ভূত চতুর্দশী, নামটার মধ্যেই কীরকম একটা গা ছমছমে গন্ধ আছে না? এই ভূত মানে সেই বাংলা গল্পের তেনা-রা নাকি অতীতেকেই ভূত বলা হচ্ছে, অত তর্কে ভাই বাঙালি যায় না! সেই ছোট্টবেলা থেকে দেখে আসছি, কালীপুজোর আগের এই দিনটিতে চোদ্দো শাক ভাজা খেতে হয় এবং ঘরের কোণে চোদ্দ প্রদীপ দিতে হয়। আমরা, ভাইবোনেরা ভারী ভক্তিভরে এই দিনটি পালন করতাম, কারণ, তা হলে সেদিন সন্ধেবেলা পড়াশোনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেত! অনেক পরে যখন মাথার ভিতরে জিজ্ঞাসার বেয়াড়া পোকাটা কুরকুর করতে শুরু করে, তখন জানার চেষ্টা করি যে এই দিনটির তাৎপর্য আসলে কী এবং তখনই সামনে আসে নানা ধরনের গল্প। এগুলির মধ্যে কোনটি যুক্তিসঙ্গত আর কোনটি নেহাতই গল্পকথা, সেই বিচারের গুরুদায়িত্ব আপনাদের হাতেই বরং তুলে দিলাম…
ভূত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশীর পৌরাণিক গল্প
আমরা বলি ভূত আর অবাঙালিরা বলেন নরক চতুর্দশী। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর দিনটিই পালিত হয় এই নামে। এই দিনটি তন্ত্রসাধনার জন্য প্রশস্ত। অঘোরী মতাবলম্বীরা এবং যাঁরা তন্ত্রসাধনার সঙ্গে যুক্ত তাঁরা, সারা বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ, এদিনই অতিপ্রাকৃতের সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রাহ্মমুহূর্তটি পাওয়া যায়। যাঁদের কুষ্ঠীতে রাহুর প্রকোপ আছে, তাঁরা সেই দোষ কাটাতে এদিন প্রয়োজনীয় পূজাঅর্চনা করাতে পারেন। তাতে নাকি ফল দেয়!
তবে পুরাণে এই দিনটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে নানা গল্প (story)। অনেকে বলেন, এই দিনটিতেই নাকি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তুমুল সংগ্রামের পর বধ করেছিলেন নরকাসুরকে। তাই এই দিনটির অন্য নাম নরক চতুর্দশী (Narak Chaturdashi)। আবার অনেকে বলেন, ছোট্ট হনুমান নাকি সূর্যকে দেখে মনোহর ফল ভেবে খেতে যান! খেতে পারেননি বটে, কিন্তু সূর্যকে কবজা করে রেখে দিয়েছিলেন নিজের বগলে পুরে! ফলে সংসারে আলোর অভাব দেখা দেয়। শেষে দেবতাদের বহু কাকুতিমিনতির পর তিনি সূর্যকে ছেড়ে দেন, তা-ও আবার এই কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে। অবশ্য এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত যে গল্পটি তা দৈত্যরাজ বলি ও ভগবান বিষ্ণুর বামন অবতারের। দোর্দণ্ডপ্রতাপ বলিরাজ স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে যথেচ্ছাচার করতে থাকেন। তাঁর অনুগত রাক্ষসেরাও যারপরনাই অত্যাচার করতে থাকে সকলের উপর। দেবতারা ও মানুষেরা সাহায্য চান বিষ্ণুর। তিনি বামন অবতারে দানবীর বলির কাছে দান চান তাঁর তিনটি পায়ের সমান জমির। বলি রাজি হন। বিষ্ণু প্রথম পা রাখেন স্বর্গে, দ্বিতীয়টি স্থাপন করেন মর্ত্যে, তৃতীয় পা-টি রাখার সময় বলি নিজের মাথা পেতে দেন! সঙ্গে-সঙ্গে পাতালে নেমে যান তিনি, সেদিন থেকে পাতালই হয় তাঁর বাসস্থান। বলির এই আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু বলেন যে, প্রতি বছর এই চতুর্দশীর দিন তাঁরা পুজো হবে। এদিন নরকের যত অশরিরী, ভূত-প্রেতদের নিয়ে আবার পৃথিবীতে উঠে আসেন বলি। তাই এই দিনটির নাম নরক কিংবা ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi)।
ভূত কিংবা নরক চতুর্দশীতে কী করবেন ও কী করবেন না
অস্বীকার করে লাভ নেই, এই দিনটি একটু স্পর্শকাতর! তাই কী করবেন এবং কী করবেন না, তা শুরু থেকেই একটু পরিষ্কার করে নেওয়া ভাল।
এদিন যা-যা অবশ্যই করবেন
- পঞ্জিকা মতে, এবছর ভূত চতুর্দশী পড়েছে ২৬ অক্টোবর। ভোর বেলা ৫.৩২ মিনিট থেকে ৬.৪২ মিনিট পর্যন্ত হল অভয়ঙ্গ গঙ্গা স্নানের শুভ সময়। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এদিন এই সময়ে গঙ্গায় ডুব দিলে নাকি নরকে যেতে হয় না! তবে শুধু স্নান করলেই হবে না। স্নানের পর তিল, আতপ চালের ভাত ও ঘি দিয়ে তৈরি গোলোক অর্পণ করতে হবে চোদ্দো পুরুষের উদ্দেশ্যে। স্নানের সময় অতি অবশ্যই মাথায় সাবান দেবেন এবং স্নানের পরে চোখে কাজল পরবেন। এতে অশুভ শক্তি নাকি আপনার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবে না!
- বাঙালিদের বিশ্বাস, এদিন স্বর্গগত চোদ্দো পুরুষ নাকি মর্ত্যে নেমে আসেন। তাই প্রকৃতির কোল থেকে তুলে আনা চোদ্দ রকমের শাক খাওয়াটা এদিন মাস্ট। ওল, পুঁই, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা ও শুষণী- এই ১৪ রকমের শাক একসঙ্গে রান্না করতে হয় এদিন। আর এই শাক ধোওয়ার জন্য যে জল ব্যবহার করা হয়, তা ছিটিয়ে দিতে হবে বাড়ির অন্ধকার কোণগুলোতে।
- সন্ধেবেলা বাড়ির ১৪টি কোণে জ্বালতে হবে ১৪টি প্রদীপ। সেই আলো দেখে দূরে পালাবে অশুভ শক্তি এবং পথ চিনতে পেরে ঘরে আসবেন পূর্বপুরুষেরা।
এদিন যা-যা একেবারেই করবেন না
- ভুলেও শ্মশান বা কবরস্থানের ধারেকাছেও যাবেন না।
- মহিলারা রাতে চুল খুলে ঘুমোবেন না।
- সন্ধের পরে বাড়িঘর ঝাঁড় দেবেন না।
- রাতে রান্নাঘর নোংরা রেখে শোবেন না।
- সন্ধের পরে কেউ দুধ বা দুধে তৈরি কোনও জিনিস চাইলে তা দেবেন না
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo-র স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…