হিসেব করে দেখুন, আজ থেকে ঠিক একশো দিন পরে মা আসবেন তাঁর বাপের বাড়ি। এই যে মা আসছে-আসছে, এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু এক আজব আনন্দে মনটা কেমন লাফিয়ে ওঠে! মোটের উপরে শুরু হয়ে যায় প্ল্যানিংও। কোন-কোন দুর্গাপুজো প্যান্ডেল দেখা হবে, হোল নাইট যেদিন বেরনো হবে, সেদিন উত্তরে ঢুঁ মারা হবে, না দক্ষিণ কলকাতা চষে ফেলা হবে, সেই নিয়ে চায়ের আড্ডাও জমে ওঠে। সঙ্গে শপিং লিস্টও তো ফাইনাল করতে হবে! সব মিলিয়ে মায়ের এই আগমন বার্তা আমাদের এই ‘থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়’-এর বোরিং জীবনে হঠাৎ করে খুশির আমেজ নিয়ে আসে। চলুন না, সেই খুশির আমেজ তারিয়ে-তারিয়ে অনুভব করতে-করতে আজই কলকাতার সেরা প্যান্ডেল গুলির (Kolkata Durga Puja Pandals In Bengali) একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলা যাক। ভাবছেন, কোন মণ্ডপকে রাখবেন, আর কোনওটাকে বাদ দেবেন? জেনে নিন আমাদের কাছ থেকে। এরপর এই তালিকা নিয়ে চায়ের কাপে তুফান উঠুক, আলোচনা চলুক ১০০ দিন ধরে! তবেই না ফাইনাল লিস্ট তৈরি হবে!
Table of Contents
অকালেই হয়ে চলেছে দেবীর আরাধনা (The History of Durga Puja)
আমরা ভুল সময়ে দেবীর পুজো করে থাকি। মা দুর্গার আর-এক নাম বাসন্তী কেন জানেন? কারণ শাস্ত্র মতে বসন্ত কালে মায়ের পুজো হওয়ার কথা। কিন্তু গন্ডগোলটা বাঁধিয়ে ফেলেন শ্রী রাম। কৃত্তিবাসের রামায়ণ অনুসারে রাক্ষস রাজ রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে মা দুর্গার পুজো করেছিলেন শ্রী রাম। তখন ছিল শরত্কাল। পুরাণ মতে, কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙার পরে রামচন্দ্রের অমঙ্গল আশঙ্কায় দেবতারা চিন্তিত হয়ে পরেন। সে সময় ব্রহ্মার উপদেশে দুর্গা পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন রাম। কিন্তু শরত্কাল হল দেবতাদের ঘুমের সময়। তাহলে দেবীর আগমণ হবে কীভাবে? উপায় বাৎলালেন স্বয়ং ব্রহ্মাই। তাঁর স্তব-স্তুতিতে জাগ্রত হলেন দেবী মহামায়া। তিনি মাকে অনুরোধ করলেন যতদিন না রাবণ বধ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তিনি যেন তাঁর পুজো করার অনুমতি দেন। এর পর থেকে মর্ত্যবাসীরাও ওই সময়েই মায়ের পুজো করবেন বলেও জানান। সেই শুরু। তার পর থেকেই নাকি বসন্ত কালের পরিবর্তে শরৎ কালে, অর্থাৎ আশ্বিন মাসে মায়ের আরাধনা হয়ে আসছে।
বারোয়ারি দুর্গা পুজোর সূত্রপাত কবে থেকে? (The Origin of Barowari Durga Puja)
বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় এক সময় দুর্গা পুজো হত শুধু জমিদার বাড়িতে। সে সময় বারোয়ারি দুর্গা পুজোর চল ছিল না। ইতিহাস বিদদের মতে দেবীর পুজো শুরু হয় সম্ভবত ১৫০০ শতকের শেষ দিকে। মালদার জমিদার স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরেই নাকি পারিবারিক ভাবে দুর্গা পুজো শুরু করেন। যদিও আরেকটি সূত্র অনুসারে, নদীয়ার ভবানন্দ মজুমদার বাংলায় প্রথম দুর্গা পুজোর আয়োজন করেছিলেন। এরপরে তাঁদের দেখাদেখি বাংলার অন্যান্য জমিদার বাড়িতেও ধুমধাম করে শুরু হয় শারদ উৎসব উদযাপন। কিন্তু মা কেন শুধুমাত্র বড়লোকদের বাড়ির চার দেওয়াল আটকে থাকবেন। তিনি তো গরিবেরও মা। এই ভাবনা থেকেই