উৎসব ও অনুষ্ঠান উদযাপন
গণপতির কথা অমৃত সমান, গণেশ চতুর্থীর পুণ্য লগ্নে শুনুন শ্রী গণেশের নানা উপাখ্যান
তিনি দেবতাদের মধ্যে কূল শ্রেষ্ঠ, তিনি স্বয়ং মহাদেব আর মা পার্বতীর বড় আদরের সন্তান, মহাভারত লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি আর যে কোনও পুজোয় সবার আগে তাঁর পুজো হয়। কথায় বলে তাঁর একবার দর্শনেই মানব জাতির সব কামনা পূর্ণ হয়। তিনি ভগবান শ্রী গণেশ। আজ গণেশ চতুর্থীর (chaturthi) পুণ্য লগ্নে ভগবান শ্রী গণেশকে নিয়ে নানা পৌরাণিক কথা আপনাদের কাছে আমরা নিয়ে এসেছি। গন+ইশ অর্থাৎ কূল বা জাতির ইশ্বর তিনি। কার্তিকের মতো অমন রূপবান অমন বীর যোদ্ধা থাকার পরেও মহাদেব আর উমার বড় আদরের সন্তান গণেশ। যিনি নিজের হাতে মহাভারত লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর কাহিনি (pauranik) শোনা যে বড় পুণ্যের কাজ সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে দেরি না করে বসে পড়ুন। আর আমরাও গণপতির (ganesha) অমৃত কথার ঝাঁপি খুলছি।
দেবতা গণেশ কেন একদন্ত?
পুরাণ বলে একবার দেবতাদের মধ্যে জোর ঝগড়া শুরু হয়তে গেল এই নিয়ে যে কে শ্রেষ্ঠ। মহাদেব এই ঝগড়া থামাতে বললেন যে সবচেয়ে কম সময়ে স্বর্গ্য, মর্ত্য আর পাতাল অর্থাৎ ত্রিলোক পরিক্রমা করে ফিরে আসবে সেই হবে শ্রেষ্ঠ। এই কথা শোনামাত্র ময়ূরে চেপে হুড়মুড় করে কার্তিক ঠাকুর বেরিয়ে গেলেন। বাকিরাও দৌড় লাগালেন। এদিকে গণেশ বেচারা গোলগাল ধীর স্থির। তার উপর তিনি ছোট্ট একটা ইঁদুরে চড়েন। তিনি বাবা মায়ের চারদিকে তিনবার পাক খেয়ে এসে দিব্যি শ্রেষ্ঠ দেবতার আসনে বসে পড়লেন। ফিরে এসে এসব দেখে কার্তিকের আক্কেল গুড়ুম। তিনি রাগের চোটে গণেশের একটা দাঁত দিলেন ভেঙে। গণেশ হয়ে গেলেন একদন্ত। তবে বিঘ্নহর্তা বললেন, বাবা মা হলেন আসলে ত্রিলোক। বাবা মায়ের সেবা করলেই তিন লোক ভ্রমণ হয়। অকাট্য যুক্তি। সাধু সাধু!
গণেশের মূর্তি অতুলনীয়
সত্যিই তো, গণেশের শান্ত ধীর স্থির মূর্তি দেখলে হাত আপনা থেকেই জোড় হয়ে আসে। গণেশের মাথা যে হাতির মতো সে তো আপনারা জানেন। কিন্তু গণেশের মূর্তির প্রত্যেকটি অঙ্গের একেকটি সুন্দর মানে আছে। গণেশের মাথা বড়, এর অর্থ হল তিনি চিন্তাশীল। গণেশের কান জোড়াও বড়। এর অর্থ হল তোমাকে শোনার ধৈর্য রাখতে হবে। সব শুনতে হবে কিন্তু বলতে হবে কম। তাই কানের তুলনায় গণেশের মুখ গহ্বর ছোট। সিদ্ধিদাতার শুঁড় বিপদের আগাম সঙ্কেত দেয় আর ছোট চোখ বোঝায় মগ্নতা। তাঁর বড় উদর হল ভোজন রসিক এবং সব কথা পেটের মধ্যে ধারণ করার লক্ষণ। সত্যি গণেশের মহিমা অপার।
হাতির মাথা কেন বসল গণেশের ধড়ে?
গণেশ যখন জন্ম নিলেন তখন কিন্তু তাঁর মাথা হাতির মতো ছিল না। পার্বতী তাঁর বরপুত্রকে দেখার জন্য ভাই শনি দেবতাকে অনুরোধ করলেন। শনি বললেন তাঁর দৃষ্টি বড় সাঙ্ঘাতিক। শিশু পুত্রের উপর সেটা পড়লে খারাপ কিছু হতে পারে। পার্বতী সেটা শুনলেন না। অনেক অনুনয়ের পর শনি দেবতা তাঁর ভাগ্নেকে দেখতে এলেন। যেই তিনি শিশুর দিকে তাকালেন গণেশের মাথা গেল খসে। শনি তখন বললেন উত্তর মুখো হয়ে শুয়ে আছে যে জীবিত প্রাণী, তার মাথা কেটে আনতে। অনেক খুঁজে পাওয়া গেল হাতিকে। শনি মন্ত্রবলে সেই মাথা জুড়ে দিলেন গণেশের সঙ্গে। তবে এই নিয়ে অন্য একটি কাহিনিও প্রচলিত আছে। দেবী পার্বতী একদিন ভাবলেন শিব ঠাকুরের তো দুটি চ্যালা আছে। তাঁর একটি এরকম ছায়াসঙ্গী থাকলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ। চন্দন, মাটি ইত্যাদি দিয়ে তিনি একটি পুতুল গড়লেন, তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠাও করলেন। সে এতই সুন্দর হল, পার্বতী তাঁকে পুত্র রূপে গ্রহণ করলেন। তারপর বললেন আমি স্নানে যাচ্ছি তুমি পাহারা দাও। কেউ যেন এখন প্রবেশ না করে। গণেশ গেলেন পাহারা দিতে। এদিকে শিব ঠাকুর যেই পার্বতীর কক্ষে প্রবেশ করতে গেলেন, গণেশ তাঁকে বাধা দিলেন। রেগে গিয়ে শিব কেটে দিলেন গণেশের মাথা। তারপর জানতে পারলেন এ তাঁরই সন্তান। বিপদ বুঝে ব্রহ্মা একটি হাতির মাথা বসিয়ে দিলেন।
গণেশের পরিবার
দুর্গা পুজোর সময় সপ্তমীর দিন কলাবউয়ের সঙ্গে গণেশের বিয়ে হয়। আদতে কিন্তু ভগবান শ্রী গণেশ ব্রহ্মচারী। কলাবউ বা নবপত্রিকা আসলে দেবী দুর্গারই প্রতীক। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ বলে গণেশের স্ত্রী হলেন দেবী ষষ্ঠী। আবার শিবপুরাণ বলে প্রজাপতা ব্রহ্মার দুই কন্যা সিদ্ধি ও বুদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিবাহ হয়। এই দুই কন্যা গণেশের ডুও সন্তান ক্ষেম ও লাভ বলে দুই সন্তানের জন্ম দেন। তবে গণেশের স্ত্রীদ্বয় ও পুত্রদ্বয়ের নাম নিয়ে মতভেদ আছে। মৎস্যপুরাণে গণেশের স্ত্রীয়েদের নাম ঋদ্ধি ও বুদ্ধি বলা হয় এবং সন্তানদের বলা হয় শুভ ও লাভ। পণ্ডিত অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ তাঁর ‘লক্ষ্মী গণেশ গ্রন্থে গণেশের দুই স্ত্রীর নাম বলেছেন তুষ্টি ও পুষ্টি।
Featured Images: manasi_kori, mavalee19, aaple_bappa_official
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!
Read More From উৎসব ও অনুষ্ঠান উদযাপন
চশমা পরা হবু কনেরা কিভাবে সাজবেন জেনে নিন
SRIJA GUPTA
এই নববর্ষে সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরপুর থাকুন, মিষ্টি মুখ করুন আনন্দে
Indrani Bose
৭২ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে উদবুদ্ধ করার মত ২০টি বার্তা
Debapriya Bhattacharyya