বাঙালি নায়িকা বলতেই প্রথমে কাকে মনে পড়ে? মোহময়ী হাসি আর তেরচা চাহনি নিয়ে সুচিত্রা সেনকে? নাকি নায়িকা-গায়িকা প্রথম বাঙালি মহিলা সুপারস্টার কানন দেবীকে? নাকি হালফিলের ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে, যিনি একইসঙ্গে কমার্শিয়াল ও আর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন সমান দাপটের সঙ্গে? নাকি এঁরা নন, আপনার চোখের সামনে ভেসে ওঠে দেবশ্রী রায়ের ছবি, যিনি প্রথম বাংলা ছবিতে নাচ ব্যাপারটাকে জনপ্রিয় করলেন! নাকি অত দূরে তাকাতে আপনার মন চায় না! আপনি বরং বাঙালি নায়িকা বলতে মনে করতে চান স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়-কোয়েল মল্লিক-নুসরত জাহানকে, যাঁরা এখন আপনার মনোরঞ্জনে ব্যস্ত!
Table of Contents
সত্যি কথা বলতে গেলে, বাঙালি নায়িকা (Bengali actresses), এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা বেশ কঠিন। বাংলা সিনেমার ইতিহাস, বিশেষ করে সবাক বাংলা ছবির ইতিহাস বেশি দূরের না হলেও, বাঙালি নায়িকা, যাঁরা দাপটের সঙ্গে পর্দায় অভিনয় করেছেন, তাঁদের তালিকাটা নেহাত ছোটও নয়! তাই ক্ষুদ্র পরিসরে এঁদের নিয়ে আলোচনা করাটা বেশ কষ্টসাপেক্ষ! তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ-নিজ গুণে দর্শকের মনে বাসা বেঁধে রয়েছেন। আপনি যেমন ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’-তে সুচিত্রা সেনকে নিয়ে মাতেন, ঠিক তেমনই ‘আমি বনফুল গো’ যখন শোনেন, তখনও কানন দেবীকে মনে-মনে কুর্নিশ জানান। আবার সেই আপনিই ‘কলকাতার রসগোল্লা’র তালে নিজের অজান্তেও পা দোলান, আঙুলে টোকা মেরে তাল দেন! কিংবা ‘ও বন্ধু তুমি শুনতে কী পাও’-এর প্রিয়ঙ্কা ত্রিবেদী, যিনি হঠাৎ এসেছিলেন আবার হঠাৎই গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন, বাজি রেখে বলতে পারি, তাঁকেও কিন্তু একটু হলেও মনে রেখেছিলেন আপনি! ঠিক তেমনই আপনি মনে রেখেছেন আরও অনেক নায়িকাকেই। তাই আমরা এই প্রতিবেদনে সকলের কথা সমানভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি না। বরং আমরা চেষ্টা করছি, বাঙালি নায়িকাদের একটা যুগ অনুযায়ী তালিকা (list) তৈরি করার। এটিকে অনেকটা ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল বা কালপঞ্জী বলতে পারেন। বাংলা সিনেমার নায়িকারদের সম্মান জানানোর এটি একটি ছোট্ট প্রয়াস মাত্র!
দশক অনুযায়ী বাঙালি নায়িকারা (Decade Defining Bengali Actresses)
বাংলা ছবির পুরো যাত্রাপথকে আমরা ভাগ করে নিয়েছি তিনটি ভাগে। না, গুণমান বা অন্য কোনও মানদণ্ডে নয়। আমাদের সুবিধার্থে! তিনটি ভাগ হল যথাক্রমে, উত্তম-সুচিত্রা পূর্ববর্তী যুগ, উত্তম-সুচিত্রা যুগ এবং উত্তম সুচিত্রা পরবর্তী যুগ। আসলে উত্তম-সুচিত্রা জুটি বাংলা ছবির ক্ষেত্রে যে একটি মাইলস্টোনের মতো, তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। তাই অনেকটা খ্রিস্ট পূর্বাব্দ এবং খ্রিস্টাব্দ-র মতোই এই শ্রেণিবিভাগ করা হল!
উত্তম-সুচিত্রা পূর্ববর্তী যুগ (Before Uttam-Suchitra Era)
প্রথম বাংলা ছবি হিসেবে উল্লেখিত হয় নীতিশ লাহিড়ি নামে এক পরিচালকের তৈরি ‘বিলাত ফেরত’ ছবিটি। কিন্তু এই ছবিতে কোনও নায়িকা অভিনয় করেননি! আসলে সিনেমা তখন একটি নিম্নমানের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হত। ফলে কোনও ভদ্র পরিবারের মেয়ে ছায়াছবিতে কাজ করবে, একথা ছিল স্বপ্নেরও অতীত! অথচ হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের প্রথম সফল নায়িকাই ছিলেন বাঙালি! আমরা বলছি দেবিকা রানির কথা! একটি উচ্চশিক্ষিত বাঙালি পরিবারের মেয়ে দেবিকা ইংলন্ডে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে পরিচালক হিমাংশু রাইকে বিয়ে করে হয়ে যান হিন্দি ছবির নায়িকা! ১৯৩৩ সালে স্বামীর বিপরীতে তাঁরই নির্দেশনায় কর্মা ছবি দিয়ে তাঁর ডেবিউ। প্রথম ছবিতেই চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। এখন যখন মল্লিকা শেরাওয়াত পর্দায় চুমু খান, আমরা তাঁর সাহসের তারিফ করি! অথচ ভাবুন, ভারতীয় চলচ্চিত্রে চুম্বনের প্রবেশই ঘটেছিল এক বাঙালি নায়িকার হাত ধরে! যাক গে, দেবিকা রানি ভারতীয় চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র। আমরা বরং নজর ফেরাই আঞ্চলিক দিকে, মানে, বাংলায়!
