর এবং নীচের অংশ থেকে এক্সট্রা ফ্যাট সার্জারির মাধ্যমে কমিয়ে দেওয়া হয়।
প্রথমেই বলে রাখা ভাল ব্রেস্ট রিডাকশন সার্জারি ব্যায়বহুল। মার্কিন মুলুকে গড়ে এই অপারেশনের খরচ পাঁচ হাজার ডলার। ভারতেও এই অপারেশন হয়। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিন, তা আপনার জন্য আদৌ প্রযোজ্য কিনা এবং খরচ ঠিক কত।
এই ধরনের সার্জারি করালে তার কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক তার সাধারণ রঙ হারায়। পার্মানেন্ট পিগমেন্টেশন আসতে পারে। নার্ভ, ব্লাড ভেসেল, মাসল এমনকি লাঙ্গসও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সার্জারি করালে স্পেশ্যাল ব্রা পরতে হয় অন্তত কিছুদিন। অনেক ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা ব্রা পরে থাকান পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সার্জারির পর অন্তত এক মাস আন্ডারওয়্যার ব্রা এড়িয়ে চলা ভাল।
ব্রেস্ট রিডাকশন সার্জারি করালে যে কোনও রকম ইনফেকশন হতে পারে সহজেই। ব্লিডিং হতে পারে। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় হেমোটোমা বলে। রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা স্তনের শেপ ইরেগুলারও হয়ে যেতে পারে।
স্তনের আকার কমানোর জন্য সাধারণ কিছু প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা।
যে কোনও অপারেশনের মতোই এই অপারেশনেও ঝুঁকি অনেকটাই। ব্লিডিং, ইনফেকশন তো আছেই। সমস্যা হতে পারে অ্যানাস্থেশিয়ার সময়েও। তাই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
অপারেশনের পর দুই, তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যথা থাকত পারে। তবে চিকিৎসকেরা সব সময়ই ব্যথা কমানোর ওষুধ দিয়ে দেন।
এটা পুরোটাই নির্ভর করে পেশেন্টের উপর। অপারেশনের আগে কাউন্সেলিংও করানো হয়। তবে বেশ কিছু সার্ভেতে দেখা গিয়েছে, যাঁরা অপারেশন করিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ উপকার পেয়েছেন।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty - POPxo-র স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়...