এলোভেরা শরীর ঠান্ডা রাখার জন্যই সাধারণত পরিচিত, কিন্তু আপনি কি জানেন যে এই গাছ আপনার সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্যও সমানভাবে কার্যকর? গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত – সব ঋতুতেই এলোভেরা ব্যবহার করা যায়. এলোভেরার পাতায় ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩, বি৬, বি১২, সি, ই এবং ফলিক এসিডের মতো পরিপোষক পাওয়া যায়. এলোভেরার গুন এরকমই প্রচুর, নানান বিউটি প্রোডাক্টেও এলোভেরার ব্যবহার করা হয়. স্বাস্থসম্মত দিক থেকেও এলোভেরার (Aloe Vera) পাতা একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী ভেষজ. এলোভেরা জেল স্বাভাবিক ভাবেই এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, তাই ছোটোখাটো ব্যাথা, পুড়ে যাওয়া কিংবা কেটে যাওয়া জায়গায় ফার্স্টএইড এর কাজ খুব ভালোভাবে করে. আরো সব চমকপ্রদ এলোভেরার উপকারিতা ও গুন (Aloe Vera Juice Benefits) জেনে নেওয়া যাক তাহলে –
এলোভেরার পাতায় ভরপুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে যা শুস্ক ফাটা ঠোঁটের জন্য কোনো আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়. নরম ঠোঁট পেতে গেলে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে – ঠোঁটে এলোভেরা জেল লাগিয়ে ভুলে যান. আর যদি আপনার হাতে কিছুটা সময় থাকে, তাহলে একটা কাঁচের ছোট শিশিতে এলোভেরা জেলের (Aloe Vera Gel) সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে রাখতে পারেন, আর মাঝেমাঝেই লিপবাম হিসিবে সেটা ব্যবহার করতে পারেন.
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যদি আপনার চোখ ক্লান্ত আর ফোলাফোলা থাকে, চোখের চারপাশে এলোভেরা জেল লাগানো আরম্ভ করুন, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই তফাৎটা চোখে পড়বে. অনেক আন্ডার-আই ক্রিমেও এলোভেরা জেল (Aloe Vera Juice Benefits) ব্যবহার করা হয়.
অনেক সময় ওয়াক্সিং, প্লাকিং বা থ্রেডিং করার পর ব্যাথা থাকে র ত্বকের নানা জায়গায় লাল লাল ছোপ পরে. কিছুক্ষন এলোভেরা জেল লাগান, দেখবেন আরাম পাবেন.
এলোভেরা (Aloe Vera) ত্বকের ইলাস্টিসিটি ঠিক রাখতে সাহায্য করে যার ফলে ফাইনলাইন, বলিরেখা, দাগ ইত্যাদির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়. এলোভেরা জেলে সামান্য অলিভ অয়েল আর ওটমিল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরী করুন, এবার ওই পেস্ট মুখে লাগিয়ে আধঘন্টা পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন.
এলোভেরাতে জলের আধিক্য থাকায় এটি ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে খুবই লাভদায়ক, এবং সেটাও ত্বককে চিটচিটে না করে – আশ্চর্য ব্যাপার না? যাদের ত্বক তেলতেলে আর ব্রোনোর সমস্যা আছে, তাদের জন্য এলোভেরা জেল অত্যন্ত কার্যকরী. শীতকালে শুস্ক ত্বকের সমস্যা মোটামুটি সবার হয়, এই সময় এলোভেরার ব্যবহার এই সমস্যা দূর করার জন্য অব্যর্থ ওষুধ. এলভ্যেরা জেল নিয়ে ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের মতো ম্যাসাজ করুন, দেখবেন ত্বকের আদ্রতা হারিয়ে যাবে না. নখ মজবুত আর চকচকে করার জন্য আপনি নিজের নখেও এলোভেরা জেল (Aloe Vera Upokarita) লাগাতে পারেন.
মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য এলোভেরা সাহায্যকারী. এলোভেরাতে এন্টি-ফাঙ্গাল, এন্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুন আছে যেগুলি দাগ-ছোপ আর ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে. এতে পোলিসেকেরাইডসও আছে যা ডেডসেল দূর করে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে. এর ফলে ব্রণর সমস্যা দূর হয় আর দাগও থাকে না – দারুন না? রোজ রাতে শোবার আগে ব্রোনোর ওপরে এলোভেরা জেল লাগিয়ে ঘুমোন, আপনি চাইলে এলোভেরা জেলের সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রসও মিশিয়ে লাগাতে পারেন. কিছুদিনের মধ্যেই তফাৎ চোখে পড়বে.
