আগামী ৩১ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে অর্জুন দত্ত পরিচালিত ‘অব্যক্ত’। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অর্পিতা (Arpita) চট্টোপাধ্যায় এবং অনুভব কাঞ্জিলাল। মূলত মা (mom)-ছেলের গল্প নিয়ে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন পরিচালক। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্পিতা। ব্যক্তি জীবনে মা তাঁর কতটা জুড়ে রয়েছেন? মায়ের সঙ্গে তাঁর ইকুয়েশন কেমন? একান্ত আলাপচারিতায় শেয়ার করলেন অর্পিতা।
আপনার মায়ের নাম?
এইটা একটা মজার ব্যাপার। নামটা নিয়ে মা খুব অস্বস্তিতে পড়েন। হা হা…। বেবি। আমার মায়ের নাম। কোথাও মানে মিডিয়ায় মায়ের নামটা লেখা হলে মা খুব এমব্যারাস ফিল করেন। আমার ছেলেও ছোটবেলায় এই নামটা শুনে অবাক হত। সাধারণত ছোট বাচ্চাদের আমরা বেবি বলে আদর করি। অথবা প্রেমিক-প্রেমিকারা নিজেদেরকে বলেন। কিন্তু বড় কারও নাম কী করে বেবি হতে পারে, সেটা আমার ছেলে বুঝতে পারত না (হাসি)।
মাকে কীভাবে ব্যখ্যা করবেন?
আমার মা হাউজওয়াইফ। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারে হাউজওয়াইফদের যে ব্র্যাকেটে ফেলা হয়, মা তার থেকে আলাদা ছিলেন বরাবর। গিটার বাজাতে পারতেন। খুব ভাল লিখতেন। ওঁর বইও রয়েছে। কিন্তু কখনও ডিমান্ডিং ছিলেন না। অথচ ওঁর শাড়ি পরা বা কথা বলার মধ্যেই একটা এলিগেন্স ছিল। চারপাশের লোকেরা সেটা পছন্দ করতেন।
আর বাবা?
বাবা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ছিলেন। পড়িয়েছেন অনেক দিন। বাবা পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত সব কিছু ভালবাসতেন। আর মায়ের পছন্দ ছিল পারফর্মিং আর্টস। হয়তো মা নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন আমার মধ্যে দিয়ে পূরণ করতে চেয়েছিলেন। আমার সেটাই মনে হয়। সে কারণেই হয়তো প্রায় জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই আমাকে ক্লাসিক্যাল মিউজিক, নাচ এবং আবৃত্তির তালিম দেওয়া শুরু করেছিলেন।
এর পাশাপাশি পড়াশোনাও চলছিল?
পড়াশোনা চলছিল। কিন্তু অনেক বেশি সময় আর মনোযোগ ছিল পারফর্মিং আর্টসে। মা সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্র্যাকটিস করাতেন। উইকেন্ডে প্রায় সব কম্পিটিশনে আমাকে নিয়ে যেতেন। আর কোথাও আমি ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ডের বাইরে ছিলাম না। অথচ পড়াশোনায় প্রথম দশের মধ্যেও ছিলাম না কখনও। কারণ আমি বোকা ছিলাম, বুদ্ধি ছিল না, তা নয়। নাচ, গান, আবৃত্তি ছাড়া পড়াশোনাটাও যে ভালবাসা যায়, সেই অনুভূতিটাই তৈরি হয়নি। বাবা বলতেন, এত কম পড়েও আমি যে রেজাল্ট করতাম, সেটাই যদি আরও চর্চার সুযোগ পেতাম, তাহলে আরও ভাল হত।
তারপর?
তারপর শুরু হল নাটক আর টেলিভিশনে প্রোগ্রামের জন্য অডিশন। তখন টেলিভিশন মানে শুধু দূরদর্শন। আর রেডিওতে ‘গল্প দাদুর আসর’ বা বিভিন্ন বয়সীদের জন্য নানা রকম প্রোগ্রাম হত। ওখানেও আমি চান্স পেলাম। প্রোগ্রাম করতে শুরু করলাম। আমার ডাকনাম মামন। সকলে জানত, মামন ফুললি অকুপায়েড। মানে, আমার কোনও ফ্রি টাইম ছিল না। আমি কখনও রান্নাবাটি খেলিনি। আমার কাজনদের সঙ্গে খেলার কোনও স্মৃতি নেই আমার। আমার ছোটবেলা মানে, নাচের ক্লাসে যাচ্ছি, গানের প্র্যাকটিস করছি…। ছোটবেলাটা হারিয়ে গিয়েছে, যেটা কখনও আর ফিরে পাব না। সেটার জন্য আজ কোথাও আমি মাকে ব্লেম করি। সেই আক্ষেপটা আর যাবে না।
কিন্তু এ সব তো ভালবেসেই করতেন?
