বাঙালি বিয়ে তো হাতে গুনে মাত্র দিনতিনেকের। আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান মিটতে না-মিটতেই এসে যায় বিয়ে-বউভাত। সবশেষে গুটিকয়েক ফোটোগ্রাফ হিসেবে পরে থাকে শুধু বেশ কিছু মধুর স্মৃতি। তাই তো বিয়ে-বউভাতে ছবি তোলার চল বহু দিনের। তবে গত কয়েক বছরে Pre-wedding Photoshoot-এর জনপ্রিয়তাও কিন্তু আকাশ ছুঁয়েছে। আরে জনপ্রিয় হবে না-ই বা কেন বলুন! বিয়ের দিন তো সেই গথে বাঁধা নিয়ম মেনে ছবি উঠে থাকে। সেখানে ফোটোগ্রাফারের ইচ্ছাই শেষ কথা। কিন্তু প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট হল একেবারে খোলা ময়দান। সেখানে ফোটোগ্রাফার (photographer) নয়, আপনার হাতেই থাকবে স্টিয়ারিং। তাই তো পার্টনারের সঙ্গে কাটানো বিশেষ কিছু মুহূর্ত যখন ছবির রূপ নেয়, তখন বিয়ের অ্যালবাম যে আরও একটু বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই আপনার যদি বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে ঝটপট প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের প্ল্যানিং সেরে ফেলতে ভুলবেন না যেন! তাতে একটু খরচ বাড়বে বই কী! কিন্তু স্মৃতির কাছে টাকার কী মূল্য বলুন।
বেশিরভাগ ফোটোগ্রাফারই প্রি-ওয়েডিং ফটোশুট খোলা আকাশের নীচে করতেই বেশি পছন্দ করেন। তাতে আলাদা করে কী কিছু সুবিধে মেলে? আলবাত মেলে! হবু বর-কনের উন্মাদনার সঙ্গে যখন প্রকৃতির রং মিলেমিশে যায়, তখন ফটোগুলি যে মন্দ ওঠে না, তা তো বলাই বাহুল্য! তাই তো কলকাতা শহরের এমন কিছু জায়গা সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চলেছি, যেগুলি ইতিমধ্যেই প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট ডেস্টিনেশন হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ কলকাতার Best Wedding Photographer-এর সন্ধান
কী কী কারণেও প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের আয়োজন করা উচিত? (Why You Should Have A Pre-Wedding Photoshoot)
প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের ব্যবস্থা করলে বেশ কিছু খাসা ছবি তো উঠবেই। সঙ্গে আরও কিছু সুফলও মিলবে। বলেন কী, কাঁড়িখানেক টাকা খরচ করে ফোটোশুটের ব্যবস্থা করলে কিছু উপরি পাওনাও হবে? আচ্ছা শুনি কী-কী সুফল মিলবে!
১| সঠিক অ্যাঙ্গেলের খোঁজ পাবেন
ক্যামেরার দিকে হাসি-হাসি মুখ করে ছবি তুললেই যে সে ছবি ভাল হবে, এমন নয় কিন্তু। বরং আপনার এবং আপনার পার্টনারের বডি পশ্চার অনুযায়ী কোন অ্যাঙ্গলটা ঠিক, সেটা বুঝে নিয়ে যদি ছবি তোলা যায়, তাহলেই কিন্তু ‘ম্য়াজিক ক্রিয়েট’ হবে। তাই তো বিয়ের আগে আপনাদের সঠিক অ্যাঙ্গল সম্পর্কে জেনে নিতে যদি চান, তা হলে প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের আয়োজন করতে ভুলবেন না। তাতে বিয়ের দিন এবং তার আগে ওঠা সবকটা ছবিই যে চোখধাঁধানো হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
২| ক্যামেরা ভীতি কেটে যাবে
একেবারেই বিয়ের দিন ক্যামেরার মুখোমুখি না হয়ে তার আগেই যদি একটু প্র্যাকটিস সেরে নেওয়া যায়, তা হলে বিয়ে-বউভাতের দিন ছবি তোলার সময় ঠিক-ঠিক এক্সপ্রেশন দেওয়ার কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তাই যাঁদের ক্যামেরা ভীতি রয়েছে, তাঁদের তো অবশ্যই প্রি ওয়েডিং ফোটোশুটের আয়োজন করা উচিত। তাতে লজ্জা তো কাটবেই, সঙ্গে ফোটোগ্রাফারের সঙ্গেও বোঝাপড়া হয়ে যাবে। ফলে ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়ার ভয়ও আর থাকবে না।