এই সময়ে বাংলায় নায়িকা বলতে প্রথমেই যাঁদের নাম মনে আসে, তাঁরা হলেন সাধনা বসু এবং কানন দেবী। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, এঁরা শুধু সুন্দরী নায়িকাই নন, বরং সফল অন্তপ্রেনরও! সাধনা বসু-মধু বসু ‘আলিবাবা’, ‘রাজনর্তকী’-র মতো ছবিতে পরিচালনা, প্রযোজনার দায়িত্ব সামলেছেন। অন্যদিকে কানন দেবী, যিনি একাধারে রূপসী নায়িকা, সুঅভিনেত্রী এবং সুগায়িকাও বটে, তিনি উপহার দিয়েছেন নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়োর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে একের পর এক সুপারহিট ছবি! পরে তৈরি করেছেন নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা শ্রীমতি পিকচার্স! সুতরাং, বুঝতেই পারছেন, বাঙালি নায়িকারা বরাবরই ডাকসাইটে! তা অভিনয়ের ক্ষেত্রেই হোক বা ব্যবসার ক্ষেত্রে! এঁরা ছাড়াও এই সমটায় দাপিয়ে রাজত্ব করে গিয়েছেন আরও অনেকেই। তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্য, মলিনা দেবী, সুমিত্রা দেবী, ছায়া দেবী, চন্দ্রাবতী দেবী, সন্ধ্যারানি, রেণুকা রায়ের নাম। এঁরা প্রত্যেকেই নিজ-নিজ অভিনয়ের গুণে দাগ কেটেছেন দর্শকমনে।
উত্তম-সুচিত্রা যুগ (Uttam-Suchitra Era)
এই সময়টা বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে এমন একটা সময়, যখন বাঙালি সব ভুলে পর্দায় উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেনের রোম্যান্টিসিজম দেখতে ভালবাসত! তাঁদের নিয়ে স্বপ্ন দেখত! সুচিত্রা সেন বাংলা ছবির প্রথম মহানায়িকা! বা বলা ভাল এখনও পর্যন্ত একমাত্র মহানায়িকা! তাঁর পরে আর কাউকে সেই আসনে বসাতে পারিনি আমরা! তিনিই সেই যুগের একমাত্র নায়িকা, যাঁর নাম ছবির টাইটেল কার্ডে আসত নায়কের নামেরও আগে! ভাবতে পারছেন, শুধু দর্শক মনে নয়, গোটা ইন্ডাস্ট্রির চোখে কতটা সমীহ আদায় করতে পারলে এমন অ্যাচিভমেন্ট সম্ভব! অথচ এই সময়ে বাংলা সিনেমায় আলোড়ন তুলেছেন একের পর এক ডাকসাইটে অভিনেত্রী। সুচিত্রার সমকালীনদের মধ্যে ছিলেন বা আছেন সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী দেবী, মাধবী মুখোপাধ্যায়, ললিতা রায়, সন্ধ্যা রায়, অঞ্জনা ভৌমিকের কিংবা শর্মিলা ঠাকুরের মতো অভিনেত্রীরা। এঁরাও স্বীয় প্রতিভায় উজ্জ্বল। কিন্তু সুচিত্রা সেনের ক্যারিশমা এঁদের মধ্যে ছিল না। তাঁর জন্য বাঙালি মানসে যে হাহাকার, যা তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সঙ্গী ছিল, তা আর অন্য কারও জন্য কোথাও এল বাঙালির মনে!
বিশেষ উল্লেখ্য: এই সময়ে বাংলা-মুম্বইয়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান চলতেই থাকত! তাই হিন্দি ছবিতে যেমন দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন শর্মিলা ঠাকুর, রাখী গুলজার, জয়া ভাদুড়ি, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের মতো বাঙালি অভিনেত্রীরা, ঠিক তেমনই মুম্বই থেকে বাংলায় কাজ করে গিয়েছেন তনুজা, ওয়াহিদা রহমান, সিমি গ্রেওয়ালের মতো নায়িকারা!