আসলে আমাকে কোনও চয়েস দেওয়া হয়নি। কখনও জানতে চাওয়া হয়নি, আমি যেটা করে যাচ্ছি, সেটা করতে আমার ভাল লাগছে কিনা। আমি অন্য কিছু করতে চাই কিনা। মা বলেছেন, আমি করে গিয়েছি। সাধারণ পরিবারে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের সময় ছেলে-মেয়েরা নাচ, গান এ সব বন্ধ রাখে পড়াশোনার জন্য। আমি একটা দিনের জন্যও বন্ধ করিনি। মা বলতেন, ২৪ ঘণ্টা তো পড়বে না। আর পরীক্ষার জন্য সকালে ব্রাশ করছ না, বা খাচ্ছ না, এমন তো নয়। গানের রেওয়াজটাও তোমার রুটিনের মতো। করতেই হবে। আমি কলেজে যখন পড়ি, তখন তো পুরোদস্তুর অভিনয় করছি। তার আগে মডেলিং। আমার কী কী লাগবে, মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত, সব মা জোগাড় করে দিতেন। আর সেটা জোগাড় করতে মা সব করতে পারতেন। এভাবে সারাক্ষণ আমাকে নিয়েই কেটে যেত মায়ের সময়।
বিয়ে এবং মা হওয়া, মেয়েদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আপনিও ব্যতিক্রম নন। এই সব সময়ে কীভাবে মাকে পেয়েছেন?
বিয়ে বা মা হওয়া, জীবনের এই বড় দুটো সিদ্ধান্তে আমি মাকে পাশে পাইনি। বিয়েটা পুরোপুরি বাড়ির অমতে হয়েছিল। কারণ আমি তখন কেরিয়ারের শীর্ষে। আমার বাড়িতে বিয়ে নিয়ে কোনও আলোচনা হত না। ওঁরা চেয়েছিলেন, আমি কাজে ফোকাস করি। বয়সের অনেকটা ডিফারেন্স, আগে দুটো ডিভোর্স, একটা রিলেশনশিপ নিয়ে গসিপ এমন ছেলেকে জামাই হিসেবে পছন্দ করেননি তাঁরা। সেটাই হয়তো স্বাভাবিক। ফলে সেই যে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম, তারপর আর যাইনি কখনও। বিয়ের পর কয়েক বছর টেনশনটা ছিল। পরে ঠিক হয়ে যায়। ওঁরা এসেছেন, আসেন। আমি কখনও যাইনি আর। বিয়ের আগে পর্যন্ত আমার জীবনে মায়ের কন্ট্রিবিউশন ১০০ শতাংশ ছিল। বিয়ের পর সেটা শূন্য হয়ে গেল।
ছেলে হওয়ার পরও পরিস্থিতি বদলায়নি? আপনার ছেলের সঙ্গে ওঁদের সম্পর্ক কেমন?
ছেলে হওয়ার পরও যে খুব একটা চেঞ্জ হয়েছে, এমন নয়। আর মিশুক অনেক ছোটবেলা থেকে বাইরে পড়াশোনা করছে। ফলে ওর সঙ্গে কোনও আত্মীয়েরই তেমন যোগাযোগ কখনও গড়ে ওঠেনি। ওঁদের সঙ্গেও ব্যপারটা তেমনই।
‘অব্যক্ত’তে অভিনয় করার সময় আপনার মা বা মা হিসেবে আপনি, কোনও সত্ত্বার প্রভাব ছিল?
আমি খুব ভাল অবজার্ভার। বহু মানুষকে খুঁটিয়ে দেখার অভ্যেস রয়েছে আমার। সেটা কোথাও মাথার ভিতর ব্যাঙ্ক হতে থাকে। যে কোনও চরিত্রের গ্রাফ করার সময় সেই ব্যাঙ্ক থেকে সেই চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো নিতে থাকি। ‘অব্যক্ত’র ক্ষেত্রেও তাই। বাস্তব জীবনে দেখা চরিত্রদের প্রতিফলন থাকেই আমার অভিনয়ে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আমাদের এক্কেবারে নতুন POPxo Zodiac Collection মিস করবেন না যেন! এতে আছে নতুন সব নোটবুক, ফোন কভার এবং কফি মাগ, যেগুলো দারুণ ঝকঝকে তো বটেই, আর একেবারে আপনার কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে। হুমম…আরও একটা এক্সাইটিং ব্যাপার হল, এখন আপনি পাবেন ২০% বাড়তি ছাড়ও। দেরি কীসের, এখনই POPxo.com/shopzodiac-এ যান আর আপনার এই বছরটা POPup করে ফেলুন!