বারো জন বন্ধু মিলে শুরু করেন দুর্গা পুজো। সেই থেকেই বারোয়ারি দুর্গা পুজোর চল শুরু হয়। শোনা যায়, ১৭৯০ সালে প্রথম বারোয়ারি দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যদিকে, কলকাতায় প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে বারোয়ারি পুজোর সূত্রপাত হয় ১৯১০ সালে। জনসাধারণের সাহায্য়ে কলকাতার প্রথম বারোয়ারি দুর্গা পুজো নাকি অনুষ্ঠিত হয় বাগবাজারে। তারপর থেকে কলকাতাসহ গোটা বাংলার পাড়ায়-পাড়ায় শুরু হয় দুর্গাপুজো। যদিও আজ থিমের পুজোর চাকচিক্য বাঙালির এই উৎসব অনেকটাই তার আদি রূপকে হারাতে বসেছে। তবে দুর্গা পুজোর আমেজটা কিন্তু একই থেকে গেছে।
শহর কলকাতার (Kolkata) প্রায় প্রতিটা অলি-গলিতেই মায়ের পুজোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেরার সেরা মণ্ডপের কথা যদি বলেন, তা হলে সেগুলি হল…
১| বাগবাজার ( Baghbazar Durga Puja Pandal)
সেই প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই পুজো মণ্ডপের রূপ একটুও বদলায়নি। এমনকী, থিম পুজোর রমরমাতেও বাগবাজার তার ইতিহাসকে ধরে রেখেছে। তাই তো আজও মা এখানে বিরাজ করেন সনাতনী রূপে। ডাকের সাজে মায়ের বেশ সত্যিই নজরকাড়া। বাগবাজারের পুজোর আর একটা আকর্ষণ হল সিঁদুর খেলা। দশমীর দিন কলকাতার নানা প্রান্ত থেকে মহিলারা এসে ভিড় জমান এখানে। সিঁদুরের লাল রঙে ভরে ওঠে আকাশ-বাতাস। তাই তো বলি, সনাতনী দুর্গা পুজোর প্রকৃত রূপ চাক্ষুস করতে ষষ্ঠী এবং দশমীর দিন বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো মণ্ডপে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না যেন!
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): শ্যামবাজার।
২| কুমারটুলি পার্ক (Kumartuli Park Durga Puja)
কলকাতার সেরার সেরা দুর্গা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম কুমারটুলি পার্ক। কারণ, থিম পুজোকে এরা যে মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে, তা অকল্পনীয়। প্রতি বছরই নতুন নতুন চমক নিয়ে হাজির হন কুমারটুলি পার্কের উদ্যোক্তারা। আর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, যাঁরা অন্য পুজোর প্রতিমা তৈরি করেন, সেই মৃৎশিল্পীরাই এই পুজোর আসল কারিগর! ফলে বুঝতেই পারছেন, প্রতি বছর কেন এই পুজোমণ্ডপ (pandals) সকলের নজর টানে! তাই উত্তর কলকাতার পুজো যেদিন দেখতে যাবেন, সেদিন বাগবাজারের পরে কুমারটুলি পার্কের পুজো মণ্ডপে আসতে ভুলবেন না যেন!
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): শোভাবাজার
৩| কলেজ স্কয়ার (College Square Sarbojonin Durgotsob)
উত্তর কলকাতার আরেক নামী পুজো হল কলেজ স্কোয়্যার। ১৯৪৮ সাল থেকে এখানে পুজো শুরু হয়। এদের মণ্ডপ তেমন একটা নজরকাড়া না হলেও লাইটিং হয় দেখার মতো। পুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই মণ্ডপ সহ কলেজ স্ট্রিট এবং সূর্য সেন স্ট্রিটে জ্বলে ওঠে নানা বাহারি আলো। আর সেই আলো এবং মণ্ডপের প্রতিফলন যখন কলেজ স্কোয়্যারের সুইমিং পুলে পরে, তখন তা দেখার মতো হয়। তাই তো এখনকার পরিবেশ এবং লাইটিং দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান এই পুজো মণ্ডবে। এবছর আপনিও যেন মিস করবেন না!
নিকতটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): সেন্ট্রাল। তবে এম জি রোড মেট্রো স্টেশন থেকেও এই পুজো মণ্ডপ বেশি দূরে নয়।
৪| মহম্মদ আলি পার্ক (Mohammad Ali Park Durga Puja)
থিম পুজোর লিস্টে এই পুজো মণ্ডপ একেবারে উপরের দিকে থাকবে। কারণ প্রতি বছরই এদের থিম হয় নজরকাড়া। যেমন, গত বছর পদ্মাবত সিনেমায় যে দূর্গ দেখানো হয়েছিল, তার অনুকরণে পুজে মণ্ডপ তৈরি করেছিলেন এরা, যা সত্য়ি দেখার মতো হয়েছিল। তাই তো সকাল হোক রাত, মহম্মদ আলি পার্কের পুজোয় ভিড় কখনও পাতলা হয় না। এ বছর এদের থিম কি, তা এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। কিন্তু সেটা যে বাকি বছরগুলির মতোই নজরকাড়া হবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই উত্তর কলকাতার প্রথম সারির পুজো মণ্ডপগুলির লিস্টে মহম্মদ আলি পার্কের নাম ঢোকাতে ভুলবেন না।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): সেন্ট্রাল। এই প্যান্ডেল থেকে কলেজ স্কোয়্যারের দূরত্বও বেশি নয়। তাই কলেজ স্কোয়্যার দেখার পরে একবার ঢুঁ মারতেই পারেন মহম্মদ আলি পার্কে।
৫| সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার (Santosh Mitra Square)
গত বছর এদের থিম ছিল রূপোর রথ, যা দেখতে কলকাতাসহ নানা জেলা থেকে হাজার-হাজার মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছিল এই পুজো মণ্ডপে। কিছু-কিছু দিন এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে তবে প্যান্ডেলে ঢোকার সুযোগ মিলেছিল। গত বছর এমন ‘হিট’ হওয়ার পর আশা করা যেতেই পারে এই বছরেও এদের থিম বেশ হটকেই হবে। তাই মহম্মদ আলি পর্কের পরে সোজা চলে আসতে হবে এই পুজো মণ্ডপে।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): সেন্ট্রাল। শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন থেকেও এই পুজো মণ্ডপের দূরত্ব বেশি নয়।
৬| দমদম পার্ক তরুণ দল (Dum Dum Park Tarun Dal)
দমদম পার্ক এলাকার প্রায় প্রতিটি পুজোই বেশ জনপ্রিয়। তবে তরুণ দলের নাম না নিলেই নয়। কারণ প্রতি বছরই এরা চেনা ছকের বাইরে গিয়ে মণ্ডপ তৈরি করে থাকেন। যেমন গত বছর এদের থিম ছিল ‘আবাহন’। ছোটদের আঁকা ছবি। তাদের খুঁনসুটি। এই সবই ছিল থিমের অঙ্গ। সঙ্গে ছিল ফোমের কাজ এবং বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের ভাস্কর্য। সব মিলিয়ে নানা রঙয়ের বাহারে মণ্ডপ হয়ে উঠছিল আস্ত এক রঙের প্যালেট। এ বছরও যে তরুণ দল, থিমের যুদ্ধে পিছিয়ে থাকবে না, তা তো বলাই বাহুল্য। তাই এই পুজো প্যান্ডেল মিস করা মটেই চলবে না।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): বেলগাছিয়া
৭| আহিরীটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি (Ahiritola Sarbojanin Durgotsab)
উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই পুজো মণ্ডপের নাম। এক সময় সাবেকি ধাঁচে পুজো হলেও এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আহিরীটোলা পূজা মণ্ডপেও লেগেছে ছিমের ছোঁওয়া। গত বছর এদের থিম ছিল ভগ্নপ্রায় বনেদি বাড়ি। আলোকসজ্জাও ছিল নজরকাড়া। তাই উত্তর কলকাতার সেরা পুজো প্যান্ডেলগুলির লিস্টে আহিরীটোলার নাম ঢোকাতে ভুলবেন না যেন!