সূর্যের রশ্মি, বিশেষত ‘ইউ-ভি রে’ আমাদের ত্বকের অত্যন্ত ক্ষতি করে. এলোভেরা জুস্ সূর্যের এই ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং এর এন্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে. তাই, যখনি আপনি রোদে কোথাও যাবেন, ভালো করে এলোভেরা জুস্ মেখে বেরোন.
ছোট তুলোর বল বানিয়ে তা কিছুক্ষন এলোভেরা জেলে ডুবিয়ে রাখুন যাতে ভালো ভাবে তুলো এলোভেরা (Aloe Vera) গেল শুষে নেয়. এরপর ওই তুলোর বল কোনো টেপের সাহায্যে আঁচিলের ওপর লাগিয়ে নিন. নিয়মিতভাবে এটা কয়েক সপ্তাহ করলে আঁচিল আপনিই পড়ে যাবে.
নিয়মিত এলোভেরা জেলের ব্যবহারে স্ট্রেচমার্কস অনেকটাই হালকা হয়ে আসে. এছাড়া এলোভেরা (Aloe Vera Juice Benefits) এস্ট্রিজেন্টের কাজ করে যার ফলে লোমকূপ টাইট করতেও সাহায্য করে.
এলোভেরা জেলে একটু চিনি আর লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্র্যাব তৈরী করুন. এই স্ক্র্যাব ব্যবহারে ডেডসেল দূর হয় আর তার সাথে সাথে ত্বকের জলীয় উপাদানও বজায় থাকে, ফলে আপনি পান নরম, কমনীয় আর পরিষ্কার ত্বক.
এ ছাড়া এলোভেরার (Aloe Vera Gel) রসে অল্প নারকোল তেল মিশিয়ে কনুই, হাঁটু বা গোড়ালিতে লাগালে কালোভাব দূর হয়.
এলোভেরা কে ঘৃতকুমারী ও বলা হয়. চুলের যত্নে এলোভেরার কার্যকরী উপাদানগুলি চুল ঘন এবং সুন্দর করে তোলে এবং চুলের ‘পি-এইচ’-এর ভারসাম্য রক্ষা করতেও সাহায্য করে. এলোভেরা চুলপড়া কমায়, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, খুশকি দূর করে, স্ক্যাল্পের সমস্যা দূর করে এবং চুলের কন্ডিশনিংও করে. এলোভেরা জেল সরাসরি স্ক্যাল্পে অথবা চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষন ভালো করে ম্যাসাজ করে মাথা ধুয়ে নিন. এলোভেরার দুটো পাতা থেকে জেল (Aloe Vera Upokarita) বার করে নিন, এবার অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন, এরপর অল্প ভেজা চুলে লাগিয়ে নিয়ে ১৫-২০ মিনিট উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে রাখুন. এবার উষ্ণ জল দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন. সপ্তাহে একবার এলোভেরার ব্যবহার করলে দেখবেন চুল ঘন, নরম আর সুন্দর হবে.
সারা পৃথিবীতে এলোভেরার ৪০০ রকমের প্রজাতি পাওয়া গেলেও মাত্র ৫ টি প্রজাতিই আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য উপকারী. এলোভেরা একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করা হয়. এলোভেরা (ঘৃতকুমারী) তে অনেক রকমের ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে যা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কার্যকরী. যেমন:
১। মধুমেহ রোগী অর্থাৎ ডায়াবেটিকদের জন্য এলোভেরা খুবই উপকারী.
২। হজম সংক্রান্ত কোনো সমস্যার জন্য এলোভেরা অব্যর্থ ওষুদের মতো কাজ করে.
৩। হারের ব্যাথা থাকলে এলোভেরা (ঘৃতকুমারী) ব্যবহার করতে পারেন, আরাম পাবেন.
৪। এলোভেরা রক্তাল্পতা অর্থাৎ এনিমিয়া দূর করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়.
৫। নিয়মিত এলোভেরা জুস (Aloe Vera Juice Benefits) খেলে শরীরের শক্তি বজায় থাকে,
৬। নিয়মিত এলোভেরা জুস খেলে অতিরিক্ত ওজন কমে.
৭। নিয়মিত এলোভেরা জুস খেলে জন্ডিস প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে.
৮। সকালে উঠে এলোভেরা জুস খেলে পেট পরিষ্কার হয় আর খিদেও পায়.
৯। সকালে খালি পেতে এলোভেরা জুস খেলে ব্যাথার উপশম হয়.
১০। বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ৫ গ্রাম ফ্রেশ এলোভেরা জুসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো.