উত্তম-সুচিত্রা পরবর্তী যুগ (After Uttam-Suchitra Era)
সুচিত্রা সেনের ছেড়ে যাওয়া রাজ্যপাটের দায়িত্ব সামলানো সত্যিই বড় কঠিন কাজ! তবুও তাঁর হাত থেকে ব্যাটন নিয়ে যথেষ্ট ভাল দৌড়েছিলেন সুমিত্রা রায়, অপর্ণা সেন, মিঠু চক্রবর্তী, লিলি চক্রবর্তীরা! এই সময়ে বাংলা ছবিতে ঢুকে পড়েছে আর্ট ফিল্মের দাপটও। সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে মূলত যেই ভাবধারার শুরু, তাকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেম ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনের মতো পরিচালকেরা। আর তাঁদের হাত ধরেই একঝাঁক নতুন মুখ পদার্পণ করেছেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতে। তাঁদের আলোচনায় আমরা পরে আসছি। এবার বরং যাওয়া যাক আরও একটু নতুন শতাব্দীতে, মানে টেকনোলজি পরিশব্দে যাকে আমরা বলব নতুন মিলেনিয়াম!
রঙিন চলচ্চিত্রের যুগ (Colour Era In Bengal Cinema)
যদি নায়িকাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবতে চেষ্টা করি, তা হলে বাংলা সিনেমার এই যুগটি বোধ হয় সবচেয়ে দুর্বোধ্য! একঝাঁক প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী এসময়ে এসেছেন। বেশ কিছু ভাল ছবিও উপহার দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্টার কোশেন্ট বলতে যা বোঝায়, তা খুব কম নায়িকার মধ্যেই ছিল এসময়ে। তবুও তার মধ্যে আলাদা করে বলতে হবে দেবশ্রী রায়, মহুয়া রায়চৌধুরী, শতাব্দী রায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর কথা। আপনি বলবেন, এঁরা ছাড়াও তো আরও অনেকে এই সময়ে এসেছিলেন। তা তো ছিলেনই। কিন্তু ওই যে বললাম, স্টার কোশেন্ট! একটু ভেবে বলুন তো, সেই নায়িকাদের স্রোতের মধ্যে ক’জনের নাম এই মুহূর্তে আপনি মনে করতে পারছেন?
রঙিন চলচ্চিত্রের যুগ (২০০০ সালের পরে)
আগের সময়টা যদি হয় শুধু যাওয়া আসা-শুধু স্রোতে ভাসার সময়, তা হলে এই সময়টা বাংলা নায়িকাদের সাহসী হয়ে ওঠার সময়! আর তার পিছনে কাজ করেছিল বেশ অনেকগুলি কারণ। নতুন মিলেনিয়াম, নতুন প্রযোজনা সংস্থা, ভিশুয়াল ও ডিজিট্যাল মিডিয়ার আগমন এক ধাক্কায় টালিগঞ্জ পাড়াকে করে দিল টলিউড। আর সেই টলিউডেই একে-একে চলে এলেন কোয়েল-স্বস্তিকা-শুভশ্রী-শ্রাবন্তী-রাইমা-নুসরত-সায়ন্তিকার মতো নায়িকারা! এঁরা যেন এক ঝলক নতুন হাওয়ার মতো বাংলা ছবিকে অনেকটা সাবালিকা করে দিলেন। এঁরা পর্দায় আইটেম ডান্স যেমন করলেন, ঠিক ততটাই দাপটের সঙ্গে অভিনয়ও করে দেখালেন! সর্বোপরি, সেই ভক্তদের আকুলতা আবার যেন ফিরে এল বাঙালি নায়িকাদের জন্য। এঁরা রাস্তায় বেরলে ভক্তরা ঘিরে ধরে, এঁরা ডেস্টিনেশন ওয়েডিং করে লোককে জানান দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেন, এঁরা আরও অনেক কিছু করেন, যা এঁদের আগে কোনও বাঙালি নায়িকা করে দেখাতে পারেননি! মোদ্দা কথা হল, অনেকদিন পর এমন একদল বাঙালি নায়িকা এলেন, যাঁরা আমাদের আবার নতুন করে ভালবাসতে শেখালেন!
সময় পাল্টেছে, পাল্টেছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞাও (Most Beautiful Bengali Actresses)
সৌন্দর্য যে-কোনও ছায়াছবির নায়িকার জন্যই বোধ করি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাপকাঠি। বিশেষত, বাঙালি নায়িকার জন্য তো বটেই। অভিনয়ের পাশাপাশি সুন্দর মুখের জয়ও যে সর্বত্র, তা তো সকলেরই জানা। হিন্দি ছবিতে তা-ও নাচানাচির একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু বাংলা ছবিতে নাচ এসেছে অনেকটাই পরে। তাই চলুন, দেখে নেওয়া যাক, দিনকালের সঙ্গে-সঙ্গে কীভাবে পাল্টেছে বাঙালি নায়িকার সৌন্দর্যের সংজ্ঞা!
