মেকআপ করার সময়ে চোখের মেকআপ টা যাতে ঠিকঠাক হয় তার জন্য আমরা মেয়েরা অনেকটাই সময় ব্যয় করি, সাথে পরিশ্রমও। বিয়ে বাড়ি হোক বা বন্ধুদের সাথে শপিং অথবা নিছকই অফিস বা কলেজ যাবার সময়ে পরিপাটি করে চোখের মেকআপ (Eye Makeup) করি বা না করি, আইলাইনার কিন্তু আমরা কেউই লাগাতে ভুলি না। কবি যতই ‘কালো টানা টানা চোখ’- এর কথা বলে থাকুক না কেন, স্টাইলের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা কেউই শুধুমাত্র ওই একটি রঙে আটকে রাখিনি নিজেদের। কালো বাদ দিয়েও অন্যান্য রঙ যেমন টারকোইশ, সি গ্রিন, নিয়ন গ্রিন, ডার্ক ব্লু, সাদা, ব্রাউন নানা রঙের আইলাইনার দিয়ে আমরা এক্সপেরিমেন্ট করেই যাই। আর শুধু কি রঙ? নানা স্টাইলও আছে আইলাইনার (Eyeliner Styles) লাগানোর। সব বলব, কিন্তু তার আগে একটু জেনে নি যে আপনার জন্য কোন আইলাইনারটা পারফেক্ট-
আগেই বলেছি যে নানা রঙের, নানা রকমের এবং নানা স্টাইলের আইলাইনার (Eyeliner Styles) পাওয়া যায় বাজারে। কিন্তু আপনার চোখের জন্য কোনটা বেস্ট সেটা এবারে বলব। তবে তার আগে জানতে হবে যে আইলাইনার ঠিক কতো রকমের স্টাইলে আপনি লাগাতে পারেন।
এখানে বেশ কয়েক রকমের স্টাইলের কথা বলা হল, আপনার পছন্দমতো স্টাইলে আপনি আইলাইনার লাগাতে পারেন –
এই ধরণের আইলাইনার স্টাইলটি (Eyeliner Styles) সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। আইলিডের ওপরে একদম চোখের ওপরের পাতা ঘেঁসে লাগাতে হবে আইলাইনার। এমনভাবে আইলাইনার (Eyeliner) লাগাতে হবে যাতে ঠিক বোঝা না যায় যে আপনি আইলাইনার লাগিয়েছেন নাকি লাগাননি। অর্থাৎ ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস’ ব্যাপার আর কি! এই স্টাইলটি করার জন্য আপনি পেন্সিল অথবা জেল আইলাইনার ব্যবহার করলে সুবিধে হবে। একদম সরু করে চোখের ওপরের পাতা ঘেঁসে আইলাইনার টানুন, ইনার কর্নার থেকে লাইন টানবেন না।
আমরা সবাই এই স্টাইলটি (Classic Eyeliner) ট্রাই করেছি। যে কোনও এক ধরণের আইলাইনার (Eyeliner) নিয়ে চোখের ইনার কর্নার থেকে আরম্ভ করে আউটার কর্নার পর্যন্ত লাইন টানুন। সরু বা চওড়া – সেটা আপনার পছন্দের ওপরে নির্ভর করছে। তবে লাইন টানার সময়ে খেয়াল রাখবেন ইনার কর্নারে লাইন যেন সরু থাকে আর যত আউটার কর্নারের দিকে যাবেন, লাইন ততো চওড়া হবে।
উইংড আইলানার স্টাইলও (Eyeliner Styles) আমরা সবাই পছন্দ করি। দেখতে দারুণ স্মার্ট আর স্টাইলিশ লাগে এই স্টাইলে। তবে হ্যাঁ এটাও ঠিক যে উইংড আইলাইনার লাগানোর জন্য কিন্তু অনেক প্র্যাক্টিস দরকার। প্রথমে চোখের আউটার কর্নারে একটা সরু লাইন টানুন, একটু বাইরের দিকে করে টানবেন; এবারে ভেতরের দিকে অর্থাৎ ইনার কর্নারের দিকে ধীরে ধীরে খুব সাবধানে ভরাট করুন। আপনি সরু করেও উইংড আইলাইনার (Winged Eyeliner) লাগাতে পারেন আবার মোটা করেও।