৩| কোন স্টাইলে আপনাকে মানাবে তা জেনে যাবেন
বিয়ে-বউভাতের দিন কেমন ধরনের পোশাক পরলে দেখতে সুন্দর লাগবে এবং সেই পোশাকের সঙ্গে হেয়ার স্টাইলই বা কেমন হওয়া উচিত, এই সব সম্পর্কে বিয়ের আগে থাকতেই একটু প্ল্যানিং করে নিলে মন্দ হয় না বলুন! সেই কারণেই তো তাই তো প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের ব্যবস্থা করা মাস্ট! তাতে ‘লুক টেস্ট’ এর সুযোগ মিলবে। সঙ্গে কেমন ধরনের স্টাইলি করলে দেখতে সুন্দর লাগবে, সে সম্পর্কেও একটা ধারণা হয়ে যাবে। ফলে ওয়েডিং ফ্যাশনে কোনও খাদ থেকে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকবে না।
৪| পার্টনারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ মিলবে
প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট সারতে কম করে দিন দুয়েক সময় তো লেগে যায়ই। সেই কটা দিন পার্টনারের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোর সুবাদে একে অপরকে আরও কাছ থেকে জেনে বুঝে নেওয়ার সুযোগ মিলবে। ফলে লজ্জার দেওয়াল দেখবেন নিমেষেই ভেঙে যাবে। ফলে বিয়ের আগেই সম্পর্কের বুনিয়াদটা আরও একটু মজবুত হয়ে উঠবে বই কী!
৫| বিয়ের কার্ডে এবং ঘর সাজাতে কাজে আসবে ছবিগুলি
বিয়ের মাসদুয়েক আগে ফোটোশুট সেরে নিয়ে সেই ছবি বিয়ের কার্ডে ব্যবহার করতে পারেন। সেই সঙ্গে এই ছবিগুলিকে কাজে লাগিয়ে আর একটা কাজও করা যেতে পারে। কী কাজ? প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটে তোলা ছবিগুলি যেহেতু একটু হটকে হয়, তাই পছন্দ মতো বেশ কিছু ফোটোগ্রাফ বেছে নিয়ে সেগুলি ফ্রেম করে যদি বাড়ির নানা দেওয়ালে ঠাঙানো যায়, তা হলে দেখতে যে মন্দ লাগবে না, তা তো বলাই বাহুল্য!
লোকেশন ঠিক করার আগে মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি (Things To Keep In Mind Before Choosing A Pre Wedding Location)
১| যাঁরা প্রেম করে বিয়ে করছেন, তাঁরা ফোটোশুটের লোকেশন হিসেবে সেই সব জায়গাগুলি বেছে নিতে পারেন, যেখানে আপনারা অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। ধরুন, প্রথমবার আপনারা যেখানে দেখা করেছিলেন বা যেখানে একে-অপরকে প্রপোজ করেছিলেন, সেখানে প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের আয়োজন করলে মন্দ হবে না।
২| আপনার এবং আপনার পার্টনারের ব্যক্তিত্বকে মাথায় রেখে লোকেশন নির্বাচন করা উচিত। আপনারা যদি ‘হেলথ ফ্রিক’ হন, তা হলে কোনও স্টেডিয়ামে বা জিমে ফোটোশুট করেল তা একটু হাটকে হবে বই কী! আর যদি দু’জনেই ঘুরতে ভালবাসেন, তা হলে ইকো পার্কে যে তাজমহল বা পিরামিডের রেপ্লিকা রয়েছে সেগুলির সামনেও ছবি তুলতে পারেন।
৩| আপনাদের লুকের সঙ্গে লোকেশন যেন মানানসই হয়। না হলে কিন্তু দেখতে ভাল লাগবে না।
৪| হাজার লোকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাটা সহজ কাজ নয়। তাই আউটডোর লোকেশনে ছবি তোলার কথা ভাবলে এমন একটা জায়গা বেছে নিন যেখানে আপনি এবং আপনার পার্টনার স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। না হলে কিন্তু পুরো ফোটোশুটটাই মাটি হয়ে যাবে।
ফোটোগ্রাফার নির্বাচনের আগে মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি (Tips For Choosing A Wedding Photographer)
ফোটোগ্রাফারের ক্রিয়েটিভিটিই কিন্তু সাধারণ একটা ফ্রেমকে একেবারে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। তাই ঠিক মতো ফোটোগ্রাফার নির্বাচন করাটা সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে কতগুলি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। যেমন ধরুন…