সাদা-কালোর মোহময়ী নায়িকারা (Stunning Actresses of Bengali Black and White Cinema)
যাই বলুন ভাই, টেকনিকালার আসার আগে ঝাপসা কাচের মতো সাদা-কালো ছবিতে নায়িকাদের সত্যিই স্বপ্নসুন্দরী মনে হত! রংয়ের অভাব ঢাকা হত চড়া মেকআপ দিয়ে! তাই তখনকার দিনের সব নায়িকাদেরই মোটা ভুরু, আয়ত চোখ, কথা বলা দুটি ঠোঁট, চুলের খোঁপা বা বিনুনি, সবই ছিল বড় স্বপ্নমাখা! বাঙালি নায়িকাদের সৌন্দর্যের মাপকাঠি তখন একটাই, ঠিক যেন দুর্গাপ্রতিমার মতো মুখখানা! তাঁরা মোটা না রোগা, লম্বা না বেঁটে, এসব তর্কে তখন কেউ যেতই না! বরং আয়ত মুখে ঢলঢল লাবণ্য, এটিই ছিল নায়িকা হওয়ার প্রথম ও শেষ মানদণ্ড! তাই ভেবে দেখুন, দুর্গা বা খুব জোর হলে মা লক্ষ্মীদেরই তখন বিচরণ ছিল পর্দায়!
রঙিন যুগের আধুনিকারা
যেই না টেকনিকালারের হাত ধরে রঙ মেখে সেজে উঠল বাংলা ছবি, নায়িকার সৌন্দর্যের মাপকাঠিও গেল বদলে! আসলে ততদিনে হিন্দি ছবিও জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে আমাদের মধ্যে। তাই সেখানকার নিখুঁত ভাইট্যাল স্ট্যাটিস্টিক্সওয়ালা নায়িকাদের দেখে বাঙালিরও বোধ হয় ইচ্ছে হল নায়িকাদের সৌন্দর্যের ধারণাটা একটু পাল্টে ফেলা যাক! তাই এসময় থেকে বাঙালি নায়িকারা ধীরে-ধীরে ফিগার কনশাস, ফ্যাশন কনশাস হয়ে উঠলেন! পশ্চিমি পোশাকে, কেতায় সেজে উঠলেন দেবশ্রী-ঋতুপর্ণারা! আর তার আরও পরের নায়িকারা তো প্রায় পাশ্চাত্য সাজেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন! বরং সনাতনী রূপেই তাঁদের কম দেখা যায়, তা সে পর্দাতেই হোক বা পর্দার বাইরে! বাঙালি নায়িকা এখন সঠিক অর্থেই আধুনিকা, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফ্যাশন সেন্সে তাঁরা পাল্লা দিতে পারেন অনেক বলিউডি তারকাদের সঙ্গেও!
বাঙালি নায়িকাদের রোম্যান্টিসিজম, নাকি বলা উচিত ভালবাসা!
নায়িকাদের নিয়ে কথা বলব, অথচ তাঁদের রোম্যান্টিকতা নিয়ে কিছু বলব না, তা-ও কি হতে পারে! যদি কোনও একটি বিষয়ে বাঙালি নায়িকাদের জুড়ি মেলা ভার হয়ে থাকে শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত, তা হল পর্দায় ভালবাসতে! তা সে আপনি সপ্তপদী-র উত্তম-সুচিত্রার উদ্দাম প্রেমই বলুন বা সাত পাকে বাঁধা-র সুচিত্রা-সৌমিত্রর চাপা ভালবাসা, মরুতীর্থ হিংলাজের উত্তম-সাবিত্রীর বন্য প্রেমই বলুন বা ঘরে-বাইরে-র সৌমিত্র-স্বাতীলেখার নিষিদ্ধ প্রেম…কিংবা জুটি ধরে এগোনোরই বা কী প্রয়োজন, বাংলা ছবিতে নায়িকা বরাবরই অনেক দুর্দমভাবে ভালবেসেছেন পর্দায়! বিশ্বাস হচ্ছে না? বেশ, কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। সমাপ্তির অপর্ণা, ধন্যি মেয়ে-র জয়া, দেয়া-নেয়ার তনুজা, পারমিতার একদিন-এর ঋতুপর্ণা, উনিশে এপ্রিল-এর দেবশ্রী, চিরদিনই তুমি যে আমার-এর প্রিয়ঙ্কা, গয়নার বাক্স-র শ্রাবন্তী, চোখের বালি-র রাইমা, মৃগয়ায় মমতাশঙ্কর…আরও চাই? চোখের সামনে ছবির দৃশ্যগুলো ভেসে উঠলেই বুঝতে পারবেন, যা বলছি, তা কতটা সত্যি! আর এগুলো তো উদাহরণ মাত্র। আমরা জানি, এটুকু পড়লেই আপনার নিজেরই আরও অনেক ছবির ও তার নায়িকার কথাই মনে পড়বে!