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): শোভাবাজার সুতানুটি।
৮| লেক টাউন অধিবাসীবৃন্দ (Lake Town Adhibasi Brindo)
১৯৬৩ সাল থেকে এরা দুর্গা পুজোর আয়োজন করে আসছে। শহর কলকাতার বেশিরভাগ নামী পুজো যেখানে থিমভিত্তিক হয়ে গেছে, সেখানে আজও এরা বাংলার পুরানো ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। তাই তো এদের পুজোয় রয়েছে ঘরোয়া ছোঁওয়া। তাই থিম পুজো দেখতে-দেখতে যদি ক্লান্ত হয়ে পরেন, তা হলে লেক টাউন অধিবাসীবৃন্দের পুজোর আসতে ভুলবেন না যেন!
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): বেলগাছিয়া।
৯| তেলেঙ্গা বাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব (Telengabagan Sarbojanin Durgotsab)
প্রতি বছরই এদের থিম এতটাই চমকদার হয় যে, নানা বিভাগে একাধিক পুরস্কারে ভূষিত করা হয় এই পুজো মণ্ডপকে। গত বছরেও এর অন্যথা হয়নি। তাই নতুন জুতো পরে পায়ে যতই ফোস্কা পরুক না কেন, তেলেঙ্গাবাগানে হাজিরা মাস্ট!
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): বেলগাছিয়া
১০| শ্রীভূমি স্পোটিং ক্লাব (Sreebhumi Sporting Club)
সল্টলেক অঞ্চলের অন্যতম ‘বিগ বাজেট’ পুজো হল এটি। প্রতি বছরই এদের পুজোয় কিছু না কিছু চমক থাকে। কোনও বছর থিমের চমক, তো কোনও বছর দুর্গা প্রতিমার গায়ে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকার হিরের গয়না পরিয়ে তাক লাগিয়ে দেন শ্রীভূমির পুজো উদ্যোক্তারা। এ বছরেও যে তারা নতুন চমক দিতে তৈরি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই উত্তর কলকাতার পুজো পরিক্রমা শ্রীভূমিক স্পোটিং ক্লাবে এসে শেষ করতে ভুলবেন না যেন!
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশন থেকে এই পুজো মণ্ডপের দূরত্ব কম-বেশি তিন কিলোমিটার।
১১| বাদামতলা আষাঢ় সংঘ (Badamtala Ashar Sangha)
দক্ষিণ কলকাতার সেরা পুজো মণ্ডপগুলির তালিকায় একেবারে উপরের দিকে থাকবে এই প্যান্ডেলের নাম। কারণ গত ৭৫ বছর ধরে এরা সুনামের সঙ্গে পুজো করে চলেছে। ১৯৯৯ সালে প্রথম এরা থিম পুজো করে। তারপর থেকে এই পুজো মণ্ডপের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। এর মূল কারণ এদের শিল্প ভবনা। প্রতি বছরই এদের প্যান্ডেলে নতুনত্বের ছোঁয়া থাকে। যেমন গত বছর এদের থিম ছিল ‘সব চরিত্র কল্পনিক’। আজকের সমাজে মেয়েরা যেমন উন্নতির শিখরে উঠছেন, তেমনি অত্যাচারিতও হচ্ছেন অনেকে। এই ভাবনাই উঠে এসেছে এদের থিমে।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): কালীঘাট
১২| সুরুচি সংঘ (Suruchi Sangha)
প্রতি বছরই এদের থিম, এদেশের কোনও না কোনও রাজ্য কেন্দ্রিক হয়। সেই রাজ্যের সংস্কৃতি ফুটে ওঠে এদের পুজো মণ্ডপে। দেবী মূর্তির গড়নও সেই মতো হয়। গত বছর এদের থিম ছিল ‘অর্গ্যানিক প্যান্ডেল’। বাংলার প্রতি জেলা এবং শিবালিক পাহাড় থেকে মাটি সংগ্রহ করে এনে তৈরি করা হয়েছিল এই প্যান্ডেল। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও যে এদের থিমে নতুন চমক থাকবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সুরুচি সংঘের পুজোয় আসতেই হবে।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): রবীন্দ্র সরোবর এবং কালীঘাট।