১| শুধুমাত্র স্থানীয় ফোটোগ্রাফারদের খোঁজ নিলেই চলবে না (Explore Photographer From Other Places Also)
প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের পিছনে এতগুলি টাকা খরচ করার কথা যখন ভেবেই ফেলেছেন, তখন কোনও ভাবেই আপস করা চলবে না। তাই বিয়ে ঠিক হওয়া মাত্র ফোটোগ্রাফারের খোঁজে লেগে পরুন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্থানীয় ফোটোগ্রাফারের খোঁজ করলে কিন্তু ভুল করবেন। কারণ, নজরকাড়া ছবি তোলাটা যখন আপনার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য, তখন ফোটোগ্রাফারের দক্ষতাই শেষ কথা হওয়া উচিত। তাই সে যদি কলকাতায় নাও বা থাকেন, তাতেও কোনও ক্ষতি নেই। তাঁকে কয়েক দিনের জন্য কলকাতায় এনে কাজ করালে যে লাভের লাভই হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
২| তাড়াহুড়ো করলে ভুল করবেন (Don’t Make Quick Decision)
বিয়েটা যখন একবারই হবে, তাই বারে-বারে তো আর ফোটোশুট হবে না। তাই ফোটোগ্রাফার নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করলে কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন। তাই মাথা ঠান্ডা করে বেশ কয়েক জন ফোটোগ্রাফারের পোর্টফোলিও এবং ওয়েডিং ট্রেলার দেখে একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার সেই লিস্ট থেকে একজনকে বেছে নিন। এক্ষেত্রে আরও কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন ধরুন, যে ফোটোগ্রাফারকে নির্বাচন করেছেন, সে আপনাদের পছন্দ মতো দিনে ফ্রি আছেন কিনা, সেটা জেনে নিতে ভুলবেন না যেন! সেই সঙ্গে লোকেশন, ফোটোগ্রাফারের ফি এবং মোট কত টাকা খরচ হতে পারে, সে সম্পর্কেও জেনে নেওয়া উচিত।
৩| জেনে নিন অপনার পছন্দের স্টাইলের সঙ্গে ফোটোগ্রাফারের চিন্তা-ভাবনা মিলছে কিনা (Settle On A Style)
আপনি এবং আপনার পার্টনার হয়তো একটা বিশেষ স্টাইল মাথায় রেখে ফটোশুট করার কথা ভেবে রেখেছেন, কিন্তু ফোটোগ্রাফার এদিকে অন্য় চিন্তায় মশগুল, তা হলে কিন্তু শুটের দিন ঝগড়া-ঝাটি বেঁধে যেতে পারে। তাই প্রথম থেকেই এই নিয়ে ফোটোগ্রাফারের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে। যদি দেখেন আপনার পছন্দের সঙ্গে ফোটোগ্রাফারের ভাবনা-চিন্তা মিলছে না, তাহলে অন্য কোনও ফোটোগ্রাফারকে বেছে নেওয়া উচিত।
৪| বাজেট (Budget)
যত টাকা খরচ করবেন, তত ভাল ফল পাবেন। কিন্তু তাই বলে তো আর প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের পিছনে পুরো ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স খালি করে দিলে চলবে না। তাই একেবারে প্রথমেই পার্টনারের সঙ্গে আলোচনা করে একটা বাজেট ঠিক করে নিন। আর সেই মতো ফোটোগ্রাফার নির্বাচন করুন।
প্রি ওয়েডিং ফোটোশুটের আগে এই বিষয়গুলির দিকে নজর রাখতে হবে (Tips For Pre-Wedding Photoshoot)
১| কোন-কোন জায়গায় ফোটোশুট করতে চান সেই বিষয়ে পার্টনারের সঙ্গে আলোচনা করে একটা লিস্ট তৈরি করে নিন। আর সেই লিস্টটা সময় থাকতে থাকতে ফোটোগ্রাফারকে হাতে তুলে দিন।
২| কোন ডেটে শুট করবেন, তা নিয়ে পার্টনারের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ে সেই মতো ফোটোগ্রাফারকে জানিয়ে রাখবেন।
৩| ফোটোশুটের দিন কেমন ধরনের ড্রেস পরবেন, সেটা ঠিক করে ফেলাটাও একটা গুরুত্ব কাজ। ইচ্ছা হলে ট্রাডিশনাল পোশাকের পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেও কয়েকটা ছবি তুলতে পারেন, তাতে একটু বৈচিত্র আসবে বই কী!
