বুঝুন ঠেলা! এই দিনটি নিয়েই গড়বড় হওয়ার ছিল? বছরের এই পুজোর দিনটিতে বাঙালি সক্কাল-সক্কাল উঠে ঘুম-ঘুম চোখে আর দুরু-দুরু বুকে পুজো-সংক্রান্ত সব আচার-অনুষ্ঠান নিষ্ঠাভরে পালন করার চেষ্টা করে, বাজারে ডুমো-ডুমো কুল দেখলেও জিভের জল মুখের ভিতরে ফেরত পাঠিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় পাছে বাগদেবী অসন্তুষ্ট হন আর তাঁর কোপে পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়…জানি, আপনি বলবেন, যারা স্কুলে-কলেজে পড়ে না, তাদের আবার অত চাপ কীসের? হুঁ হুঁ বাবা, ওসব মুখের কথা। মনের কথা নয়। সরস্বতী পুজোর আগে বুক ফুলিয়ে কুল খেয়ে দেখান দিকি? খেয়েদেয়ে অঞ্জলি দিন দিকি? পারবেন? মোটেও পারবেন না। কারণ, আর পাঁচজন আম বাঙালির মতো আপনিও ছোট থেকে এটা শিখেই বড় হয়েছেন যে, সরস্বতী পুজোর (Saraswati Puja) আগে এসব করলে দেবী রুষ্ট হবেন আর তার ফল পড়বে পরীক্ষার রেজাল্টে। তাই যতই বড় হয়ে যান, পরীক্ষা শব্দটি যতই আপনার জীবন থেকে বিদায় নিক, দেবী সরস্বতী জাঁকিয়ে বসে আছেন আর সেই সঙ্গে এই পুজো নিয়ে মেনে আসা নিয়মকানুনও।
কিন্তু এবছর ব্যাপারটা একটু গন্ডগোলে হয়ে গিয়েছে। মানে, পঞ্জিকা অনুসারে, বসন্ত পঞ্চমী (Vasant Panchami) শুরু হচ্ছে আগামীকাল, অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি আর পঞ্চমী শেষ হচ্ছে ৩০ জানুয়ারি। ফলে, টেকনিক্যালি এই দুই দিনেই বীণাপাণির আরাধনা হতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথমে ৩০ জানুয়ারি ছুটি ঘোষণা করেছিল। এদিকে ২৯ জানুয়ারি বেশিক্ষণ ধরে পঞ্চমী থাকার কারণে, রাজ্যের বেশিরভাগ জায়গাতেই সেদিন পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে পুরো ব্যাপারটাই ঘেঁটে যায়। তাই গতকাল রাতে সরকার থেকে ২৯ জানুয়ারিও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মানে, আপনি যেদিন প্ল্যান করে রেখেছেন, সেদিনই করুন। চলুন, দেখে নেওয়া যাক, দুই দিন একই তিথি (date time) থাকলে কখন, কীভাবে আয়োজন করতে পারেন সরস্বতী পুজোর। সেই সঙ্গে যাঁরা প্রথমবার পুজো করবেন কিংবা যাঁরা পুরোহিত ডেকে নয়, নিজেই দেবীর আরাধনা করতে চান, তাঁদের জন্য রইল এই পুজোর ডিটেল গাইড।
আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজো ফ্যাশন গাইড: বডি শেপ অনুযায়ী বাসন্তী রঙে সাজুন নানা ধরনের পোশাকে, ৯টি কায়দায়
