চটজলদি মেদ ঝরাতে ডায়েটের ভূমিকা যে সত্তর শতাংশ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই ওজন কমাতে গেলে ডায়েটের দিকে নজর দেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যদি নিয়ম করে অল্পবিস্তর হাঁটাহাঁটি বা মিনিটকুড়ি জগিং করা যায়, তা হলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে আরও দ্রুত ওজন কমে। এখন প্রশ্ন হল, রোজের ডায়েটে কী কী খাবার থাকলে ওজন নিয়ে আর কোনও চিন্তা থাকবে না? প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (food) বেশি করে খেতে হবে। সেই সঙ্গে ফাইবার রয়েছে এমন খাবার খাওয়াও মাস্ট! প্রোটিন এবং ফাইবার বহুক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়, যে কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তা ছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি-ফল বেশি পরিমাণে খেলে মেটাবলিজম রেট তো বাড়েই, সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে। ফলে শরীরের ইতি-উতি জমে থাকা মেদ (weight loss) ঝরে যেতে সময় লাগে না।
আরও পড়ুনঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তিসি বীজ
ওজন কমাতে এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে
চটজলদি ওজন কমাতে শরীরে যাতে কোনও ভাবেই ক্যালরির মাত্রা না বাড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। আর ঠিক এই কারণেই তেলেভাজা জাতীয় খাবার যেমন এড়িয়ে চলতে হবে, তেমনই কোল্ড ড্রিঙ্ক, সাদা পাউরুটি, মিষ্টি এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়াও চলবে না। ভাত-রুটি খাওয়াও কি বন্ধ করে দিতে হবে? শরীরকে সচল রাখতে সিম্পল কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন রয়েছে। তাই ভাত-রুটি খাওয়া বন্ধ করে দিলে বিপদ। তবে কম পরিমাণে খেতে হবে। যাঁরা একটু আধটু দৌড়-ঝাঁপ করেন, তাঁরা এক বাটি করে ভাত খেতেই পারেন। তবে গৃহিণীরা সাদা ভাত যতটা সম্ভব কম খাবেন। আর যদি রুটি খেতে ইচ্ছে করে, তা হলে দুটোর বেশি না খাওয়াই উচিত।
নিয়মিত এই খাবারগুলি খেলেই কমবে ওজন
প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে যে ওজন কমবে, সে কথা তো ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছেন। কিন্তু কোন কোন খাবারে (diet plan) এই দু’টি উপাদান রয়েছে, সে সম্পর্কে জানা আছে কি?
১. ডিম
ঝটপট ওজন কমাতে চান তো কাল থেকেই ব্রেকফাস্টে দুটো করে ডিম খাওয়া শুরু করেন। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, যা বহুক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে মুখ চালানোর ইচ্ছা আর থাকে না। তাই শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরির প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তবে ডিমে প্রোটিন ছাড়াও আরও অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে, যা নানা ভাবে শরীরের উপকারে লাগে।
২. সবুজ শাক-সবজি
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, সঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম সহ এমন কিছু উপকারী উপাদান, যা শরীরের ‘ফ্যাট বার্নিং’ প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে। ফলে মেদ ঝরে যেতে সময় লাগে না। তাছাড়া প্রোটিনের মতো ফাইবারও অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, যে কারণেও ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই বুঝতেই পারছেন, ওজন কামতে গেলে নিয়মিত এক বাটি করে সেদ্ধ সবজি খেতেই হবে।
৩. মাছ
নিয়মিত মাছ খেলে ওজন তো কমবেই, সঙ্গে হার্ট এবং ব্রেনের ক্ষমতাও বাড়বে। দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতেও দেখবেন সময় লাগবে না। কারণ, মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন এবং নানা সব ভিটামিন এবং মিনারেল, যা শরীরের দেখভালে নানা ভাবে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হল, মাছের শরীরে থাকা নানা উপকারী উপাদান কীভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে? বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে রোজের ডায়েটে মাছের অন্তর্ভুক্তি ঘটলে শরীরে আয়োডিনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে thyroid function-এর উন্নতি ঘটার পাশাপাশি মেটাবলিজম রেটও বেড়ে যায়। ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
৪. ব্রকলি, ফুলকপি এবং বাঁধাকপি
যে সব খাবারে প্রোটিন-ফাইবার দুই রয়েছে, তা ওজন কমাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই তো ভুঁড়ি কমাতে নিয়মিত ব্রকলি, নয়তো বাঁধাকপি বা ফুলকপি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ইচ্ছা হলে এক বাটি করে Brussels sprout খেতে পারেন, তাতেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।
