Our World

জেনে নিন অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য

popadmin  |  May 7, 2019
জেনে নিন অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য

বাঙালি ক্যালেন্ডারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন হল আজ ( akshaya tritiya)। এমন বিশ্বাস রয়েছে যে, আজকের দিনেই নাকি শ্রী বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্ম হয়েছিল। তাই কোনও-কোনও জায়গায় বেশ ধুমধাম করে পুজো করা হয় তাঁর। তবে বাঙালিরা অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মূলত লক্ষ্মী-গণেশের পুজোই করে থাকে (akshaya tritiya significance)।

শাস্ত্র মতে অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম বলতে, আজ লক্ষ্মী-গণেশের যদি বিষ্ণু এবং কুবেরের পুজোও করা হয়, তা হলে নাকি খারাপ সময় কেটে যায়, সঙ্গী হয় সৌভাগ্য! আর সৌভাগ্য রোজের সঙ্গী হয়ে উঠলে জীবনের ছবিটা বদলে যেতে যে সময় লাগে না, তা তো বলাই বাহুল্য! কথায় বলে, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন যদি কোনও কাজ শুরু করা হয়, তা হলে নাকি সেই কাজে সাফল্য আসেই। তা ছাড়াও মেলে আরও অনেক উপকার, যে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করছি এই প্রতিবেদনে।

আরও পড়ুনঃ পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা বার্তা

দিনটির মাহাত্ম্য

প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুক্লা পক্ষের তৃতীয়াই হল অক্ষয় তৃতীয়া। “অক্ষয়” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে, যার অর্থ হল eternal মানে যা কখনও ফুরোয় না। তাই তো এই দিন বাঙালি ব্যবসায়ীরা (bengali culture) হালখাতা খোলেন, যাতে তাঁদের বাণিজ্যে সব সময়ই লক্ষ্মী বসত করেন। শুধু বাঙালিরাই নন, জৈন ধর্মাবলম্বীরাও নাকি অক্ষয় তৃতীয়া পালন করেন। জৈনগুরু ঋষভনাথ নাকি এই পুণ্য তিথিতেই তাঁর উপবাস ভঙ্গ করেছিলেন। সব কিছু মিলে এই দিনটি কখন যে বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে হয়ে উঠেছে ভারতীয়, তা হয়তো আমরা খেয়ালও করিনি (know everything about akshay tritiya)।

অক্ষয় তৃতীয়ার একাল-সেকাল

বাঙালির জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্বণ হওয়া সত্ত্বেও দিনে-দিনে কেমন যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে অক্ষয় তৃতীয়ার জৌলুস। এর একটা কারণ যদি হয় নতুন প্রজন্মের এই সব উৎসবের প্রতি অনীহা, তা হলে অন্য কারণটা অবশ্যই হল বাঙালির পরিযায়ী স্বভাব। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে, বাঙালিরা অক্ষয় তৃতীয়ার দিন যত না সোনা-রুপো কেনেন, তার চেয়ে ঢের বেশি কেনেন ধনতেরাসের দিন! এমনকী, সেদিন সোনার দোকানে সারা রাত হত্যে দিতেও পিছপা হন না অনেকে! আমাদের মতে, ধনতেরাসকে আপন করে নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু সোনা-রুপো কেনার জন্য আরও একটা দিন হাতে থাকলে মন্দ কী!

অক্ষয় তৃতীয়ার দিন যে-যে জিনসগুলি কেনা শুভ

আজকের দিনে যে-যে জিনিসগুলি কেনা বেজায় শুভ, সেগুলি হল…

১. সোনা


এমন বিশ্বাস আছে যে আজকের দিনে (akshaya tritiya) সোনা কিনলে নাকি পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগে। অর্থনৈতিক উন্নতির সম্ভাবনাও যায় বেড়ে। তবে সোনা কিনতে হবে বলে তা অনেক পরিমাণে কিনতে হবে, এমন নয়। একটা সোনার কয়েন কিনলেও চলবে।

২. গাড়ি


গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন? তা হলে সপরিবারে আজই না হয় বুক করে দিন নতুন গাড়ি! কারণ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মূল্যবান জিনিস কেনা যে বেজায় শুভ।