৪| ফোটোশুটের আগের দিন বেশি রাত করে ঘুমতে যাবেন না। তাতে চোখের নিচে কালি আর একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ছবি তুলতে হবে। ফলে ছবিতে আপনাকে দেখতে সুন্দর লাগবে না, তখন কিন্তু ফোটোগ্রাফারকে দোষারোপ করলে চলবে না।
৫| ফোটোশুট আপনাদের দু’জনকে নিয়ে হচ্ছে। তাই শুধুমাত্র নিচ্ছের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভুল কাজটা করবেন না যেন! বরং দু’জনে মিলে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
৬| ফোটোশুটের সময় নির্বাচন করাটা একাট গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই যে লোকেশন নির্বাচন করেছেন, সেখানে দিনের কোন সময়ে ছবি তুললে ভাল ফোটো উঠবে সে সম্পর্কে একবার ফোটোগ্রাফারের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে ফোটোশুটের দিন কয়েক আগে একবার লোকেশন থেকে ঘুরে আসতে পারেন। তাতে প্ল্যানিংয়ে কোনও গলদ থাকার আশঙ্কা আর থাকবে না।
কলকাতার কয়েকটি সেরা প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট ডেস্টিনেশন (Best Pre Wedding Shoot Locations In Kolkata)
প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটে তোলা ছবিগুলি কতটা নজরকাড়া হবে, তা যেমন ফোটোগ্রাফারের দক্ষতার উপর নির্ভর করে, তেমনই লোকেশনের গুরুত্বও কিন্তু কম নয়। তাই তো ফোটোশুটের কয়েক মাস আগে থাকতেই এই নিয়ে রিসার্চ শুরু করে দেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হল, শহর কলকাতার কোন-কোন জায়গাগুলি ইতিমধ্যেই ফোটোশুট ডেস্টিনেশন হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সে সম্পর্কে জানা আছে কি?
১| প্রিন্সেপ ঘাট (Prinsep Ghat)
গঙ্গা নদী, দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ, রেল লাইন, কী নেই প্রিন্সেপ ঘাটে। তাই তো ফোটোশুটের জন্য সেরা ডেস্টিনেশন হল এই জায়গাটি। বিশেষ করে ভোর সকালে হুগলি ব্রিজকে পিছনে রেখে ছবি তুললে যেমন মন্দ হবে না, তেমনই দিনের শেষ সূর্য়ের নরম আলো গায়ে মেখে পিন্সেপ ঘাটের দুধ সাদা মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পারেন। ইচ্ছে হলে রেল লাইনে হাঁটতে হাঁটতে ছবি তোলা যেতে পারে। মোট কথা এখানে বিকল্প অনেক। তাই শুটের দিন প্রিন্সেপ ঘাটে ঢুঁ মারলে যে ঠকবেন না, তা হলফ করে বলতে পারি।
২| ইকো পার্ক, নিউটাইন (New Town Eco Park)
প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট ডেস্টিনেশন হিসেবে ফোটোগ্রাফারদের খুব পছন্দের জায়গা হল ইকোপার্ক। আর কেন হবে নাই বা বলুন! এখানে নানা ধরনের গার্ডেন তো রয়েছেই, সঙ্গে বোট রাইডের ব্যবস্থাও আছে। ইচ্ছে হলে ইকো আইল্যান্ডে গিয়ে জলে পা ছুবিয়েও ছবি তুলতে পারেন। রয়েছে সপ্তম আশ্চার্যের অনুকরণে তৈরি সাতটি রেপ্লিকাও। তাই বুঝতেই পারছেন, আলাদা-আলাদা স্টাইলে ফোটো তোলার জন্য ইকো পার্কের থেকে ভাল জায়গা আর কিছু হতে পারে না। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, ফোটোগ্রাফারদের মতে সূর্যাস্তের সময় ইকো পার্কের লেকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে নাকি দারুণ এফেক্ট পাওয়া যায়। তাই কোনও একদিন আপনার ফোটোগ্রাফারকে বাগলদাবা করে ইকো পার্কে পৌছে গিয়ে একবার সরেজমিনে দেখে আসতে পারেন কথাটা আদৌ ঠিক কিনা।
৩| বোটানিক্যাল গার্ডেন, হাওড়া (Botanical Garden – Kolkata)
যে কোনও গাঢ় রঙই ছবিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। আর বোটানিক্যাল গার্ডেনে তো সবুজের ছড়াছড়ি। ইচ্ছে হলে এখানকার শতাব্দী প্রাচীন বট গাছের সামনে দাঁড়িয়েও ছবি তুলতে পারেন। তাই তো প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের জন্য এর থেকে ভাল জায়গা আর কিছু হয় বলে তো মনে হয় না। তবে তাই বলে ভোর সকালে এখানে পৌঁছে যাবেন না যেন! কারণ সকালবেলা বোটানিক্যাল গার্ডেনে মর্নিং ওয়াকার্সদের ভিড় থাকে। তাই দশটার পরে যাওয়াটাই উচিত। প্রয়োজনে এই নিয়ে একবার ফোটোগ্রাফারের সঙ্গে আলোচনাও করে নিতে পারেন।
৪| ময়দান (Maidan)
প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের ডেস্টিনেশন নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছে, তখন কলকাতার সবচেয়ে সুন্দর জয়গাটার নাম না নিলে হয় বলুন! ট্রাম, মূর্তি এবং সবুজ গালিচা পাতা ময়দানের যে-কোনও দিকেই ক্যামেরা তাক করলেই নজরকাড়া সব ফ্রেম পাওয়া যায়। বিশেষ করে ট্রামের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ মিলবে এখানে। তাছাড়া দূরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকেও ফ্রেমে রেখে দারুণ সব ছবি তোলা যেতে পারে। তবে এই জায়গাটার একটাই সমস্যা। ময়দানে সারাক্ষণ লোক গিজগিজ করে। তাই হাজার লোকের সামনে নানা পোজ দিয়ে ছবি তুলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করলে তবেই ময়দানকে বেছে নেবেন। নচেৎ নয়!
৫| ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (Victoria Memorial)
সবুজ গালিচা, লেক এবং ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো কলোনিয়াল আর্কিটেকচার, সব মিলিয়ে ফোটোগ্রাফারদের কাছে স্বপ্নের জয়গা হল ভিক্টোরিয়া। তাই ময়দানে যদি ফটোশুট করতে মন চায়, তাহলে হাঁটতে হাঁটতে ভিক্টোরিয়ায় চলে আসতে পারেন। সকালের আলোয় আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ফ্রেম যে কোন দিনই সুপার হিট। আর যদি আকাশ একটু মেঘলা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। ধূসর আকাশ, দুধ সাদা ইমারত এবং সবুজ গালিচার রং মিলেমিশে প্রতিটি ছবিই যে নজরকাড়া হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভোর সকালে এখানে মনিং ওয়াকার্সদের ভিড় থাকে, তাই দশটার পরে এখানে আসবে, তার আগে নয়।
৬| কুমারটুলি (Kumartuli)
উত্তর কলকাতার আমেজটাই আলাদা। ছোট-ছোট অলিগলি, বনেদি বাড়ি আর কুমারটুলি, সব মিলিয়ে ফোটোগ্রাফির জন্য কলকাতার মধ্যে অন্যতম সেরা জায়গা হল উত্তর কলকাতা। বিশেষ করে কুমারটুলির অলিতে-গলিতে মাটি লেপা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়ে তোলা প্রতিটি ছবিই যে একে অপরের থেকে আলাদা হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটে তোলা প্রতিটি ছবিতে আপনার শহরের লুকানো সৌন্দর্য প্রকাশ পাক, এমনটা যদি চান, তা হলে উত্তর কলকাতায় ঢুঁ মারতে ভুলবেন না!