১৩| একডালিয়া এভারগ্রিন (Ekdalia Evergreen Durga Puja)
থিম এবং লাইটিং-এর যুগলবন্দিতে এদের পুজো মণ্ডপ দেখার মতো হয়। গত বছর তামিলনাড়ুর এক মন্দিরের অনুকরণে ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি হয়েছিল এদের পুজো মণ্ডপ। একডালিয়া এভারগ্রিনের আরেক আকর্ষণ হল এদের দুর্গা প্রতিমা এবং মণ্ডপের মাঝে থাকে বিশাকায় ঝাড়বাতি, যা মিস করলে ভুল করবেন।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): কালীঘাট।
১৪| সিংহী পার্ক সর্বজনীন (Singhi Park Sarbojanin Durgotsab)
একডালিয়া এভারগ্রিনের উল্টা দিকের গলিতেই এই পুজো মণ্ডপ। তাই একডালিয়া দেখার পরে সিংহী পার্কে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না যেন! অন্যান্য বছরের মতো গত বছরও এদের থিম ছিল নজরকাড়া। গুজরাটের অপরূপ সুন্দর এক সূর্য মন্দিরের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছিল এদের পুজো মণ্ডপ। এ বছর সিংহি পার্কের থিমে কেমন চমক থাকে, সেটাই এখন দেখার।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): কালীঘাট।
১৫| বোসপুকুর শীতলা মন্দির (Bosepukur Sitala Mandir)
কলকাতার সেরা সেরা থিম পুজোর লিস্টে বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের নাম রাখতেই হবে। কারণ প্রতি বছরই এদের থিম হয় চোখ ধাঁধানো। গত বছর এদের থিম ছিল ‘ট্রাইবাল ট্যাটু আর্ট’। সেই মতো সারা পুজো মণ্ডপ সেজে উঠেছিল। বিশেষত, মণ্ডপের কারুকার্য ছিল দেখার মতো। তাই কোনও কারণেই এ বছর এই পুজো প্যান্ডেল মিস করা চলবে না।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): কালীঘাট।
১৬| দেশপ্রিয় পার্ক (Deshapriya Park)
গত কয়েক বছর আগেও দেশপ্রিয় পার্কের পুজো নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন একটা উন্মাদনা ছিল না। কিন্তু ২০১৫ সালে বিশ্বের সবথেকে বড় দুর্গা দর্শনের আশা জাগিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই পুজো মণ্ডপ। সেই থেকেই নতুন কিছু দেখার আশায় প্রতি বছরই দেশপ্রিয় পার্কের পুজো প্যান্ডেলে ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুষ। গত বছর এক টুকরো দক্ষিণ ভারতের দেখা মিলেছিল দেশপ্রিয় পার্কে। দক্ষিণের কোনও এক মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছিল মণ্ডপ। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রতিমার গড়নেও ছিল বৈচিত্র। এ বছরও কি নতুন কোনও চমক দিতে চলেছে দেশপ্রিয় পার্ক? উত্তর মিলবে আর কয়েক মাস পরেই ।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): কালীঘাট।
১৭| ত্রিধারা সম্মিলনী (Tridhara Sammilani)
এটি দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম বড় পুজো। থিম এবং আলোকসজ্জার যুগলবন্দিতে প্রতিবছরই এদের মণ্ডপ হয় দেখার মতো। গত কয়েক বছরের মতে এ বছরেও যে এদের পুজো প্যান্ডেলের থিমে নতুন চমক থাকবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই দেশপ্রিয় পার্কে ঢুঁ মারার পরে ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজো মণ্ডপে আসা তাই মাস্ট! তবে সকালের দিকে আসার চেষ্টা করবেন, তাতে ভিড় একটু কম হবে। আর যদি চতুর্থী অথবা পঞ্চমীতেই এদিকটা সেরে ফেলতে পারেন, তা হলে তো কোনও কথাই নেই!