৩. বাড়ি


নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশের আয়োজন করতে পারেন আজ (akshaya tritiya)। কারণ, বাঙালি ক্যালেন্ডারে অক্ষয় তৃতীয়ার থেকে শুভ দিন আর পাবেন না! এমনকী আজকের দিনে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করা যেমন শুভ, তেমনই ফার্নিচার বা নিদেনপক্ষে ঘর সাজানোর কোনও জিনিসও কেনা যেতে পারে।

আজকের দিনে যে-যে জিনিসগুলি দান করা শুভ

১. পান পাতা এবং জল


অনেকে বিশ্বাস করেন যে আজ কোনও ব্রাহ্মণকে যদি পান পাতা এবং জল দান করা যায়, তা হলে নাকি পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি আছে।

২. বিছানা

সপরিবারে বাকি জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটাতে চান নিশ্চয়? তা হলে আজ গরীব মানুষদের বিছানা দান করুন, দেখবেন, সব দিক থেকে ভালো হবে আপনার।

৩. পোশাক


দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোনও নির্দিষ্ট সময় হয় নাকি! যে-কোনও দিনই তাদের সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু আজ যদি দুঃস্থদের পোশাক-পরিচ্ছদ দান করতে পারেন, তা হলে দেখবেন কোনও রোগ আপনাকে ছুঁতে পারবে না।

৪. নারকেল


শুভ দিনে একে অপরকে নারকেল উপহার দেওয়ার রীতি বহুদিনের। বিশেষত, আজকের দিনে ব্রাহ্মণদের নারকেল দান করা বেজায় শুভ। কারণ, এমনটা করলে নাকি সব পাপ ধুয়ে যায়।

৫. সিদুঁর:

বিবাহিত মহিলারা যদি আজকের দিনে নতুন কেনা সিদুঁরেরর কৌটো অন্য় কোনও মহিলাকে দেন, তা হলে নাকি স্বামীর আয়ু বাড়ে। সেই সঙ্গে বৈবাহিক জীবনে কোনও ধরনের অশান্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও আর থাকে না।

আজকের দিনে লক্ষ্মী, গণেশ এবং কুবেরের পুজো করা হয় কেন?


অনেকে এমন বিশ্বাস করেন যে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন (akshaya tritiya 2019 in bengali calendar) এই দেব-দেবীর আরাধনা করলে নাকি অনেক উপকার মেলে। এই যেমন ধরুন…

১. পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে

পরিবারের প্রতিটি সদস্যের এই বছরটা আনন্দে কাটুক, এমনটা যদি চান, তা হলে আজকের দিনে লক্ষ্মী, গণেশ এবং কুবেরের পুজো করতে ভুলবেন না যেন! শাস্ত্র মতে, এই দেব-দেবীর পুজো করলে গৃহে খারাপ শক্তির প্রবেশ আটকে যায়। ফলে হঠাৎ করে কোনও বিপদ ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই অশান্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও আর থাকে না। ফলে আনন্দে ভরে ওঠে জীবনের প্রতিটি দিন (akshaya tritiya significance)।

২. অর্থনৈতিক উন্নতির সম্ভাবনা 

কুবের হলেন ধনের দেবতা। আর শাস্ত্রে এমন উল্লেখ পাওয়া যায় যে, যে গৃহে মা লক্ষ্মীর বাস, সেখানে কুবের দেবও নিজের আসন পাতেন। তাই আজকের দিনে মা লক্ষ্মী এবং গণেশের পাশাপাশি যদি কুবেরের অরাধনাও করা যায়, তা হলে সকলেই সন্তুষ্ট হবেন। ফলে তাঁদের আশীর্বাদে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানা ঝামেলা মিটে যেতে সময় লাগবে না। জানি, কথাটা শুনতে একটু আজব লাগছে। কিন্তু ওই যে একটা কথা আছে না, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর।” তাই মনে বিশ্বাস নিয়ে একবার এই প্রথা মেনে দেখতেই পারেন। কে বলতে পারে, হয়তো ফিরেও যেতে পারে ভাগ্য!