বিখ্যাত বাঙালি নায়িকারা
এবার আসি নায়িকা পরিচয়ে! যদিও এঁদের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, তবুও ছোট্ট করে এঁদের কার্যকাল ও অন্য পরিচয়ের সঙ্গে আবার আপনাদের একবার মোলাকাত করিয়ে দেওয়া যাক! তবে হ্যাঁ, গোড়া থেকেই একটা ব্যাপার বলে দেওয়া ভাল। শুরুর দিনটি থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত বাংলা ছবিতে যত নায়িকা অভিনয় করেছেন, তাঁদের সকলকে এই অল্প পরিসরে আঁটানো একেবারেই অসাধ্য! তাই আমরা এমন নায়িকাদের বেছে নিয়েছি, যাঁরা হয় ছবির সংখ্যায় সমকালীনদের পিছনে ফেলেছেন, অথবা কোনও মাইলস্টোন আয়ত্ত করেছেন নিজেদের কেরিয়ারে।
সাদা-কালো যুগের বাঙালি নায়িকারা
১| দেবিকা রানি (Devika Rani)
যদিও ইনি হিন্দি ছবিতেই অভিনয় করেছেন, কিন্তু বাঙালি তো বটে! তাই শুরুটা করা যাক এঁকে দিয়েই। তদানীন্তন বিশাখাপত্তনমে জন্ম তাঁর। পিতৃকুল ও মাতৃকুল, দু দিক থেকেই তিনি ছিলেন কবিগুরুর বংশজ! এহেন পরিবারের বিলেতফেরত মেয়ে নামল সিনেমায়! আর নেমেই ইতিহাস! একের পর এক সুপারহিট ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রতিভাময়ী দেবিকা কস্টিউম ডিজাইন, সেট ডিজাইনও করতেন নিজের ছবিতে! একদিকে যেমন তিনি প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে পর্দায় চুম্বন করেছেন, অন্যদিকে প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে একই ছবিতে হিন্দি-ইংরেজি দুটি ভাষাতেই গানও গেয়েছেন! পেয়েছেন পদ্মশ্রী ও প্রথম দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারও। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হল, কর্মা, অচ্ছুত কন্যা, সাবিত্রী, প্রেম কহানি, ইজ্জত, হমারি বাত ইত্যাদি।
২| কানন দেবী (Kanan Devi)
হাওড়ার এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কাননবালা অভিনয় শুরু করেছিলেন অর্থাভাবে! কিন্তু সুন্দরী, সুগায়িকা কানন খুব শিগগিরই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন নায়িকা হিসেবে। ১৯৩৫ সালে মুক্তি পাওয়া মানময়ী গার্লস স্কুল দিয়ে কাননবালা সকলকে জানিয়ে দেন যে, পুরুষশাসিত সিনেমা জগতে এবার নতুন তারকার উদয় হয়েছে! কানন দেবীর বাংলার প্রথম সিনে ফ্যাশন আইকনও বটে। তাঁর মতো শাড়ি-ব্লাউজ পরা শুরু করেছিলেন তখনকার মহিলারা! নিজস্ব কোম্পানি শ্রীমতী পিকচার্সের ব্যানারে তিনি শুধু ছবি প্রযোজনাই করতেন না, পরিচালনা ও অভিনয়ও করতেন! দেবিকা রানির মতো তিনিও পদ্মশ্রী ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হল, ঋষির প্রেম, প্রহলাদ, বাসবদত্তা, বিষবৃক্ষ, বিদ্যাপতি, শেষ উত্তর ও মেজদিদি।
৩| সুমিত্রা দেবী (Sumitra Devi)
চন্দ্রাবতী দেবী ও কানন দেবীকে পর্দায় দেখে উকিলের মেয়ে নীলিমার সাধ জাগে অভিনেত্রী হওয়ার! নিউ থিয়েটার্সের অডিশনে পাশ করে সুযোগ পান কে এল সায়গলের বিপরীতে মেরি বহন ছবিতে কাজ করার। সেই শুরু, ঘরের মেয়ে নীলিমা হলেন রুপোলি পর্দার সুমিত্রা এবং এক নতুন সাফল্যের ইতিহাস! একইসঙ্গে বাংলা ও হিন্দি ছবিতে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন তিনি। ১৯৪৭ সালে সন্তানের জন্মের ঠিক দশদিনের মাথায় অকালমৃত্যু হয় এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীর। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা ছবি হল, পথের দাবী, দেবী চৌধুরাণী, নিয়তি, আঁধারে আলো, সাহেব বিবি গোলাম ইত্যাদি।
৪| ছায়া দেবী (Chhaya Devi)