নিকটতম মেট্রো স্ট্রেশন (Nearest Metro Station): কালীঘাট।
১৮| শিবমন্দির (Shiv Mandir Durga Puja)
দক্ষিণ কলকাতার আরেক নামী পুজো হল শিবমন্দির। গত বছর এদের থিম ছিল ‘শিকড়ের টান’। যে ছেলে-মেয়েরা বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের একলা ফেলে চলে যায়, তাঁদের দুঃখ-কষ্টের কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল এই থিমের সাহায্যে। এ বছর এদের থিম কী হয়, সেটাই এখন দেখার।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): কালীঘাট।
১৯| নাকতলা উদয়ন সংঘ (Naktala Udayan Sangha)
নাকতলা উদয়নের সংঘের মণ্ডপসজ্জায় প্রতিবারই কোনও না কোনও চমক থাকে। গত বছরেও ছিল তার অন্যথা হয়নি। সময় থেমে থাকে না, সময়ের সঙ্গে বদলে যায় সব কিছু, এই ভাবনাকে সঙ্গী করেই তৈরি করা হয়েছিল মণ্ডপ এবং প্রতিমা। আলোকসজ্জাতেও ছিল বৈচিত্র। বিশেষ করে স্বচ্ছ পলিথিন শিট এবং বিভিন্ন ধরনের রং দিয়ে মণ্ডপের সামগ্রিক পরিবেশকে যে ভাবে তুলে ধরা হয়েছিল, তা ছিল নজরকাড়া। তাই দক্ষিণের সেরা মণ্ডপের লিস্টে এই পুজো প্যান্ডেলকে না রাখলে ভুল করবেন।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): মাস্টার দা সূর্য সেন। তবে গীতাঞ্জলি এবং কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন থেকেও এই পুজো প্যান্ডেল বেশি দূর নয়।
২০| খিদিরপুর ২৫ পল্লী (Khidirpur 25 Pally)
স্বর্গ দেখছেন? আমরা কেউই দেখিনি। কিন্ত গত বছর শহর কলকাতার বুকে আস্ত একটা স্বর্গ তৈরি করেছিলেন এই পুজোর উদ্যোক্তারা। এই ভাবেই বছরের পর বছর ধরে খিদিরপুর ২৫ পল্লীর পুজো মণ্ডপের থিম আমাদের চমক দিয়ে চলেছে। এই বছরেও যে তার অন্যথা হবে না, তা এদের ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন (Nearest Metro Station): এই মণ্ডপের কাছকাছি কোনও মেট্রো স্টেশন নেই।
‘প্যান্ডেল হপিং’ ছাড়াও দুর্গা পুজোর সময় আরও যে কাজগুলি করতে পারেন (Things To Do In Kolkata During Durga Puja)
দুর্গা পুজো মানেই যে শুধু প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা, তা তো নয়। এ সময় আরও নানাভাবে দুর্গা পুজোর মজা নেওয়া যেতে পারে। যেমন ধরুন…
১| পুজোর ঠিক আগে আগে একদিন কুমারটুলি পৌঁছে যান। এক এক করে বড় থেকে ছোট নানা ক্লাবের ঠাকুরের প্যান্ডেল মুখি হওয়ার দৃশ্য কিন্তু কম আকর্ষণীয় নয়।
২| কলা বউ স্নানের সময় কখনও থেকেছেন নাকি? এ বছর এই নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতেই পারেন। তাছাড়া সকাল সকাল বাবুঘাটের পরিবেশ যে মন্দ লাগবে না, তা হলফ করে বলতে পারি।
৩| একদিন কোনও এক রাজবাড়ি বা বনেদি বাড়িতেও ঢুঁ মারতে পারেন। আজও তাঁরা যেভাবে নানা ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে, তা দেখার মতো।
৪| কুমারী পুজো দেখতে বেলুড় মঠেও পৌঁছে যেতে পারেন।
মূল ছবি সৌজন্য: ইনস্টাগ্রাম ও ইনস্টাগ্রাম
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন