আজকাল সবকিছুতেই অরগ্যানিকের চল! তা সে খাবারদাবারই হোক কিংবা প্রসাধনী। কিন্তু ন্যাচারাল, অরগ্যানিক জিনিসের দামও একটু বেশির দিকেই। তাই সব সময় এই ধরনের প্রোডাক্ট দিয়ে রূপচর্চা কিংবা ত্বকের যত্ন সম্ভব হয় না। কিন্তু ভাবুন, যদি বাড়িতেই বানিয়ে ফেলা যেত এই ধরনের জিনিসপত্র, কী ভালই না হত তা হলে! আপনাদের মনের কথা বুঝতে পেরেই আমরা এখানে নিয়ে এসেছি এমন ১০টি স্কিনকেয়ার (skincare) এবং কসমেটিক (cosmetics) প্রোডাক্ট (products), যেগুলো একশো শতাংশ কেমিক্যাল ফ্রি (chemical free) এবং সহজেই বাড়িতে বানিয়ে স্টোর করে রাখতে পারবেন। কীভাবে এগুলো তৈরি করবেন, সেই কায়দাই বলা হল এই প্রতিবেদনে।
১. কেমিক্যাল ফ্রি ময়শ্চারাইজার
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: এক টেবিলচামচ অ্যালোভেরা জেল (বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ থাকলে সেখান থেকে স্কুপ করে নিন, নয়তো বাজার থেকে কিনে আনুন), ১০ ড্রপ নারকেল তেল, একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল, স্টোর করে রাখার জন্য স্টেরিলাইজড কন্টেনার
কীভাবে বানাবেন: একটি কাচ অথবা পোর্সিলিনের বাটিতে অ্যালোভেরা জেল এবং নারকেল তেল একসঙ্গে ভাল করে ফেটিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার তার মধ্যে যোগ করুন ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি। এটি না পেলে কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েলও দিতে পারেন। সবগুলো ভাল করে ফেটিয়ে মিশিয়ে আগে থেকে স্টেরিলাইজ করে রাখা কন্টেনারে ঢেলে রাখুন। শীতকালে এটি ঠান্ডায় জমে যেতে পারে। তা হলে একটা চামচে বের করে সেটি গ্যাসের উপর ধরে আবার তরল অবস্থায় নিয়ে আসবেন এটিকে।
২. কেমিক্যাল ফ্রি লিপ বাম
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: এক টেবিলচামচ নারকেল তেল, এক টেবিলচামচ মোম, কয়েক ফোঁটা যে-কোনও এসেনশিয়াল অয়েল, আপনার পছন্দের কোনও লিপস্টিকের ছোট টুকরো
কীভাবে বানাবেন: গ্যাসের উপরে একটি ডেকচিতে জল ফুটতে বসান। তার মাঝে একটি কাচের বাটিতে নারকেল তেল এবং মোমটা রেখে একসঙ্গে তরলীভূত হতে দিন। একটা চামচ দিয়ে ধীরে-ধীরে নাড়াতে থাকুন এই তরলটা। দুটো ভাল করে একসঙ্গে মিশে গেলে তাতে এসেনশিয়াল অয়েলটা মিশিয়ে একটু নাড়িয়ে দিন। এর পরে মেশাতে হবে লিপস্টিকের টুকরোটা যাতে তরলে একটু রং চলে আসে। গ্যাস বন্ধ করে বাটিটা নামিয়ে তরলটি একটি শিশিতে ঢেলে রাখুন। ঠান্ডা হলে এটি নিজে থেকেই জমে যাবে। ব্যস, তৈরি আপনার লিপ বাম।
৩. কেমিক্যাল ফ্রি শ্যাম্পু
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: দুই টেবিলচামচ শিকাকাই পাউডার, এক টেবিলচামচ রিঠা পাউডার, এক টেবিলচামচ আমলকী পাউডার, পরিমাণমতো জল