প্রবাসী বাঙালি কনক কলকাতায় এসে কৃষ্ণচন্দ্র দে-র কাছে নাড়া বেঁধেছিলেন গান শিখে অতৃপ্ত বিবাহিত জীবনের দুঃখ ভুলতে। তাঁর সুরের জাদুতে মজে যান দেবকী বসু এবং ঘরোয়া মেয়ে কনককে ছায়া দেবী হিসেবে নিয়ে আসেন বাংলা সিনেমার দুনিয়ায়। তাঁর অভিনয় তো নজর টানতই, মন ভরিয়ে দিত তাঁর সুরের জাদুও! নায়িকা হিসেবে ছাড়াও, চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবেও তিনি ছিলেন উঁচু মানের। তাঁর কতগুলি উল্লেখযোগ্য ছবি হল, সোনার সংসার, বিদ্যাপতি, সপ্তপদী, উত্তর ফাল্গুনী, হাটেবাজারে, নির্জন সৈকতে ইত্যাদি।
৫| অরুন্ধতী দেবী (Arundhati Devi)
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের হাতে এঁর অভিনয়ের হাতেখড়ি! বরিশালের মেয়ে অরুন্ধতী গুহঠাকুরতা, যিনি পরে পদবি ছেঁটে ফেলে শুধু অরুন্ধতী দেবী হিসেবে পরিচিত হন, নাচ-গান শিখেছিলেন বিশ্বভারতীতে! ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ (১৯৫২) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর নায়িকার ভূমিকায় তাঁকে দেখা গিয়েছে অনেক ছবিতে। অভিনয় করেছেন উত্তমকুমারের নায়িকা হিসেবেও! তাঁর কতগুলি উল্লেখযোগ্য ছবি হল, ‘নদ ও নদী’, ‘বকুল’, ‘সতী’, ‘প্রশ্ন’, ‘গোধূলি’, ‘মা’, ঝিন্দের বন্দি, জতুগৃহ, পঞ্চতপা, ক্ষুধিত পাষাণ, ‘দুজনার’ ইত্যাদি।
৬| সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)
এঁর সম্বন্ধে তো যতটা বলা যায়, ততটাই কম! পাবনার মেয়ে ও ব্যারিস্টার আদিনাথ সেনের পুত্রবধূ রমা সিনেমায় আসেন মূলত স্বামী দিবানাথ সেন ও মামাশ্বশুর বিমল রায়ের উৎসাহে। উত্তমকুমারের বিপরীতে সাড়ে চুয়াত্তর ছবিটি হিট করার পরেই তাঁকে নিয়ে নড়েচড়ে বসে বাঙালি আর তারপর থেকে তারা আর সুস্থির হতে পারেনি! এখনও রবিবার দুপুরে উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা থাকলে, অন্য সব কাজ ভুলে আমরা হাঁ করে টিভির পর্দায় চোখ রাখি!
৭| সুপ্রিয়া দেবী (Supriya Devi)
উত্তম-সুচিত্রার মতো না হলেও উত্তম-সুপ্রিয়ার জুটিও কিন্তু অনেকের কাছেই প্রিয়। স্বয়ং মহানায়ক যাঁর ভালবাসায় সমৃদ্ধ হয়েছিলেন, তাঁকে আপামর বাঙালি ভাল না বেসে পারে! সুপ্রিয়াও নিজের অভিনয়, ক্যারিশমা, স্ক্রিন প্রেজেন্স দিয়ে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন সকলকে। বাংলা ছবির সেই যুগের সবচেয়ে ফ্যাশন কনশাস নায়িকাও বলা হত তাঁকে! আবার সেই সুপ্রিয়ায়ই কী অসম্ভব ডিগ্ল্যাম চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মেঘে ঢাকা তারা-র নীতা হিসেবে! কিংবা বাংলার প্রথম মেগা সিরিয়াল জননী, তার কথা মনে নেই? ওই বয়সেও কী দাপট অভিনয়ের!
৮| সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (Sabitri Chatterjee)
সুচিত্রা-সুপ্রিয়ায় গ্ল্যামারের ছটার তলায় যে নায়িকা চুপিসাড়ে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন ঠিক পাশের বাড়ির মেয়ের রূপে, তিনিই হলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়! ভেবে দেখুন, কাজটা খুব সহজ ছিল না। উত্তম-সাবিত্রী জুটির বেশ কিছু হিট ছবিও আছে। বাড়ির স্নেহপ্রবণ বড় বউদি কিংবা দিদিটির ভূমিকায় তাঁর চেয়ে মানানসই আর কেউ ছিল না। অন্যদিকে সিনেমার সঙ্গে-সঙ্গে তিনি থিয়েটারের মঞ্চেও অভিনয় করে গিয়েছেন সমানতালে! এমনকী, এখনও বাংলা সিরিয়ালের দুনিয়ায় তাঁকে দেখা যায় মাঝে-মধ্যে! বয়স ছাপ ফেললেও, অভিনয়ের ধার এতটুকুও কমেনি!
৯| সন্ধ্যা রায় (Sandhya Roy)
বিশ্বজিতের সঙ্গে তাঁর জুটি এককালে সাড়া ফেলেছিল বাংলা ছবির দুনিয়ায়। সন্ধ্যা রায়, যাঁকে দেখলে খুব নিজের, কাছের বলে মনে হত, যাঁর সৌন্দর্য ছিল স্নিগ্ধ, তিনি সব ধারার ছবিতেই চুটিয়ে কাজ করেছেন। সান্নিধ্য পেয়েছেন সত্যজিৎ রায়, তরুণ মজুমদারের মতো পরিচালকের। গ্রাম বাংলা সহজ-সরল মেয়ের চরিত্রে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়া। পৌরাণিক ধর্ম আশ্রিত বাবা তারকনাথ-ই বোধ হয় তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে সফল ছবি!