৭| জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি (Jorasanko Thakur Bari)
ফোটোশুটের দিন যদি ট্রাডিশনাল ড্রেসে ছবি তুলতে মন চায়, তা হলে একবার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে ঢুঁ মারতেই পারেন। কারণ, ঠাকুরবাড়ির দালান এবং গালিচা যতটা নজরকাড়া, ততটাই আকর্ষণীয় এর আর্কিটেকচারও। মোট কথা সুন্দর ফোটো তোলার জন্য যা-যা রসদের প্রয়োজন, তা সবই মজুত রয়েছে এখানে। সোমবার ছাড়া বাকি সব দিন খোলা থাকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি।
৮| ওয়েটো ওয়াইল্ড বা অ্যাকোয়াটিকা (Aquatica)
আপনার প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট একটু হাটকে হোক, এমনটা যদি চান, তা হলে এই দুটো ওয়াটার পার্কের কোন একটায় ফোটোশুটের ব্যবস্থা করতে পারেন। কখনও নীল জলে গা ভাসিয়ে, তো কখনও নানা রাইড চড়তে-চড়তে ছবি তুলতে পারেন। এমনকী, ওয়েস্টার্ন পোশাকে এক হাঁটু নীল জলে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেও কিন্তু মন্দ লাগবে না। মোট কথা, ফোটোগ্রাফারের চিন্তা-ভাবনা যদি আপনাদের মতই একটু হটকে হয়, তাহলে তো কথাই নেই!
৯| ঢাকুরিয়া লেক (Dhakuria Lake)
সবুজে মোড়া ঢাকুরিয়া লেকের সৌন্দর্য বাস্তবিকই নজরকাড়া। তাছাড়া এখানে এমন কিছু মূর্তি রয়েছে যা বেজায় চোখধাঁধানো। তাই তো প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের জন্য ঢাকুরিয়া লেকে ঢুঁ মারতেই পারেন।
১০| বো ব্যারাক (Bow Barracks)
প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটের লোকেশন হিসেবে বো ব্যারাক মন্দ নয়। এখানকার প্রতিটি অলি-গলিতেই একাধিক নজরকাড়া ফ্রেমের সন্ধান মেলে। তাছাড়া এখানকার লাল বাড়িগুলিও কম আকর্ষণীয় নয়। তাই যদি একের পর এক চোখ ধাঁধানো সব ছবি তোলার ইচ্ছে থাকে, তা হলে সক্কাল-সক্কাল এখানে পৌঁছে যেতে হবে।
সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর (FAQs)
১| প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট করতে কত টাকা খরচ হতে পারে?
মোট কত টাকা খরচ হবে তা অনেকাংশেই ফোটোগ্রাফার এবং লোকেশনের উপর নির্ভর করে। তবে এই কাজে কেউ কেউ যেমন ১০,০০০ টাকা খরচ করে থাকেন, তেমনই এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুটে প্রায় ১,৫০,০০০ টাকা খরচ করেছেন। তাই এই সব নিয়ে না ভেবে ফোটোগ্রাফার ঠিক করার আগে নিজেদের মতো করে একটা বাজেট ঠিক করে নিতে ভুলবেন না।
২| প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট কখন করা উচিত?
বিয়ের মাসদুয়েক আগে ফোটোশুট সেরে ফেলতে পারেন। দিনপনেরো বা এক মাস আগেও ফোটোশুট করা যেতে পারে। মোট কথা, সবটাই নির্ভর করছে আপনার মর্জির উপরে।
৩| স্টুডিওতে ফোটোশুট করলে হয় না?
ইচ্ছে হলে করতেই পারেন। কিন্তু একথা তো মানবেন যে, সত্যিকারের আম দেখতে যতটা সুন্দর, নকল আম অতটা নয়। ঠিক একই কারণে আর্টিফিশিয়াল লাইটের পরিবর্তে ন্যাচারাল লাইটে প্রি-ওয়েডিং ফোটোশুট করতে পছন্দ করেন বেশির ভাগ ফোটোগ্রাফার।
Picture Courtesy: Instagram
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!