ড্রামাটিক আইজ (Dramatic Eyes) পছন্দ? তাহলে এই অ্যারাবিক আইলাইনার (Arabic Eyeliner) স্টাইলটি আপনি ট্রাই করতেই পারেন। এই ধরণের স্টাইল করার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় যদি লিক্যুইড বা জেল আইলাইনার ব্যবহার করেন। বলতে পারেন এটা উইংড এবং ক্লাসিক – এই দুটো স্টাইলের একটা কম্বিনেশন। এই স্টাইলটি করতে গেলে প্রথমে ইনার কর্নারে একটু মোটা করে লাইন টানুন, নাকের কাছে ঘেঁসে; এবারে ধীরে ধীরে বাইরের দিকে লাইনটি নিয়ে আসুন এবং আউটার কর্নারের থেকে একটু বাইরে পর্যন্ত নিয়ে যান। চোখের নিচের পাতাতেও একইভাবে আইলাইনার (Eyeliner) লাগান।
আইলাইনার (Eyeliner) লাগাতে গিয়ে অনেকসময়েই একটু ধেবড়ে যায়, কুছ পরোয়া নেহি, একটু স্মাজ করে নিন। বেশ একটা স্মোকি এফেক্ট আসবে, আর দেখতেও খুব ভালো লাগবে। তবে আপনি যদি এমনিতেই স্মোকি এফেক্ট (Smokey Eyeliner) আনতে চান তাহলে জেল আইলাইনার দিয়ে চোখের ওপরের পাতায় একটু চওড়া করে লাইন টেনে বাইরের দিকটা স্মাজ করে নিন। নিচের পাতাতেও কিন্তু করতে ভুলবেন না।
সেই এক কালো আইলাইনার (Eyeliner Styles) লাগিয়ে বোর হয়ে গেছেন? তাহলে অন্য রঙ কিন্তু ট্রাই করতেই পারেন। ব্লু বা সবুজ রঙ বেশ ভালো লাগবে। যদি আপনি বুঝে উঠতে না পারেন যে কোন রঙটা লাগালে আপনাকে আরও বেশি সুন্দর লাগবে, তাহলে টারকোয়াইশ ব্লু লাগান। এই রঙ সব কমপ্লেকশনের সাথেই বেশ ভালো যায়।
পার্টি সিজনে কিন্তু আইলাইনারের এই স্টাইল (Eyeliner Styles) একদম হিট! আপনি নিজের আউটফিটের সাথে ম্যাচ করে অথবা কনট্রাস্ট করে গ্লিটারি আইলাইনার লাগাতে পারেন। সাথে আইশ্যাডো লাগাতে ভুলবেন না। চাইলে গ্লিটারি মাস্কারাও লাগাতে পারেন। তবে ওপরের এবং নিচের পাতায় লাগাবেন, যেকোনো একটায় লাগাবেন না।
এতক্ষন তো নানা রকমের আইলাইনারের স্টাইলের (Eyeliner Styles) কথা বললাম। কিন্তু আপনি কি জানেন যে আপনার মুখের আকার কীরকম, তার ওপরেও নির্ভর করে যে কোন স্টাইলটা আপনাকে বেশি মানাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক –
যদি আপনার মুখ গোলাকার (Round Face) হয় তাহলে স্মোকি আইলাইনার স্টাইল (Smokey Eyeliner Style) আপনাকে সবথেকে বেশি ভালো লাগবে।
যাঁদের মুখ ডিম্বাকৃতি অর্থাৎ ওভাল শেপের (Oval Face), তাঁদেরকে ইনভিসিবল আইলাইনার স্টাইল (Invisible Eyeliner Style) দারুণ মানায়।