১০| মাধবী মুখোপাধ্যায় (Madhabi Mukherjee)
স্বয়ং সত্যজিৎ রায় নাকি এককালে নাকানিচোবানি খেয়েছিলেন এঁর প্রেমে! মাধবীকে নিয়ে তৈরি করেছেন চারুলতা, মহানগরের মতো ছবি। আবার তার পাশাপাশি ছদ্মবেশীতে উত্তমকুমারের নায়িকা হিসেবেও মাধবী সমান সাবলীল! আসলে তাঁর অভিনয়ের ধারাটাই এমন। ডাকসাইটে সুন্দরী নন, কিন্তু তাঁর অভিনয়ের আঠায় আপনি আটকা পড়তে বাধ্য!
এই তালিকায় আরও আছেন সন্ধ্যারানি, অঞ্জনা ভৌমিক, সুমিতা সান্যাল, লিলি চক্রবর্তী, ললিতা মুখোপাধ্য়ায়ের মতো নায়িকারা।
রঙিন ছবির বাঙালি নায়িকারা
১| দেবশ্রী রায় (Debashree Roy)
গানপ্রিয় বাঙালিকে একধাক্কায় নৃত্যপ্রিয় করে তোলেন দেবশ্রী। শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। তারপর সাদা-কালো যুগ হয়ে রঙিন ছবিতেও কাজ করেছেন সমানতালে। কলকাতার রসগোল্লা হয়ে যেমন রকবাজ ছেলেদের বুকে ঢেউ তুলেছেন, ঠিক তেমনই উনিশে এপ্রিল-এ তাঁর সমাহিত অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছে জাতীয় পুরস্কার। প্রসেনজিতের সঙ্গে তাঁর জুটি ব্যক্তিগত জীবনে সফল না হলেও, পর্দায় কিন্তু সুপারহিট ছিল!
২| ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta)
সাদা-কালো জুড়ে যেমন রাজত্ব করেছিলেন সুচিত্রা সেন, রঙিন যুগের অনেকটা সময় ধরেই বাংলা ছবির জগতে একজন নায়িকাই রাজত্ব করতেন, তিনি ঋতুপর্ণা! প্রসেনজিতের সঙ্গে তাঁর সুপারহিট জুটি বাংলা ছবিকে তার সবচেয়ে খারাপ সময়ে লাগাতার অক্সিজেন জুগিয়ে গিয়েছে। এসবের পাশাপাশি ঋতুপর্ণা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে তিনি কত উঁচুদরের অভিনেত্রী দহন বা পারমিতার একদিন-এর মতো ছবি দিয়ে!
৩| রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Rachana Banerjee)
বাংলা ছবি, ওড়িয়া ছবি, তামিল-তেলুগু-হিন্দি, কোন ভাষায় অভিনয় করেননি রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়! বাণিজ্যিকভাবে যথেষ্ট সাফল্যও পেয়েছেন। সূর্যবংশম ছবিতে স্বয়ং অমিতাভ বচ্চনের প্রেমিকা সেজেছেন! আর এখন এক নম্বর দিদি হয়ে বাঙালি দর্শকের মনে পাকাপাকি আসনটি পেতে ফেলেছেন!
৪| কোয়েল মল্লিক (Koel Mallick)
জিৎ, দেব, যিশু, পরমব্রত, আবির…এঁদের সকলকে যদি একসঙ্গে কেউ সামলাতে পারেন, তা হলে তিনি কোয়েল মল্লিক! আধুনিক যুগের সবচেয়ে বাণিজ্যসফল নায়িকা। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একেবারেই বিতর্কে বিশ্বাস করেন না। ঘরে-বাইরে সমান তালে কী করে সামলাতে হয়, তা এঁকে দেখে শেখা উচিত। কোয়েল এখনও কেরিয়ার-সংসার দুটোই সামলে দিচ্ছেন এবং আশা করি, ভবিষ্যতেও দেবেন!
৫| স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)
বিতর্ক আর স্বস্তিকা যেন সমার্থক! প্রকৃত অর্থে তিনি এই মিলেনিয়ামের নায়িকা। একমাত্র সুচিত্রা সেন ছাড়া আর কোনও বাঙালি অভিনেত্রী মেয়ে নিয়েও সফল নায়িকা হয়েছেন বলে অন্তত এই প্রতিবেদকের তো মনে পড়ছে না! স্বস্তিকা সেটা করে দেখিয়েছেন। মূল ধারার ছবির পাশাপাশি একের পর এক সাহসী সমান্তরাল ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন আর পোশাক পাল্টানোর মতো বদলে গিয়েছে তাঁর পুরুষসঙ্গী! কিন্তু তাতে কী, আমরা তো উৎসাহী তাঁর স্বাভাবিক অভিনয় নিয়ে, তাঁর বিতর্কিত লাইফস্টাইল বরং তাঁরই থাকুক!