৫. সেদ্ধ আলু
সবাই যে বলে আলু খেলে ভুঁড়ি বাড়ে। তাহলে কি এই ধরণাটা ভিত্তিহীন? সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বললে ভুল হবে। কারণ, ভাজা আলু খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সেদ্ধ আলু খেলে কোনও ক্ষতি নেই। বরং তাতে ওজন কমার সম্ভাবনা আরও বাড়বে। কীভাবে? এতে উপস্থিত পটাশিয়াম এবং resistant starch নানা ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৬. মুরগির মাংস
ওজন কমাতে গেলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতেই হবে। তাই তো রোজের ডায়েটে মুরগির মাংস থাকা মাস্ট! মাঝে মধ্যে মটন খাওয়াও চলতে পারে। তাতে করে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হবে। ফলে কথায় কাথায় খিদে পাবে না, যে কারণে শরীরে ক্যালরির প্রবেশ কম হবে। আর এই ভাবে ক্যালরির ঘাটতি হতে থাকলে ওজন কমতে যে সময় লাগবে না, তা তো বলাই বাহুল্য! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ncbi-এর প্রকাশ করা এক রিপোর্ট অনুসারে দিনে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিমাণ মাত্র ২৫ শতাংশ বাড়ালেই বারে বারে খিদে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬০ শতাংশ কমে যায়। তাই বুঝতেই পারছেন, শুধু ডায়েট করে যদি ওজন কমাতে হয়, তাহলে মাছ-মাংস খাওয়া একটু বাড়াতেই হবে।
৭. ডাল
এবার থেকে দুপুরের মেনুতে একবাটি করে ডাল রাখতে ভুলবেন না যেন! প্রতিদিন ডাল খেলে ওজন তো কমবেই, সঙ্গে ছোট-বড় সব রকমের রোগই দূরে থাকতে বাধ্য হবে। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন। এছাড়াও রয়েছে নানা ভিটামিন এবং মিনারেল, যা শরীরের দেখভালে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ডালের সঙ্গে যদি অল্প করে বিনস খেতে পারেন, তাহলে আরও উপকার মিলবে। কারণ, ডালের মতো এতেও প্রোটিন-ফাইবার দুই রয়েছে।
৮. পনির
বলেন কী, পনির খেলেও ওজন কমবে! কীভাবে? মাছ-মাংস বা ডালেই যে শুধু প্রোটিন রয়েছে, এমন তো নয়। দুগ্ধজাত খাবারগুলিও প্রোটিনে ঠাসা। তাই তো নিয়ম করে এক বাটি ছানা বা কয়েক টুকরো পনির খাওয়া শুরু করলে মেদ ঝরতে সময় লাগে না। তবে আরেক ভাবেও পনির ওজন কমাতে সাহায্য করে। কীভাবে? এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, শরীরের fat burning প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে। ফলে শরীরের ইতি-উতি জমে থাকা মেদ ঝরে যেতে সময় লাগে না।
৯. অ্যাভোকাডো
এই ফলটা একটু দামি ঠিকই। কিন্তু নিয়মিত যদি খেতে পারেন, তাহলে যে উপকার পাবেই পাবেন, সেকথা হলফ করে বলতে পারি। কেন এমন দাবী, তাই ভাবছেন? আসলে অ্যাভোকাডোতে ফাইবারের পাশাপাশি রয়েছে monounsaturated oleic acid নামক উপকারী ফ্যাট, যা ভুঁড়ি কামতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
১০. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
ncbi-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে নিয়মিত ১৫ এমএল করে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেলে ১.২ থেকে ১.৭ কিলো পর্যন্ত ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে। তাই চটজলদি ওজন কমানোর প্ল্যান থাকলে নিয়মিত অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেতে ভুলবেন না যেন! কিন্তু ভুলেও এটি সরাসরি খাবেন না। তাতে শরীরের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাহলে কীভাবে খেতে হবে? অ্যাপেল সিডার ভিনিগার সব সময় জলে মিশিয়ে খাওয়া উচিত। খেয়াল রাখবেন জলের পরিমাণ যেন ভিনিগারের থেকে বেশি হয়।
১১. বাদাম
ওজন কমাতে প্রোটিন, ফাইবার এবং উপকারী ফ্যাটের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আর এই তিনটি উপাদানই প্রচুর পরিমাণে মজুত রয়েছে প্রায় প্রতিটি বাদামেই। বিশেষ করে আমন্ডে। তাই তো বাদাম খাওয়া শুরু করলে উপকার মিলবেই মিলবে। তবে বেশি পরিমাণে খাওয়া চলবে না। কারণ, নানা উপকারী উপাদানের পাশাপাশি বাদামে প্রচুর ক্যালরিও রয়েছে। তাই তো বেশি পরিমাণে খেলে ওজন কমার পরবির্তে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
১২. আপেল
ওজন কমাতে যে যে খাবারগুলি বিশেষ ভূমিকা নেয়, সেই লিস্টের একেবারে উপরের দিকে আপেলকে না রাখলেই নয়! কারণ, এই ফলটি ফাইবারে ঠাসা, সঙ্গে মজুত রয়েছে নানা ভিটামিন-মিনারেলও। এই কারণেই তো প্রতিদিন একটা করে আপেল খেলে ওজন কমতে যেমন সময় লাগে না, তেমনই শরীরও রোগমুক্ত থাকে। তাই না কথায় বলে, ‘একটা করে আপেল খান, আর ডাক্তারের ঠিকানা ভুলে যান!’