গরমকালে অনেক সময় এসি থেকে রোদে বা রোদ থেকে এসিতে যাওয়া আসা করলে ত্বকে চুলকানি বা জ্বলুনি হয়. ওই জায়গায় কিছুক্ষন এলোভেরা জেল লাগিয়ে রেখে পড়ে তা ধুয়ে ফেলুন. সাথে সাথে আরাম পাবেন. এছাড়া এলোভেরা জেল স্বাভাবিক ভাবেই এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, তাই ছোটোখাটো ব্যাথা, পুড়ে যাওয়া কিংবা কেটে যাওয়া জায়গায় এবং পোকা কামড়ালে ফার্স্টএইড এর কাজ খুব ভালোভাবে করে.
আপনি হয়তো জেনে আশ্চর্য হবেন যে এতো ভালো গুন থাকে সত্বেও এলোভেরার (Aloe Vera) মধ্যেও কিছু ক্ষতিকর উপাদান আছে. এলোভেরাতে (Aloe Vera Gel) লেকটেসিভ থাকায় অনেকসময় অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। দেখে নিন কিছু এলোভেরার ক্ষতিকর দিক –
১। এলোভেরা (ঘৃতকুমারী) জুস্ খাওয়া শুরু করার আগে একবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন. যদি আপনি কোনো ওষুধ খান, তাহলে সেই ওষুধের সাথে এলোভেরা কোনোরকম প্রতিক্রিয়া করে কিনা, সেটা জেনে নেওয়া জরুরি.
২। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এলোভেরা জুস্ উপকরাই. কিন্তু যেহেতু এলোভেরা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তাই যারা রক্তের নিম্নচাপের সমস্যায় ভোগেন, তাদের এটি না খাওয়াই ভালো.
৩। যাদের হার্টের সমস্যা আছে, তাদের নিয়মিত এলোভেরা জুস্ খাওয়া উচিত না.
৪। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি এলোভেরা খেলে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে.
৫। এলোভেরা জুসে (ঘৃতকুমারী) লেটেক্স থাকে যা আমাদের মাংসপেশি কমজোর করতে পারে. তাই খাবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত.
৬। গর্ভবতী মহিলাদের এলোভেরা জুস্ খাওয়া উচিত না. এলোভেরা জুস্ গর্ভাশয় সংকুচিত করে ফলে গর্ভবতী অবস্থায় এটি খেলে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে.
অ্যালোভেরার উপকারিতা অনেক। বহুকাল ধরেই কাটা ছড়া জ্বলা বা পোকা কামড়ানোর ওষুধ হিসেবে এলোভেরা জেল ব্যবহার করা হয়. ত্বকের কোনো এলার্জি ঠিক করতে এলোভেরার জুড়ি নেই। পতঞ্জলি এলোভেরা জেল এর ব্যবহার করলে আপনি সমস্ত সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। এটি এমন একটি প্রসাধনী, যেটা বাড়িতে রাখা অত্যন্ত জরুরি.
হিমালয়া হার্বাল ময়েশ্চারাইজিং ফেস ওয়াশ শুধুমাত্র ভেতর থেকে আপনার ত্বক পরিষ্কার করে না, লোমকূপ টাইট করতেও সাহায্য করে. এই প্রোডাক্ট শুধুমাত্র আপনার ত্বকের আদ্রতাই বজায় রাখে না, আপনার ত্বককে ময়েসচারাইজও করে.
এই ম্যাসাজ জেল আপনার ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে. এতে মেন্থল থাকে, তাই খুব সামান্য পরিমানে এই জেল নিয়ে ম্যাসাজ করবেন. এই জেল এন্টিসেপটিক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন.
উত্তর: যদি আপনার ত্বক নরম এবং সেনসিটিভ হয় তাহলে আমরা কখনোই আপনাকে সারারাত এলোভেরা লাগিয়ে রাখতে বলবো না. কিন্তু আপনার ত্বক যদি শক্ত হয়, তাহলে আপনি সারারাত লাগিয়ে রাখতে পারেন. তবুও, প্রতিদিন রাতে ইটা করবেন না।
উত্তর: এলোভেরা (ঘৃতকুমারী) জেল তৈলাক্ত ভাব ছাড়াই ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে. আপনার ত্বকের যা রং, সেটা ধরে রাখতে এলোভেরা সাহায্য করে, কিন্তু ফর্সা কখনোই হতে পারে না. এলোভেরা আপনার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সাহায্য করে, কিন্তু এটি ‘স্কিন-হোয়াইটেনিং’ এর কাজ করে না।
উত্তর: যাদের হাত, মুখ বা শরীরের অন্য কোনো অংশে কালো দাগ আছে, এলোভেরা সেগুলি কম করতে সাহায্য করে. এলোভেরা ডার্ক স্পটস বাড়তে দে না এবং স্কিনকে তরতাজা আর উজ্জ্বল করে।