আরও আছেন মহুয়া রায়চৌধুরী, শতাব্দী রায়, প্রিয়ঙ্কা সরকার, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্নো মিত্র, তনুশ্রী সরকার ইত্যাদিরা!
অন্য ধারার বাংলা ছবির ডাকসাইটে নায়িকারা
সমান্তরাল ছবির মূল উৎস যদি বাঙালি পরিচালকেরা হন, তা হলে সেই ছবিতে অভিনয় করে যে বেশ কয়েকজন বাঙালি নায়িকা খ্যাতির শিরোনামে উঠে আসবেন, তা তো বলাই বাহুল্য!
এই তালিকায় আসবে বেশ কয়েকজনের নাম, যাঁদের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় অপর্ণা সেনের কথা! ইনি কমার্শিয়াল এবং সমান্তরাল, দুই ধারাতেই সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে গিয়েছেন। নিজে ছবি পরিচালনা করে, সেই ছবিতেই অভিনয় করে যেমন তাক লাগিয়েছেন, তেমনই অন্য পরিচালকদের ছবিতেও কাজ করেছেন সমান সাফল্যের সঙ্গে। অপর্ণার ফিল্মোগ্রাফি তাই দুই ধারার ছবিতেই ঋদ্ধ। সেখানে যেমন আছে বসন্ত বিলাপ, তেমনই আছে সমাপ্তি, তিনি খেলব হোলি রং দেব না-য় যেমন অনায়াসে লিপ দেন, ঠিক তেমনই সাবলীলভাবে অভিনয় করেন পারমিতার একদিন ছবিতে সনকার ভূমিকায়!
এরপরেই আসা উচিত মমতাশঙ্করের নাম। ইনি বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করেননি তেমন, কিন্তু সত্যজিৎ-মৃণালের পরিচালনায় এসেছেন পর্দায়। মমতার স্বাভাবিক অভিনয় যে-কোনও ছবিরই সম্পদ হয়ে উঠত তা সে মৃগয়াই হোক বা শাখাপ্রশাখা!
ইন্দ্রাণী হালদার, ইনিও অপর্ণা সেনের মতো মূলধারা ও সমান্তরাল, দুই ধরনের ছবিতেই কাজ করেছেন। তবে দহন-এর ঝিনুকরূপে আমাদের মনে যতটা দাগ কেটেছেন ইন্দ্রাণী, ততটা বোধ হয় বিয়ের ফুল দিয়ে কাটতে পারেননি!
এই তালিকায় কঙ্কণা সেনশর্মার নাম না রাখাটা অন্যায়। খুবই কম সংখ্যক বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন কঙ্কণা, কিন্তু সবকটিই প্রশংসাযোগ্য! তা সে নায়িকা সংবাদই হোক কিংবা গয়নার বাক্স।
সুচিত্রা সেনের নাতনি হিসেবে অর্ধেকটা যুদ্ধ প্রায় জিতেই ফেলেছিলেন রাইমা সেন! কিন্তু বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে তিনি কোনওদিনই কাজ করতে চাননি। তাই সমান্তরাল ছবিতে ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় যে পরিশীলিত, সুঅভিনেত্রী রাইমাকে আমরা দেখি, তাঁকেই মনে রাখতে চাই!
আর আধুনিক বাংলা ছবিতে যে কৃষ্ণকলি নিজের অভিনয়ক্ষমতার গুণে সকলকে মুগ্ধ করেছেন, তিনি পাওলি দাম। মনের মানুষ ছবিতে তাঁর লালন ফকিরের সহকর্মিণী হিসেবে অভিনয় যতটা মন কাড়ে, ঠিক ততটাই নজর টানে কালী ওয়েব সিরিজে এক অসহায় মায়ের চরিত্রে তাঁর অসামান্য অভিনয়!
এছাড়াও এই ধারার ছবিতে মাঝে-সাঝেই অভিনয় করে নজর টেনেছেন অলকনন্দা রায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীরা।
শেষে একটি ক্যাটিগরির কথা না বললে তো পুরো আলোচনাটাই অসমাপ্ত থেকে যাবে। তাঁরা হলেন হিন্দি ছবির বাঙালি নায়িকারা। যাঁরা এই বিভাগে বিচরণ করছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আলাদা-আলাদা আলোচনার দাবি রাখেন! তালিকায় আছে শর্মিলা ঠাকুর, মালা সিনহা, রাখী গুলজার, জয়া বচ্চন, মৌসুমী মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে হালফিলের কাজল, রানি মুখোপাধ্যায়, বিপাশা বসুরাও! বোঝাই যাচ্ছে, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও বাঙালি কর্তৃত্ব কিন্তু ফল্গুধারার মতো সেই বয়েই চলেছে!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!
Read More From বিনোদন
চশমা পরা হবু কনেরা কিভাবে সাজবেন জেনে নিন
SRIJA GUPTA