ত্বকের যত্নে গোলাপ জলের ব্যবহার শুরু হয়েছে আজ থেকে বহুকাল আগেই। আসলে এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে স্কিনের জেল্লা বাড়াতেও নানাভাবে কাজে আসে এই উপাদানটি (Rose Water Benefits For Skin And Hair)। আর গোলাপ জলের সঙ্গে নানা প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক যদি নিয়মিত মুখে লাগাতে শুরু করেন, তাহলে আরও বেশি মাত্রায় উপকার মেলে।
গোলাপ জল দিয়ে তৈরি নানান ফেসপ্যাক:
গোলাপ জল মিশিয়ে তৈরি নানা ধরনের ফেসিয়াল মাস্ক ব্য়বহার করা শুরু করলে একদিকে যেমন ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকে, তেমনি ব্রণর প্রকোপ কমে, স্কিন টোনের উন্নতি ঘটে, স্কিনের ভিতরে জলের ঘাটতি দূর হয়, চোখের তলার ফোলা ভাব কমে যায়, ত্বকের বয়স কমে এবং সানবার্নের চিকিৎসাতেও কাজে আসে। এক সব উপকার পেতে যে যে ফেসপ্যাকগুলি বিশেষ ভূমিকা নেয়, সেগুলি হল…
১. তুলসি পাতা এবং গোলাপ জল:
১৫-২০ টা তুলসি পাতা থেঁতো করে তার সঙ্গে ২০০ এমএল গোলাপ জল মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে নিন। তারপর বোতলটা কয়েক ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিন। সময় হয়ে গেল ফ্রিজ থেকে স্প্রে বোতলটা বের কের নিয়ে শরীরের যেখানে যেখানে সানবার্ন হয়েছে, সেখানে সেখানে ধীরে ধীরে স্প্রে করুন। এমনটা প্রতিদিন করলে দেখবেন উপকার পাবেই পাবেন। আসলে তুলসি পাতা এবং গোলাপ জলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ত্বককে ভিতর থেকে ঠান্ডা করে, সেই সঙ্গে চুলকানি এবং ত্বকের লাল ভাব কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
২. গোলাপ জল, গ্লিসারিন এবং নারকেল তেল:
সারা বছরই কি ত্বক শুষ্ক থাকে? তাহলে এই ফেসপ্যাকটিকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন! এক্ষেত্রে একটা বোতল নিয়ে তাতে ৩ টেবিল চামচ গোলাপ জল, ১ চামচ গ্লিসারিন এবং ১ চামচ নারকেল তেল নিয়ে সবকটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে ফেলুন। এবার সেই মিশ্রণটি থেকে অল্প করে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করুন। দিনে ১-২ বার এইভাবে ত্বকের যত্ন নিলে দেখবেন ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরে আসতে দেখবেন সময় লাগবে না। সেই সঙ্গে ত্বকের জেল্লাও বাড়বে চোখে পড়ার মতো।
৩. লেবুর রস এবং গোলাপ জল:
১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং গোলাপ জল মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি সারা মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। এইভাবে সপ্তাহে ২-৩ দিন এই মিশ্রণটি মুখে লাগালে ব্রণর প্রকোপ তো কমবেই (rose water for acne), সেই সঙ্গে যে কোনও ধরনের দাগ মিলিয়ে যেতেও দেখবেন সময় লাগবে না।
৪. মুলতানি মাটি এবং গোলাপ জল:
অল্প সময়েই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাক, এমনটা যদি চান, তাহলে এই ফেসপ্যাকটিকে (rose water and face care) কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন! আসলে মুলতানি মাটিতে উপস্থিত নানাবিধ খনিজের গুণে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। ফলে স্কিনের জেল্লা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে ব্রণর প্রকোপ কমে, ত্বক ডি-ট্যান হয় এবং স্কিন নরম এবং তুলতুলে হয়ে ওঠে।
৫. মধু এবং গোলাপ জল:
৩ চামচ গোলাপ জল এবং ৪ চামচ মধু মিশিয়ে তৈরি পেস্ট, মুখে লাগাতে শুরু করলে যে কোনও ধরনের দাগ মিলিয়ে যেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি ত্বকের জেল্লাও বাড়ে। শুধু তাই নয়, মধু এবং গোলাপ জলের গুণে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতাও ফিরে আসে। ফলে স্কিনের বয়স কমে চোখে পড়ার মতো। সপ্তাহে ২-৩ দিন এই ফেসপ্যাকটি মুখে লাগাতে হবে, তাহলেই কিন্তু উপকার মিলবে।
৬. শসা এবং গোলাপ জল:
এই গরমে ত্বককে ঠান্ডা রাখতে এবং স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এই ফেসপ্যাকটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ শসা যেখানে ত্বকের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমায়, সেখানে মধু এবং গোলাপ জল ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই চটজলদি ত্বকের জেল্লা বাড়ুক, এমনটা যদি চান, তাহলে পরিমাণ মতো শসা নিয়ে তার সঙ্গে ২ চামচ মধু এবং ১ চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর সেই মিশ্রণটি সারা মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
চুলের যত্নে গোলাপ জল:
১. চুলের জেল্লা বাড়বে:
অল্প সময়েই চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাক, এমনটা যদি চান, তাহলে যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, তাতে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এবার সেই শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে নিন। তারপর এক কাপ গোলাপ জল নিয়ে আরেকবার চুল ধুতে হবে। তবে গোলাপ জল লাগানোর পরে চুল মোছা চলবে না! কারণ গোলাপ জল যত স্ক্যাল্পের ভিতরে প্রবেশ করবে, ততই কিন্তু চুলের সৌন্দর্য বাড়বে, সেই সঙ্গে স্ক্যাল্পের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতাও ফিরে আসবে।
২. রুক্ষ চুলের চিকিৎসায় কাজে আসে:
নানা কারণ কি চুলের গোড়া ফেটে গেছে এবং চুল রুক্ষ হয়ে উঠেছে? তাহলে ১ কাপ গোলাপ জলের (rose water and hair) সঙ্গে কয়েক ড্রপ জোজোবা তেল এবং একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুলের মধ্যে থাকা তেল মিশিয়ে নিন। এবার চুলটা একটু ভিজিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটি লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করুন। ১০ মিনিট মাসাজ করা পরে শ্যাম্পু করে নিন। এইভাবে প্রায় দিনই যদি চুলের যত্ন নিতে পারেন, তাহলেই দেখবেন ফল মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: youtube, wikipedia
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!