১৩. নারকেল তেল
বাঙালিদের সরষের তেল ছাড়া আর কিছুই মুখে রচে না। তবে মাঝে মধ্যে যদি অল্প করে এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল খেতে পারেন, তাহলে কিন্তু মন্দ হয় না। কারণ, এতে উপস্থিত medium-chain triglyceride বহুক্ষণ পেট ভরিয়ে রেখে শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ক্যালরির প্রবেশ আটকে দেয়। ফলে মুঠো মুঠে খেয়ে কিলো খানেক ওজন বাড়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
১৪. দই
হজম ক্ষমতা বাড়লেও কিন্তু ওজন কমে। তাই তো নিয়মিত দই খাওয়া উচিত। কারণ, এতে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি হজম ক্ষমতাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে প্রদাহের মাত্রাও কমে। ফলে মেদ ঝরতে সময় লাগে না। তাই মাস খানেকের মধ্যে যদি ওজন কমানোর ইচ্ছা থাকে, তাহলে প্রতিদিন লাঞ্চের শেষে এক বাটি করে টক দই খেতে ভুলবেন না যেন!
১৫. কুমড়ো
নিয়মিত এই সবজিটি খেলে আগামী দিনে যে কেউ আর আপনাকে কুমড়োপটাশ নামে ডাকার সুযোগ পাবে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারি। কারণ, কুমড়োতে ফাইবারের পাশপাশি নানা ভিটামিন-মিনারেল এবং beta-carotene নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে, যা ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই সঙ্গে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলিকেও ধ্বংস করে দেয়। ফলে রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও কমে।
১৬. দারচিনি
ওজন কমাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির জুড়ি মেলা ভার। কারণ, এতে মজুত ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন সহ নানা উপকারী উপাদান একদিকে যেমন শরীরকে রোগমুক্ত রাখে, তেমনই হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটায়। ফলে দ্রুত মেদ ঝরে। এখন প্রশ্ন হল, এত সব উপকার পেতে কীভাবে দারচিনি খেতে হবে? সকাল-বিকাল দারচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি চা পান করলে কাঙ্খিত ফল মিলতে সময় লাগবে না।
১৭. জায়ফল
এতে থাকা ফাইবার এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরে জমে থাকা ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলকে ভেঙে দেয়। ফলে দ্রুত ওজন কমে। কিন্তু তাই বলে বেশি পরিমাণে খাওয়া চলবে না, তাতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। যদি খেতেই হয়, তাহলে অল্প করে খান। দেখবেন, তাতেই উপকার মিলবে।
১৮. তেজ পাতা
দ্রুত ওজন কমানোর ইচ্ছা যদি থাকে, তাহলে রান্নায় কম পরিমাণে নুন দিতে হবে। পরিবর্তে তেজ পাতার ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে তেজ পাতায় থাকা বেশ কিছু উপকারী উপাদান খাবারে মিশে আমাদের শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যার প্রভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
১৯. লবঙ্গ
Penn State University-এর গবেষকদের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত খান তিনেক লবঙ্গ খেলে শরীরের নানা উপকার হয়। বিশেষ করে দ্রুত মেদ ঝরে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও কমে। শুধু তাই নয়, হজম ক্ষমতা বাড়াতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
২০. আদা
নিয়মিত এক গ্লাস করে আদা জল খেলে শরীর তো সুস্থ থাকেই, সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না। এমনকী, প্রদাহের মাত্রাও কমে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে আদা জল খেলে নাকি বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে কম পরিমাণে খাবার খাওয়ার কারণে ওজন কমতে সময় লাগে না।
২১. রসুন
এতে মজুত allicin নামক উপাদানটি প্রকৃতিতে অ্যান্ট-ব্যাকটেরিয়াল হলেও মেদ ঝরাতে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। শুধু তাই নয়, এক কোয়া রসুন খাওয়া মাত্র খিদে কমে যায়, সেই সঙ্গে leptin নামক একটি হরমোনের ক্ষরণও কমতে শুরু করে, যে কারণেও বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য হয়।
২২. ধনে পাতা