চৌকো শেপের মুখের (Square Face) মেয়েরা স্মাজি স্টাইল ট্রাই করতে পারেন। যেহেতু চৌকো শেপের মুখে বাকি ফিচারগুলো খুব শার্প হয় সেজন্য চোখটা একটু স্মাজড হলে ব্যাল্যান্সটা ঠিক হয়ে যায়।
যাঁদের কপাল চওড়া এবং চিবুক সরু, সেই ধরণের আকারকে বলা হয় অবলং (Oblong Face)। এই ধরণের মুখের শেপে ক্যাট আই বা উইংড – এই দুটো স্টাইল সবথেকে বেশি মানায়।
নানা Eyeliner Style সম্বন্ধে বললাম, কোন আকারের মুখে কেমন স্টাইল মানায় সেটাও বললাম, কিন্তু কতো রকমের আইলাইনার (Eyeliner Types) বাজারে পাওয়া যায় সেটা তো বললাম না! বাজারে পেন্সিল, লিক্যুইড, জেল ইত্যাদি নানা ধরণের আইলাইনার পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করার কিছু সুবিধে আছে আবার কিছু অসুবিধেও আছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন ধরণের আইলাইনার আপনার জন্য ভালো –
বাজারচলতি আইলাইনারগুলোর মধ্যে পেন্সিল আইলাইনার (Eyeliner Pencil) সবচেয়ে জনপ্রিয়। পাড়ার দোকান থেকে আরম্ভ করে মলের দোকান – সব জায়গাতেই আপনি এটি পেয়ে যাবেন। যদি আইলাইনার লাগানোর সময়ে আপনার হাত কাঁপে কিংবা সোজা লাইন টানার ক্ষেত্রে আপনি খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন, তাহলে আপনার জন্য পেন্সিল আইলাইনার বেস্ট। সাধারণত পেন্সিল আইলাইনার (Eyeliner Pencil) তিন রকমের হয় – পেন্সিলের মতো দেখতে যেগুলো শার্পনার দিয়ে কাটা যায়, টুইস্ট করে বার করার মতো আর ক্রেয়ন স্টিকের মতো।
নেলপলিশের শিশির মতো দেখতে কাঁচের শিশিতে কালো রঙের একটা তরল পাওয়া যেত আমাদের ছোটবেলায়। খুব সম্ভবত ওটাই আমাদের অনেকের প্রথম আইলাইনার (Eyeliner)। ওই তরলটাই লিক্যুইড আইলাইনার (Liquid Eyeliner)। লিক্যুইড আইলাইনারের যেমন বেশ কিছু সুবিধে আছে, তেমনি বেশ কিছু অসুবিধেও কিন্তু আছে। যখনি লিক্যুইড আইলাইনার কিনবেন ব্রাশের টিপটা দেখে নেবেন। অনেকসময়েই ব্রাশটা ছড়ানো হয় ফলে যখন আই মেকআপ করার সময়ে লাইন টানতে যাওয়া হয় তখন ব্যাপারটা ধেবড়ে যায়। যদি আইলাইনার লাগানোর সময়ে আপনার হাত কাঁপে তাহলে লিক্যুইড আইলাইনার (Liquid Eyeliner) ব্যবহার না করাই ভালো।
ঠিক যেরকম দোয়াতে পেন ডুবিয়ে লেখা হতো, এই আইলাইনারটি সেরকমই। বলা যেতে পারে লিক্যুইড লাইনারের আরও উন্নত সংস্করন হল টিপ আইলাইনার (Eyeliner Tip)। তবে এর গ্রিপ অনেক বেশি মজবুত এবং এই ধরণের আইলাইনার ব্যবহার করা অনেকটাই সহজ। এই আইলাইনারের ব্রাশ নানা আকার এবং মাপের হয়। নিজের চোখের মাপ অনুযায়ী কিনে নিলেই হল। যদি আপনার বড় বড় চোখ হয় তাহলে লম্বা ব্রাশওয়ালা আইলাইনার (Eyeliner) কিনুন আর ছোট চোখ হলে ছোট ব্রাশওয়ালা।
