বাংলা সিনেমা (bengali movies) এখন অনেক বেশি অধুনিক। এখন যেসব মৌলিক গল্প নিয়ে ছবি (movies) তৈরি হচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু আজ থেকে ১০ বছর আগেও পরিবেশটা এমন ছিল না। তখন কমার্শিয়াল সিনেমার যুগ। তবু কিছু পরিচালক চেনা ছক ভেঙেছিলেন। সমকামীতার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের উপর তৈরি করেছিলেন ছবি। এই নিয়ে সে সময় বিতর্ক কম হয়নি। তবু তারা থেমে থাকেননি। একের পর এক তৈরি করেছিলেন নানা স্বাদের সমকামী কেন্দ্রিক সিনেমা (Bengali films that explored the LGBT themed), যার কয়েকটি তুলে ধরা হল এই লেখায়!
১. নীল নির্জনে (২০০৩):
কালকাতা শহরের শোরগোল থেকে অনেক দূরে এক ছোট্ট রিসর্ট, নাম নীল নির্জন। সেখানে হঠাৎই দেখা হয়ে যায় দুজন মেয়ের। পরিচয় বাড়ে। সম্পর্ক নিজের গভীরতা খুঁজে পায়। ছবি এগিয়ে চলে দুই সমকামী মেয়ের প্রেমের অনুভূতিকে সঙ্গী করে। সমকামী মানেই দুই পুরুষের প্রেম, তা তো নয়। দুজন মেয়েও তো একে অপরকে ভালোবাসতে পারে! সেই ভাবনাকে কেন্দ্র করেই চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে লেখা হয়েছে এই ছবির গল্প, যা এই সিনেমার “ইউ এস পি”। তবে নীল নির্জনে শুধু সমকামী প্রেমর গল্প বলে না। প্রেম যে বহুমাত্রিক, সেই ভাবনাকেও পর্দায় ফুটিয়ে তলে এই ছবি।
সুব্রত সেন পরিচালিত এই সিনেমা (tollywood) সেভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। কিন্তু বাংলা ব্যান্ড ক্যাকটাসের কিছু গান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আর এই ছবিতে রাইমা সেনের অভিনয়ও বহু দিন চর্চায় ছিল। যদিও কারণটা ছবিটা না দেখলে বুঝবেন না। তাই একটু অন্য ধরনের সিনেমা দেখতে যদি মন চায়, তাহলে একদিন দেখেই ফেলতে পারেন এই সিনেমা।
২. আরেকটি প্রমের গল্প (২০১০):
চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও ঋতুপর্ণের অন্যতম সেরা কাজ এটি। ছবির গল্পও বেশ অন্য স্বাদের। কারণ দুটি আলাদা সময়কে এক সূত্রে বেঁধে সমান্তরালভাবে দুটো আলাদা সময়কে ছবিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক। যার মূল চরিত্রে রয়েছেন একজন সমকামী। এমন গল্প নিয়ে বাংলা সিনেমা এর আগে কখনও হয়নি। তাই তো এই ছবি সব দিক থেকে অনন্য় (tollywood movies based on homosexuality)।
একটা গল্প এই সময়ের। যার মূল চরিত্র রয়েছেন অভিরূপ (ঋতুপর্ণ)। পেশায় ডকুমেন্ট্রি ফিল্মমেকার। আর অন্য গল্পটি চপল ভাদুড়িকে কেন্দ্র করে এগিয়ে চলে। দুজনেই সমকামী। তবে ভালোবাসে এমন পুরুষদের যারা কিনা ওদের যোগ্য নয়। তবুও সব ঠিক ছিল। কিন্তু ছবি যত এগতে থাকে বদলে যায় অভিরূপ আর চপলের জীবন। তাদের জীবনে আসে নতুন প্রেম। তাতেও শান্তি পান না তারা। তাই প্রেমে বিশ্বাসঘাতকতা, পরে আরও সব ঘটনায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় দুজন। এইভাবেই দুটি সমান্তরাল লাইন কখন যেন এক হয়ে যায়।
৩. চিত্রাঙ্গদা (২০১২):
বাবা চাইতেন রুদ্র বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হোক। কিন্তু রুদ্রের মনে অন্য স্বপ্ন। সে নৃত্যশিল্প হতে চায়। সেই নিয়ে বাবার সাথে ঝামেলাও কম হয় না। কিন্তু শেষমেশ নিজের স্বপ্নকেই বেছে নেয় রুদ্র। হয়ে ওঠে এক নামী শিল্পী। সেই সূত্র ধরেই আলাপ হয় পার্থের সঙ্গে। নানা ঘটনা প্রবাহে অর্ক ভালোবেসে ফেলে পার্থকে। নিজের ছন্দেই এগিয়ে চলে তাদের জীবন। এবার রুদ্র মা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এই সমাজ তো সমকামীদের মা হওয়ার অধিকার দেয় না, তাহলে? একদিন বাবার অমতে গিয়ে ডান্সার হওয়ার স্বপ্ন সে পূরণ করেছে। কিন্তু এই স্বপ্ন পারবে কি অর্ক পূরণ করতে? শুরু হয় আরেক লড়াই। সেক্স চেঞ্জ অপারেশন করার কথাও ভাবে সে। কিন্তু তারপর…!
ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং যীশু সেনগুপ্ত অভিনীত এই সিনেমাটি (movies) সত্যিই অসাধারন (Bengali films that explored the LGBT themed)। বিশেষ করে পরিচালক, সমকামীতা নিয়ে উচ্চবিত্ত বাঙালি সমাজের ধারণাকে যেভাবে নিখুঁত ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন, তা প্রশংসার দাবী রাখে। সেই সঙ্গে বাকি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ও এই সিনেমার আরেকটা প্লাস পয়েন্ট।
৪. তিন কন্যা (২ নভেম্বর ২০১২):
অগ্নিদেব চ্যাটার্জীর “তিন কন্যা” একেবারে অন্য স্বাদের ছবি (movies)। যেখানে প্রেম তো রয়েছে। কিন্তু তার রূপ বড়ই ভিন্ন। পেশায় সাংবাদিক, অপর্ণার (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) স্বামী প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন আই পি এস অফিসার দামিনীর (উন্নতি দাভরা) সঙ্গে। সন্দেহ দানা বাঁধে অপর্ণার। কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ একদিন অপর্ণার স্বামীকে কেউ অপহরণ করে। না চাইতেও সামনা-সামনি এসে যায় অপর্ণা এবং দামিনী। আর তখনই গল্প বাঁক নেয় এক অন্য দিকে। নানা কারণে দামিনী আর অপর্ণা জড়িয়ে পড়েন প্রেমের সম্পর্কে। অপর্ণার অজান্তেই দামীনির প্রতি তার ঘৃণা বদলে যায় ভালোবাসার। শুরু হয় এক নতুন সম্পর্ক। সমকামী প্রেমর গল্প নিয়ে সিনেমা এর আগেও হয়েছে। কিন্তু ঘৃণা থাকা সত্ত্বেও এক মেয়ে, অন্য মেয়েকে এইভাবে ভালোবাসে ফেলছে, এমন গল্প এর আগে বাঙালি দর্শক পর্দায় দেখননি। তাই সমকামী কেন্দ্রিক ছবিগুলির লিস্টে এই সিনেমাকে উপরের দিকে না রাখলেই নয়!
৫. ১০ জুলাই (২০১৪):
প্রেম কোনও কালেই সমাজকে তোয়াক্কা করে না। সে নিজের ছন্দে পৌঁছে যায় নিজ মহনায়। তাই তো অর্ক, তিতাসকে ভালোবাসলেও সে তো সমকামী। তাই নিজের অজান্তেই সে মৃদুলকে ভালোবেসে ফেলে। এদিকে তিতাসও জড়িয়ে পরে এক মেয়ের প্রেম। তার মানে কি সমাজের কারণেই ওরা মিথ্যা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল? এমন কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে পরি আমরা। সমাজের কারণে কীভাবে মিথ্য় সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তারই ছবি তুলে ধরে এই সিনেমা (movies)। তাই তো অন্যান্য সমকামী কেন্দ্রীক সিনেমার থেকে ১০ জুলাইেয়র গল্প যে অনেকটা ভিন্ন স্বাদের, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
৬. নগরকীর্তন (২০১৭):
এই ছবি পুটি আর মধুর। পুটি একজন হিজরা, বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে সে এই শহরে ভিক্ষা করে খায়। আর মধু বাড়ি বাড়ি খাবার ডেলিভারি দেয়। সমাজের একেবারে আলাদা মেরুর বাসিন্দা দুজন। তবু পুটিকে ভালোবেসে ফেলে মদু। এক সময় পুটিও নিজেকে সামলাতে পারে না। এইভাবেই দুজন মানুষের মন-প্রাণ মিলে এক হয়ে যায়। পুটি স্বপ্ন দেখে লিঙ্গ পরিবর্তনের। স্বপ্ন দেখে নিজেদের মতো মানুষ হয়ে বাঁচার। কিন্তু সেই স্বপ্ন কী পূরণ হবে? জানতে যে একবার দেখতেই হবে এই সিনেমা। অভিনব গল্পের কারণে তো বটেই। তাছাড়া আরেকটা কারণেও এই ছবি দেখা মাস্ট! পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলী যে মুন্সীয়ানায় একজন ট্রান্সজেন্ডার মনের ছোট ছোট অনুভূতিকে পর্দায় তুলে ধরেছেন, তা সত্যিই অতুলনীয় (Kaushik Ganguly Film)।
ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: youtube, wikipedia
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
Read More From বিনোদন
চশমা পরা হবু কনেরা কিভাবে সাজবেন জেনে নিন
SRIJA GUPTA