এক্কেবারে ঠিক শুনেছেন। ওজন কমাতে বাস্তবিকই ধনে পাতার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ, এটি হল প্রকৃতিতে natural diuretic, যে কারণে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি খাওয়া মাত্র ওয়াটার রিটেনশন হওয়ার আশঙ্কা কমে, সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে। ফলে দ্রুত মেদ ঝরে।
২৩. খেজুর
ব্রেকফাস্টে খান চারেক খেজুর খাওয়া শুরু করুন। তাতে শরীরে ফাইবারের মাত্রা তো বাড়বেই, সঙ্গে ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের ঘাটতিও মিটবে, যে কারণে ওজন কমতে সময় লাগবে না।
২৪. ভুট্টা
বিশেষজ্ঞদের মতে দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে রোজের ডায়েটে ভুট্টার অন্তর্ভুক্তি মাস্ট! কিন্তু কেন? কারণ, এতে ডায়াটারি ফাইবারের সঙ্গে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনও। আর এই দুটি উপাদন একসঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের ইতি-উতি জমে থাকা মেদে ঝরে নিমেষেই।
২৫. ওটস
মাস খানেকের মধ্যে ওজন কমানোর ইচ্ছা থাকলে ব্রেকফাস্টে মাঝে মধ্যেই ওটস খাওয়া শুরু করুন। তাতে শরীরে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বাড়বে, সঙ্গে উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। ফলে হজম ক্ষমতার এমন উন্নতি ঘটবে যে ওজন বাড়ার কোনও আশঙ্কাই থাকবে না।
২৬. কড়াইশুঁটি
প্রতিদিন ছোট বাটির এক বাটি কড়াইশুঁটি খেলে শরীরে কম-বেশি প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিনের প্রবেশ ঘটে, সঙ্গে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং আয়রনের ঘাটতিও মেটে। তাই বুঝতেই পারছেন, এই প্রকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে শুধু ওজন কমে না, সেই সঙ্গে ছোট-বড় নানা রোগ-ব্যাধির প্রকোপও কমে।
২৭. অলিভ অয়েল
এবার থেকে স্যালাড বা পাস্তা তৈরির সময় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে কিন্তু লাভবান হবেন। কারণ, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই তেলটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, তাতে করে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরির প্রবেশ আটকে যায়। ফলে অল্প দিনেই ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
২৮. কলা
অল্পবিস্তর শরীরচর্চা আর ডায়েটিংয়ের উপর ভরসা করে যদি ওজন কমানোর ইচ্ছা থাকে, তাহলে ব্রেকফাস্টে নিয়ম করে খান দুয়েক কলা খাওয়া উচিত। ভাবছেন, তাতে কী লাভ হবে? তাহলে জেনে রাখা ভাল যে এই ফলটি পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামে ঠাসা, যা হজমে সহায়ক উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে সাহায্য করে। ফলে মেটাবলিজম রেট এতটাই বেড়ে যায় যে দ্রুত মেদ ঝরতে শুরু করে।
২৯. টোম্যাটো
fluid retention কম হলেই ওজন বাড়ার আশঙ্কা কমবে। তাই তো নিয়মিত টোম্যাটো খাওয়া মাস্ট। কারণ, একটা করে কাঁচা টোম্যাটো খাওয়া শুরু করলে শরীরে জলের ঘাটতি দূর হবে, যে কারণে ওয়াটার রিটেনশন হওয়ার আশঙ্কা কমবে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য হবে।
৩০. পেঁয়াজ
এবার থেকে খাবারের সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া শুরু করুন। তাতে prebiotic fiber-এর ঘাটতি মিটবে। ফলে শরীর তো সুস্থ থাকবেই, সেই সঙ্গে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কমবে।
৩১. সাইট্রাস ফল
পাতিলেবু, কমলা লেবু অথবা মৌসম্বি লেবুর মতো সাইট্রাস ফল খাওয়া শুরু করলে শরীরে পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়ে, যা প্রদাহের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৩২. রাঙা আলু
ওজন কমানোর ইচ্ছা থাকলে বাটি খানেক সবজি খেতেই হবে। আর সেই লিস্টে যদি মিষ্টি অলুকে অন্তর্ভুক্ত করেন, তাহলে তো কোনও কথাই নেই। কারণ, এই সবজিটিতে মজুত রয়েছে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন এবং ফাইবার, যা হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর খাবার ঠিক মতো হজম হলে ওজন বাড়ার যে আর কোনও আশঙ্কাই থাকে না, সে তো সবারই জানা।
৩৩. জাম
ছোট বাটির এক বাটি জাম খেলে প্রায় ৯ গ্রাম ফাইবার শরীরে প্রবেশ করে। এই পরিমাণ ফাইবার নিয়মিত শরীরে ঢুকতে থাকলে ওজন কমবে বই কী!