আমরা যাকে সরস্বতী পুজো বলি, তামাম ভারতে সেই দিনটি বসন্ত পঞ্চমী নামে পরিচিত। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথি থেকেই শুরু হয় ঋতুরাজ বসন্তের সময়। এই ঋতুটি শস্য উৎপাদনের ঋতু, গাছে নতুন পাতা-নতুন ফুল আসার ঋতু। তাই বসন্ত ঋতুর শুরু দিনটিতে উৎসব পালনের রীতি আছে। এমনকী, ভগবত গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে ঋতুরাজ বসন্ত বলেও দাবি করেছেন। আবার শাস্ত্রমতে, এই দিনই নাকি প্রজাপতি ব্রহ্মার মন থেকে আবিভূর্তা হয়েছিলেন দেবী সরস্বতী। তাই এদিন তাঁর আরাধনা করাটাই সাব্যস্ত। আর লোকমুখে প্রচলিত গাথা অনুযায়ী, এদিনই মূর্খ কালিদাস দেবীর আরাধনা করে তাঁর দর্শন পেয়েছিলেন। আর দেবীর বরলাভে হয়ে উঠেছিলেন মহাকবি কালিদাস। তাই বসন্ত পঞ্চমীর দিন দেবী সরস্বতীর পুজো করাটা বিদ্যার্থীদের জন্য শুভ বলে মানেন সকলে। দেবী সরস্বতী ‘সত্ত গুণ’ থেকে জন্ম নিয়েছিলেন। তাই সাদা রং তাঁর পছন্দের। এই কারণেই সরস্বতীর গায়ের রং সাদা, তিনি পরেন সাদা পোশাক, তাঁর নৈবেদ্যতে থাকে সাদা চাল, সাদা বাতাসা, সাদা খই, সাদা তিল, চিনি, দুধ, দই ইত্যাদি। আবার বসন্ত পঞ্চমীর দিন এই পুজো অনুষ্ঠিত হয় বলে অনেকে দেবীকে হলুদ রঙা শাড়িতেও সাজান। পুজোয় দেন বাসন্তী রংয়ের গাঁদা ফুল।
এবছর যেহেতু পুজোর দিন এবং সময় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তাই আমরা এখানে একটু বিশদে ব্যাপারটি আলোচনা করছি। আসলে হিন্দু শাস্ত্র মতে, কোনও তিথি যদি সূর্যোদয়ের পরে শুরু হয়, তা হলে সেই তিথিটি পালিত হবে তার পরের দিন। মানে, যেদিন সূর্যোদয় পাবে, সেদিন। সেই নিয়ম অনুযায়ী, সরস্বতী পুজো এবার হওয়া উচিত ৩০ জানুয়ারি। কারণ, ২৯ জানুয়ারি পঞ্চমী শুরু হচ্ছে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। কিন্তু পরের দিন, মানে ৩০ জানুয়ারি পঞ্চমী থাকছে সকাল ১০টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত। অবশ্য পূর্বাহন কলা, মানে যে সময়টি সূর্যোদয় এবং মধ্যাহ্নের মাঝামাঝি হয়, সেই সময়টি যেদিন থাকে, সেদিনই বসন্ত পঞ্চমী পালন করার সবচেয়ে প্রশস্ত দিন বলে ধরা হয়। সেই হিসেবে দেখতে গেলে, এবছর পূর্বাহন কলা পড়ছে ২৯ জানুয়ারি।
আপনি কোনদিন বাগদেবীর আরাধনা করবেন, সেই ভার আপনার কাঁধেই তুলে দিয়ে আমরা এখানে দু’টি পঞ্জিকা মতে ২০২০ সালের সরস্বতী পুজোর নির্ঘণ্ট তুলে দিলাম এখানে…
দৃকসিদ্ধ পঞ্জিকা, যেটি ভারতবর্ষের বেশিরভাগ অঞ্চলে মেনে চলা হয়, সেই পাঁজি অনুযায়ী ২০২০ সালের সরস্বতী পুজোর দিনক্ষণ অনেকটা এই রকম…
এই পঞ্জিকাটি বাংলার ঘরে-ঘরে মেনে চলা হয়। চলুন দেখা যাক, এবছরের সরস্বতী পুজো নিয়ে এই পাঁজিটি কী বলছে…
