কলেজে পড়ার সময় যখনই বন্ধুরা মিলে কোনওদিন সিনেমা দেখতে যেতাম বা কোনও নতুন রেস্তোরাঁয় খেতে যেতাম, একমাত্র পিয়ালি আমাদের সঙ্গে যেতে চাইত না। আমরা একটু বিরক্তই হতাম ওর উপরে। এরকম হতে-হতে শেষের দিকে যখন আবার বন্ধুরা মিলে কোনও প্ল্যান হত, ওকে বাদ দিয়েই করতাম। খারাপ লাগত মেয়েটার জন্য। কিন্তু এটা শুনতেও অবাক লাগত যে, ওর মা-বাবা নাকি ওকে অনুমতি দেবেন না বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও যাওয়ার জন্য! ঠিক সময় কলেজ থেকে বাড়ি ফিরতে হবে, শনি-রবিবারেও বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও ঘোরাঘুরি করা যাবে না, এমনকী, আমরা কোনওদিন ওর বাড়ি গেলে কাকিমা বসে থাকতেন আমাদের মাঝখানে! ভারী অস্বস্তি হত। কাকিমার বক্তব্য ছিল, মেয়ে কেমন লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করে, সেটা তো খেয়াল রাখতেই হবে! বেচারি পিয়ালি, কোনওদিনই নিজের কোনও সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেনি!
একটা বয়সের পর যে সন্তানকে কিছু-কিছু ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হয়, সেই ব্যাপারটি বেশিরভাগ মা-বাবাই ভুলে যান অথবা বুঝে উঠতে পারেন না। কিন্তু এর ফলে সন্তানের মনের উপরে যে কতটা চাপ পড়ে…তবে ঝগড়া করে নয়, রাগ করে নয়, ‘ওভার প্রোটেক্টিভ’ বাবা-মা-এর (Over Protective Parents) সঙ্গে কীভাবে ডিল করবেন, সেটাই আজ বলে দেব।
আরও পড়ুনঃ পরিবার ও বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা কিছু বিশেষ উক্তি
১। শান্তভাবে, কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের বক্তব্য রাখুন
মা-বাবা কিন্তু সবসময়েই তাঁদের সন্তানের ভাল চান। কাজেই তাঁরা যদি কিছু বলেন, তা ভালর জন্যই বলছেন। তবুও তাঁদের কোনও সিদ্ধান্ত যদি মেনে নিতে সমস্যা হয়, তা হলে সেটা তাঁদের শান্তভাবে বুঝিয়ে বলাটাই উচিত। তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝবেন। ঝগড়া করে বা অশান্তি করে বললে কিন্তু উলটো ফল হতে পারে।
মা কে না বলা কথা – আমরা সবাই হয়তো এই কথাগুলো মা কে বলতে চাই
২। মনে কী চলছে, সেটা তাঁদের জানা দরকার
সব বন্ধুরা একসঙ্গে আড্ডা দিতে গেছেন কোনও কাফেতে, কিন্তু ওভার প্রোটেক্টিভ মা-বাবার জন্য আপনি যাননি। তাতে খারাপ লেগেছে, কষ্ট হয়েছে; সেকথা ওঁদের জানাটা প্রয়োজন। মা-বাবা আপনাকে বুঝতে পারেননি বলে আপনিও রাগ করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন না, সেটা করলে কিন্তু আপনারই সমস্যা!
৩। মা-বাবার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখাটা কিন্তু সন্তানের দায়িত্ব
অনেকসময় মা-বাবা আমাদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেন, কিন্তু আমরা অনেক সময়েই সেই স্বাধীনতার অপপ্রয়োগ করি। কি, এমনটা হয়েছে তো কোনও না-কোনও সময়? খুব সম্ভবত সেই কারণেই মা-বাবা এখন আর বিশ্বাস করতে পারেন না। মা-বাবা বিশ্বাস করে যে স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছেন, সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার দায়িত্বও কিন্তু আমাদেরই, এটা মনে রাখতে হবে।
৪। মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটানো উচিত
বন্ধুদের সঙ্গে বা বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে তো অনেকটাই সময় কাটাই আমরা। কখনও-কখনও যদি বাবা-মা-এর সঙ্গেও সময় কাটাই, তাতে ক্ষতি কিছু আছে কি? নাঃ, বরং লাভ আছে! তাতে তিনজনের মধ্যে সম্পর্কটা আরও বেশি দৃঢ় হবে, আপনিও তোমার মা-বাবার মনের কথা বুঝতে পারবেন, আর মা-বাবাও আপনাকে বুঝতে পারবেন।
৫। বন্ধুদের সঙ্গেও মা-বাবার বন্ধুত্ব করিয়ে দাও
মাঝে-মধ্যে বন্ধুদের বাড়িতে ডাকুন। সেসময় বাবা-মা-এর সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিন। হতে পারে, বাবা-মা খুব সহজেই মিশে গেলেন তাঁদের সঙ্গে!
ছবি সৌজন্য: ইউটিউব
গ্রাফিক্স সৌজন্য: Giphy
POPxo এখন ৬টা ভাষায়। ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলায়!