বডি শেমিং (body shaming)। এর আক্ষরিক অর্থ অনেকের কাছে স্পষ্ট। অনেকের কাছেই ধারণা স্পষ্ট নয়। আপনি রোগা না মোটা, কালো না ফর্সা, লম্বা না বেঁটে তা নিয়ে অনাহূত ভাবে আক্রমণের শিকার হতে হয় অনেককেই। এ নিয়ে প্রতিবাদ হয় বিস্তর। এই আক্রমণ অনেক সময় পারিবারিক বৃত্তে বা পরিচিত মহলে হয়। কিন্তু যখন কোনও তথাকথিত পরিচিত মুখের তরফে এই নিয়ে আক্রমণ হয়, তা আলাদা মাত্রা পায় বৈকি!
দিন কয়েক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েদের চেহারা নিয়ে বৈষম্যমূলক মন্তব্য করেছিলেন বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এক সঞ্চালিকা তথা গায়িকা। কটাক্ষ করে লিখেছিলেন, “গান গাওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় সুরেলা গলা, আর নাচের জন্য স্লিম ফিট বডি। ছাদে, খাটের উপর থপথপ করে চর্বিওয়ালা শরীর নিয়ে হাত নাড়ালে সেটা কুৎসিত লাগে দেখতে।”
এই গৃহবন্দি পরিবেশে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন। দিনভর স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকছেন। কখনও গান গেয়ে, কখনও নাচ করে তার ভিডিও আপলোড করছেন। হতে পারে সকলের সুরেলা গলা নয়। অথবা নাচের জন্য তথাকথিত স্লিম ফিট বডি নয়। তাতে কি আদৌ কিছু যায় আসে? মনের আনন্দে যিনি পারফর্ম করছেন, তাঁকে কি এভাবে আক্রমণ করা যায়? এর নামই হয়তো বডি শেমিং। সে কারণেই ওই গায়িকার ফেসবুক পোস্টের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে সোশ্যাল ওয়ালে। পরে যদিও সেই লেখা তিনি ডিলিট করে দেন। নিজের ওয়ালে প্রতিবাদ করেন স্বস্তিকা (Swastika) মুখোপাধ্যায়ও।
স্বস্তিকা ফেসবুকে লেখেন, “আমায় নাচলে কদর্য লাগবে বলে আমি নাচব না, আমার মধ্যে গ্রেস নেই তাই আমি নাচব না, আমি মোটা তাই আমি নাচব না, আমার গলায় সুর নেই তাই আমি গাইব না, আমায় ভালো দেখতে নয় তাই আমি ছবি তুলব না, আমি সাজতে পারি না তাই আমি সাজব না, আমায় দেখতে খারাপ তাই আমি ছবি পোস্ট করব না, কিন্তু আমি একজন মহিলা এবং একজন আর্টিস্ট হয়ে অন্য মহিলাদের প্রতি কুৎসিত মন্তব্য নিশ্চয়ই করব, জোর গলায় করব, তাদের চেহারা, গায়ের মাংস, কণ্ঠ, জামাকাপড়, সাজগোজ সব কিছু নিয়ে অশালীন ভাবে কথা বলব, কারণ কথা বলার জন্য কোনো অ্যাসথেটিক্সের প্রয়োজন হয় না। জীবনে বাকি সবটায় অ্যাসথেটিক্স দরকার হয়।…আর সারা পৃথিবীতে যখন মহিলারা নিজের শরীর নিয়ে মন্তব্যের বিরুদ্ধে লড়ছে, হাড়গিলে, রোগা, থপথপে মোটা – লড়াইটা যখন সবার, আমারও বটে, আমার চেহারা মোটেও হিরোইনসুলভ নয়। সারাটাক্ষণ ‘ঝুলে যাওয়া বুক’ আর ‘হাতির মত পশ্চাৎদেশ’ নিয়ে কটুক্তি শুনতে হয়, আমি আমার ক্রাফট দিয়ে নিজেকে আলাদা করে রাখি, আমি যেটা পারি সেটা আমি এমন পারদর্শীতার সঙ্গে করি যে আমার চেহারা তুচ্ছ হয়ে যায়৷ যে যেটা পারে সে সেটা মন দিয়ে করুক, যে যেটা পারে না তারাও করুক, আগে মুক্তি পাই সবাই তারপর বাকিটা দেখা যাবে।…”
শুধু নিজে প্রতিবাদ করেই থেমে থাকেননি স্বস্তিকা। বরং সকলকে এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।