জেল আইলাইনার (Gel Eyeliner) সাধারণত ছোট ডিব্বা করে পাওয়া যায়। মিশকালো কাজলের মতো দেখতে হয় প্রোডাক্টটি। এর সাথে সরু টিপওয়ালা একটা ব্রাশও দেওয়া হয় যাতে ফাইনলাইন টানতে সুবিধে হয়। প্রোডাক্টটি মোমের মতো দেখতে হয়। যারা মেকআপ করতে ভালোবাসেন, তাঁরা বেশিভাগ সময়েই জেল আইলাইনার (Eyeliner) দিয়ে চোখের মেকআপ (Eye Makeup) করে থাকেন। যেহেতু এটি একটি সলিড প্রোডাক্ট এবং ব্রাশ দিয়ে লাইন টানতে সুবিধে হয়, সেজন্য বেশিরব্বহাগ সময়েই জেল আইলাইনার পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে।
কতো ধরণের আইলাইনার হয়, কি কি রকমভাবে আইলাইনার (Eyeliner Styles) দিয়ে চোখের মেকআপ (Eye Makeup) করা যায়, কোন আইলাইনার ব্যবহার করার কি সুবিধে এবং কি অসুবিধে, মোটামুটি সবই তো জানলেন, কিন্তু কোথা থেকে সেই আইলাইনারগুলো কিনবেন অথবা কোন ব্র্যান্ডের আইলাইনার ভালো, সেটাও তো জানতে হবে নাকি? চলুন দেখে নি কোন ব্র্যান্ডের আইনারগুলো ভালো (Best Eyeliner) আর কোথায় পাবেন সেগুলো –
যদি আপনি পেন্সিল আইলাইনার ব্যবহার করতে বেশি স্বচ্ছন্দ হন তাহলে এই আইলাইনারগুলো কিনতে পারেন –
ওয়েট অ্যান্ড ওয়াইল্ড কালার আইকন কোল লাইনার পেন্সিল
দাম পড়বে – ১৩৫ টাকার মধ্যে
দাম পড়বে – ১৫৫ টাকার মধ্যে
নাইকা গ্ল্যামারাইজ আইলাইনার পেন্সিল
দাম পড়বে – ৪০৫ টাকার মধ্যে
যদি আপনি লিক্যুইড আইলাইনার ব্যবহার করতে বেশি স্বচ্ছন্দ হন তাহলে এই আইলাইনারগুলো কিনতে পারেন –
দাম পড়বে – ১৩৫ টাকার মধ্যে
লোটাস হারবালস অপ্যুলেন্স বোটানিক্যাল আইলাইনার
দাম পড়বে – ১৮৮ টাকার মধ্যে
মেবিলিন নিউ ইয়র্ক হাইপার ইঙ্ক লিক্যুইড লাইনার
দাম পড়বে – ৩১৯ টাকার মধ্যে
যদি আপনি লিক্যুইড আইলাইনার ব্যবহার করতে বেশি স্বচ্ছন্দ হন তাহলে এই আইলাইনারগুলো কিনতে পারেন –
মেবিলিন নিউ ইয়র্ক আই স্টুডিও লাস্টিং ড্রামা জেল আইলাইনার
দাম পড়বে – ৩৭৫ টাকার মধ্যে
ববি ব্রাউন লং ওয়্যার জেল আইলাইনার
দাম পড়বে – ১৫০০ টাকার মধ্যে
ম্যাক প্রো লং ওয়্যার ফ্লুইডলাইন
দাম পড়বে – ১৫৫০ টাকার মধ্যে
যদি আপনি লিক্যুইড আইলাইনার ব্যবহার করতে বেশি স্বচ্ছন্দ হন তাহলে এই আইলাইনারগুলো কিনতে পারেন –
লরিয়াল প্যারিস ইনফ্যালিবল পেইন্টস আইলাইনার
দাম পড়বে – ৪১৫ টাকার মধ্যে
ল্যাকমে আইকনিক লাইনার পেন ফাইন টিপ
দাম পড়বে – ৩৫৬ টাকার মধ্যে
মেবিলিন নিউ ইয়র্ক কোলোসেল লাইনার
দাম পড়বে – ৩০০ টাকার মধ্যে
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!