৩৪. কুমড়োর বীজ
কুমড়ো খেলে যেমন ওজন কমে, তেমনই কুমড়োর বীজও সমান উপকারী। সপ্তাহে দিন তিনেক কুমড়োর বীজ হলকা ভেজে নিয়ে খান দেখি! তাতে কী ওজন কমবে? আলবাত কমবে! কারণ, এতে রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফলেট, niacin এবং গুচ্ছের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে যেমন বিশেষ ভূমিকা নেয়, তেমনই ওজন কমাতেও নানা ভাবে সাহায্য করে।
৩৫. পিনাট বাটার
চামচ দুয়েক পিনাট বাটার খাওয়া মাত্র কম-বেশি প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন এবং ৪ গ্রাম ফাইবার শরীরে প্রবেশ করে। তাই তো ওজন কমাতে নিয়মিত এই খাবারটি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তাছাড়া পিনাট বাটারে রয়েছে L-arginine নামে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা সারা শরীরে রক্তের প্রবাহে উন্নতি ঘটায়, যে কারণে fluid retention-এর আশঙ্কা কমে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩৬. বেদানা
শুধু যদি ডায়েটিং করে ওজন কমানোর ইচ্ছা থাকে, তাহলে নিয়মিত এক বাটি করে বেদানা খেতে ভুলবেন না যেন! তাতে ফাইবারের ঘাটতি তো মিটবেই, সঙ্গে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফলেট এবং পটাশিয়ামের চাহিদাও পূরণ হবে। ফলে নানা রোগ-ব্যাধির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা কমবে।
৩৭. ব্রাউন রাইস
এতে মজুত ফাইবার, ওজন কামতে তো সাহায্য করেই, সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং হার্টের দেখভালেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। এই কারণেই তো মাঝে মধ্যে ব্রাউন রাইস খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
৩৮. কাঁচা লঙ্কা
ncbi-এর ওয়েব সাইটে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে দিনে খান দুয়েক কাঁচা লঙ্কা খেলে এতে উপস্থিত capsaicin নামক একটি উপাদানের গুণে শরীরের fat burning প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত কাজ করে, যে কারণে মেদ ঝরতে সময় লাগে না।
৩৯. গোলমরিচ
এবার থেকে খাবারে একটু বেশি করে গোলমরিচ দেওয়া শুরু করুন, তাতে ওজন তো কমবেই, সঙ্গে শরীরও সুস্থ থাকবে। কিন্তু গোলমরিচ খাওয়ার সঙ্গে ওজন কমার কী সম্পর্ক? আসলে এই মশলাটিতে রয়েছে ফাইবার, উপকারী ফ্যাট, ভিটামিন এ, কে এবং সি, যা নানা ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪০. গাজর
দ্রুত ওজন কমাতে গেলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাটা যেমন জরুরি, তেমনই কোনও ভাবেই যাতে ওয়াটার রিটেনশন না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। আর ঠিক এই কারণেই প্রতিদিন খান দুয়েক কাঁচা গাজর খাওয়া মাস্ট! তবে এই সবজিটি যে শুধু ওজন কমায়, তা নয়! এতে মজুত beta-carotene দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে ছোট-বড় নানা রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
এই নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর
১. শুনেছি চকোলেট খেলেও নাকি ওজন কমে?
মোটেই না! তবে ডার্ক চকোলেট খেলে উপকার পাবেন। কারণ, এতে উপস্থিত monounsaturated fatty acid শরীরে প্রবেশ করা মাত্র মেটাবলিজম রেটের উন্নতি ঘটে। ফলে মেদ ঝরার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
২. বেশি করে জল খেলে কি ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে?
দিনে লিটারচারেক জল খেলে দেহে ওয়াটার রিটেনশন হওয়ার আশঙ্কা কমে, যে কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য হয়।
৩. গ্রিন টি খেলেও কি ওজন কমবে?
আলবাত কমবে! কারণ, এতে রয়েছে catechins নামক একটি উপকারী উপাদান, যা মেদ ঝরাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo-র স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…