সরস্বতী পুজো সাধারণতই বাড়িতে পুরোহিত ডেকে করা হয়। কিন্তু যাঁরা নিজেরাই এই পুজো করতে চান, তাঁদের জন্য ছোট্ট করে, সুচারুভাবে পুজো করার নিয়ম বাতলে দিলাম আমরা, সঙ্গে রইল প্রণাম, অঞ্জলি মন্ত্র ও স্তোত্রও…
পুজোর উপকরণ: ফল, ফুল, মিষ্টি, চরণামৃতর জন্য গঙ্গাজল-মধু-দই, খই-মুড়কি, আসন, পাখা, পঞ্চপ্রদীপ, ধূপ-দীপ, চামর, ঘণ্টা, দোয়াত (তাতে কাঁচা দুধ দিতে হবে, উপরে থাকবে একটি টোপা কুল), খাগের কলম, লাল-সাদা চন্দন, বইপত্র।
পুজোর বিধি: সকালে উঠে স্নান সেরে নিন পঞ্চমী তিথি শুধু হওয়ার আগেই। এদিন অনেকে কাঁচা হলুদ বাটা মেখেও স্নান করতে বলেন। তবে তা না হলে একটু হলুদবাটা ছুঁইয়ে নিয়েও স্নান করে নিতে পারেন। এরপর মা সরস্বতীর কপালে লাল চন্দনের ফোঁটা দিন, ফুলে সাদা চন্দনের ছিটে দিন। ফল টুকরো করে কেটে দেবীকে অর্পণ করুন। পায়ে ফুল দিন। এরপর ধ্যান করুন চোখ বন্ধ করে। মনে-মনে সরস্বতী স্তোত্র আওড়াতে পারেন, কিংবা জোরে-জোরেও বলতে পারেন। তারপর আরতি ও অঞ্জলির পালা। সবশেষে, কিছুক্ষণ মাকে একা থাকতে দিয়ে তারপর চরণামৃত ও প্রসাদ খেয়ে উপোস ভাঙুন
১) সরস্বতী পুজোর প্রণাম মন্ত্র: নমো সরস্বতী মহাভাগে/বিদ্যে কমললোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী/বিদ্যাং দেহী নমোস্তুতে
২) সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি মন্ত্র: জয় জয় দেবী, চরাচর সারে/কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে/বীণাপুস্তক রঞ্জিত হস্তে/ভগবতী ভারতী দেবী নমোস্তুতে
৩) সরস্বতী স্তোত্র
যা কুন্দেন্দুতুষারহারধবলা যা শুভ্রবস্ত্রাবৃতা / যা বীণাবরদণ্ডমণ্ডিতকরা যা শ্বেতপদ্মাসনা // যা ব্রহ্মাচ্যুত শঙ্করপ্রভৃতিভিদৈব্যৌঃ সদা বন্দিতা/সা মাং পাতু সরস্বতী ভগবতী নিঃশেষজাড্যপহা // শুক্ল ব্রহ্মবিচার সার পরমামাধ্যাং জগদ্বাপিণীং / বীণা-পুস্তক-ধারিণীমভয়দাং জাড্যন্ধকারপহাম // হস্তে স্ফটিকমালিকাং বিদধতীং পদ্মাসনে সংস্থিতাম / বন্দে ত্বং পরমেশ্বরী ভগবতীং বুদ্ধিপ্রদাং শারদাম//
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আমাদের এক্কেবারে নতুন POPxo Zodiac Collection মিস করবেন না যেন! এতে আছে নতুন সব নোটবুক, ফোন কভার এবং কফি মাগ, যেগুলো দারুণ ঝকঝকে তো বটেই, আর একেবারে আপনার কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে। হুমম…আরও একটা এক্সাইটিং ব্যাপার হল, এখন আপনি পাবেন ২০% বাড়তি ছাড়ও। দেরি কীসের, এখনই POPxo.com/shopzodiac-এ যান আর আপনার এই বছরটা POPup করে ফেলুন!