৩. গৃহে শুভ শক্তির প্রবেশ

বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রতিটি বাড়িতেই নাকি শুভ শক্তির পাশাপাশি কখনও-সখনও জায়গা করে নেয় অশুভ শক্তিও। আর কোনওভাবে যদি এই অশুভ শক্তির মাত্রা বাড়তে শুরু করে, তা হলেই বিপদ! এই কারণেই তো অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এই দেব-দেবীদের পুজো করার পরামর্শ দেন অনেকে। আজকের দিনে বাড়িতে এমন পুজোর আয়োজন করলে শুভ শক্তির মাত্রা বাড়ে। ফলে খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।

৫. খারাপ সময় কেটে যায়

নানা ঝামেলার কারণে কি অশান্তি বেড়েছে জীবনে? তা হলে তো আজ একবার মা লক্ষ্মীর পায়ে মাথা ছোঁয়াতেই হবে। এমনটা করলে দেখবেন দেবীর আশীর্বাদে সব অশান্তি তো দূরে পালাবেই, সেই সঙ্গে সৌভাগ্যের ছোঁয়া লাগবে জীবনে।

অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ভগবান বিষ্ণুর পুজো করলে যে-যে সুফল মেলে


একথা হয়তো অনেকেই জানেন না যে, আজ (akshaya tritiya) লক্ষ্মী-গণেশের পাশাপাশি ভগবান বিষ্ণুরও আরাধনা করা উচিত। সারা দিন উপোস থেকে বিষ্ণু মন্ত্র জপ করার মধ্যে দিয়ে করতে হবে তাঁর পুজো, তা হলেই দেখবেন মিলবে সুফল। যেমন ধরুন…

১. আয়ু বাড়বে 

আজ যথাযথ নিয়ম মেনে ভগবান বিষ্ণুর পুজো করুন। দেখবেন, সুখের ছোঁয়া লাগবেই জীবনে। আর যে পরিবারের উপরে বিষ্ণুর হাত থাকে, সেই পরিবারের তো কোনও ক্ষতি হয়ই না, বরং সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদে রোগ-ব্যাধি সব দূরে পালায়। বাড়ে আয়ুও।

২.অশান্তি দূর হবে

জীবনটা আনন্দে কেটে যাক এমনটাই তো সবাই চায়! কিন্তু সেই আনন্দের খোঁজ মিলবে কীভাবে? শাস্ত্র বলছে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বিষ্ণুর নাম করুন, দেখবেন সব অশান্তি ঘাড় থেকে নেমে যাবে।

৩. কর্মজীবনে সাফল্য মিলবে

টাকা ছাড়া জীবন চলবে না। আর মনের মতো মাইনে তো তখনই মিলবে, যখন প্রোমোশন পাবেন! আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে যে পরিশ্রম করা মাস্ট! সেই সঙ্গে ভগবান বিষ্ণুর পুজো করুন, দেখবেন কর্মজীবনে সমনে আসা সব বাঁধা কেটে যাবে।

৪. ভয় দূর হবে

দুশ্চিন্তা আর ভয় আমাদের রোজের সঙ্গী। তবু তো এদের সঙ্গে বনিবনা হয় না। আর তাই তো কখনও চিন্তায়-চিন্তায় ঘুম উড়ে যায়, তো কখনও ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে প্রাণ। এভাবে বাঁচা যায় বলুন? তাই আজ মনে-মনে সর্বশক্তিমানকে নিজের মনের কথা জানান। তাকে বাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করুন, পুজো দিন, দেখবেন ভয় আর আপনার ধারে-কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।

অক্ষয় তৃতীয়ার পুজোর তিথি

১. পুজোর সময়
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে অক্ষয় তৃতীয়ার (akshaya tritiya) তিথি শুরু হয়েছে গতকাল রাত ৩:১৭ মিনিটে আর শেষ হচ্ছে আজ রাত ২:১৭ মিনিটে (akshaya tritiya 2019 date and time)।

২. সোনা কেনার শুভ সময়
সোনা কেনার শুভ সময় শুরু হচ্ছে দুপুর ৩:১৮ মিনিট, যা শেষ হবে আগামী কাল দুপুর ২:১৭ মিনিটে।

ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: wikipedia 

You Might Also Like

Akshaya Tritiya Greetings in English

 

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

Read More From Our World