কীভাবে বানাবেন: একটা বাটিতে আমলকী, রিঠা ও শিকাকাইগুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। অল্প-অল্প করে জল মেশান এই মিশ্রণে এবং নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না মনের মতো ঘনত্বেের পেস্ট তৈরি হচ্ছে। এই পেস্টটিই হল আপনার ঘরে তৈরি শ্যাম্পু। ভেজা চুলে ডগা থেকে আগা পর্যন্ত এই পেস্টটি মেখে রেখে ভাল করে মালিশ করুন। মিশ্রণে থাকা রিঠা ফেনা তৈরি করবে।
৪. ঘরে তৈরি কেমিক্যাল ফ্রি লিভ ইন কন্ডিশনার
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: দুই টেবিলচামচ নারকেল তেল, হাফ কাপ অ্যালোভেরা জেল, এক টেবিলচামচ আমন্ড অয়েল, কয়েকফোঁটা আপনার পছন্দের যে-কোনও এসেনশিয়াল অয়েল, ৩/৪ কাপ জল, একটি ওয়াটার স্প্রে করার বোতল
কীভাবে বানাবেন: একটি বাটিতে অ্যালোভেরা জেল ও জলটা মিশিয়ে ভাল করে নাড়তে থাকুন। যখন দেখবেন দুটো এক হয়ে গিয়েছে, তখন তাতে মেশান নারকেল আর আমন্ড অয়েলটা। আবার ভাল করে নেড়ে মিশিয়ে নিন। এবার এসেনশিয়াল অয়েলটা মেশান। এই মিশ্রণটি ঢেলে রাখুন ওই স্প্রে বোতলে। ভেজা চুলে ব্যবহার করুন।
৫. কেমিক্যাল ফ্রি রোল অন ডিওডোরেন্ট
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: হাফ কাপ নারকেল তেল, হাফ কাপ শিয়া বাটার, হাফ কাপ+ এক টেবিলচামচ বিজওয়্যাক্স, এক চা চামচ ভিটামিন ই তেল, তিন টেবিলচামচ বেকিং সোডা, হাফ কাপ অ্যারারুট পাউডার, ২০ ফোঁটা যে-কোনও এসেনশিয়াল অয়েল, পুরনো ডিওডোরেন্ট কন্টেনার (ভাল করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন যাতে একটুও পুরনো বারটা লেগে না থাকে)
কীভাবে বানাবেন: একটি ডেকচিতে গরম জল চাপিয়ে তার মধ্যে একটি বাটি বসান। এই বাটিতে দিন নারকেল তেল, শিয়া বাটার এবং বিজওয়্যাক্সটা। যতক্ষণ না পুরো ব্যাপারটা গলে গিয়ে একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে, ততক্ষণ সমানে নাড়তে হবে। তারপর আঁচ থেকে নামিয়ে এতে মেশান ভিটামিন ই তেল, বেকিং সোডা, অ্যারারুট পাউডার এবং এসেনশিয়াল অয়েলটা। ভাল করে নেড়ে নিন যাতে পুরো মিশ্রণটা ভাল করে মিশে যায়। মিশ্রণটি একটু ঠান্ডা বলেই পুরনো ডিওডোরেন্ট কন্টেনারে ঢেলে দিন। ওটির মধ্যেই আস্তে-আস্তে জমে যাবে। কোনও ঠান্ডা জায়গায় এটি স্টোর করবেন।
জেনে নিন কোন ডিওডোরেন্টটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো
৬. ঘরে তৈরি ফাউন্ডেশন
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: দুই টেবিলচামচ অ্যারারুট পাউডার (জিঙ্ক অক্সাইড হলে আরও ভাল কভারেজ পাবেন), এক চা চামচ সোনালি অভ্র গুঁড়ো, এক টেবিলচামচ মুলতানি মাটি, এক চা চামচ মিহি করে গুঁড়ো করা কোকো পাউডার (আপনার ত্বকের রং অনুযায়ী এর পরিমাণ বাড়বে বা কমবে), যদি ত্বক খুব তেলতেলে হয়, তা হলে এর সঙ্গে লাগবে এক চা চামচ ট্রান্সলুসেন্ট অভ্র গুঁড়ো
কীভাবে বানাবেন: সবক’টি উপাদান একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিলেই ফাউন্ডেশন তৈরি। কিন্তু এর খেলাটা অন্য জায়গায়। আপনার জন্য পারফেক্ট শেড আনতে চাইলে কোকো পাউডারের গুঁড়ো ঠিক করে মেশাতে হবে। তাই প্রথমে একটু বানিয়ে সেটা হাতে পরীক্ষা করুন। যখন দেখবেন গায়ের রংয়ের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, তখন বড় ব্যাচটি বানান। কোনও কাচের শিশিতে স্টোর করবেন।
৭. কেমিক্যাল ফ্রি আই লাইনার
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: সম পরিমাণ নারকেল তেল ও শিয়া বাটার (এক টেবিল চামচ করে), কালো আইলাইনারের জন্য হাফ চা চামচ অ্যাক্টিভেটেড চারকোল, খয়েরি আইলাইনারের জন্য হাফ চা চামচ কোকো পাউডার
কীভাবে বানাবেন: সবক’টি উপাদান একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিন, তা হলেই তৈরি আপনার আইলাইনার।
৮. ঘরে তৈরি বডি লোশন
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: হাফ কাপ আমন্ড অয়েল, ১/৪ কাপ নারকেল তেল, এক চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল, ১/৪ কাপ বিজওয়্যাক্স, দুই টেবিলচামচ শিয়া বাটার, গন্ধের জন্য আপনার পছন্দের যে-কোনও এসেনশিয়াল অয়েল
কীভাবে বানাবেন: একটি ডাবল বয়েলারে আমন্ড অয়েল, নারকেল তেল আর বিজওয়্যাক্স নিয়ে একসঙ্গে গরম করতে বসান। মাঝে-মাঝে নাড়তে থাকুন। যখন পুরোটা ভাল করে গলে যাবে, তখন তার মধ্যে মেশান ভিটামিন ই অয়েল এবং এসেনশিয়াল অয়েলটি। ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে, ঠান্ডা করে একটি কাচের বোতলে ঢেলে রাখুন। এটি কিন্তু পুরনো পাম্পওয়ালা লোশনের বোতলে রাখবেন না। কারণ, পাম্প করে এটি ওঠানো যাবে না।
৯. ঘরে তৈরি ফেসওয়াশ
Shutterstock
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: একটি বড় মুখওয়ালা কাচের জার, এই জারটির ৩/8 ভাগ ভরে দেওয়ার মতো পরিমাণ মধু, দুই টেবিলচামচ মুলতানি মাটি, ল্যাভেন্ডার অথবা টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল
কীভাবে বানাবেন: একটি কাচের বাটিতে মধু এবং মুলতানি মাটি অল্প-অল্প পরিমাণে নিয়ে মেশাতে থাকুন। অল্প-অল্প করে মেশাতে হবে যাতে মুলতানি মাটি আর মধুটা মণ্ড পাকিয়ে না যায়। নাড়বেন একটি কাঁটা দিয়ে। এভাবে পুরো পরিমাণটা মেশানো হয়ে গেলে তার মধ্যে এসেনশিয়াল অয়েলটি ফোঁটা-ফোঁটা করে দিয়ে আবারও ভাল করে মিশিয়ে নিন। ব্যস, আপনার ফেসওয়াশ তৈরি।
১০. কেমিক্যাল ফ্রি ফেসিয়াল সিরাম
এটি বানাতে যা-যা লাগবে: ক্যারিয়ার অয়েল হিসেবে আমন্ড অয়েল এবং আপনার পছন্দের যে-কোনও এসেনশিয়াল অয়েল
কীভাবে বানাবেন: প্রতি টেবিলচামচ ক্যারিয়ার অয়েলের জন্য ১০ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল লাগবে। এবার ফেসিয়াল সিরামটি তৈরির সময় একটি বাটিতে প্রথমে এক টেবিলচামচ ক্যারিয়ার অয়েল ঢালুন, তারপর তাতে যোগ করুন ১০ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল। তারপর সেটি মিশিয়ে নিয়ে ঢালুন কাচের শিশিতে, যেটিতে আপনি এই সিরামটি স্টোর করবেন। এভাবে যতটা সিরাম তৈরি করতে চাইছেন, ততটা পর্যন্ত মেশাতে থাকুন। শিশিটা ভর্তি হয়ে গেলে তারপর মুখ বন্ধ করে ভাল করে ঝাঁকিয়ে নিন।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo-র স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…