ADVERTISEMENT
home / Our World
ট্রাম: কলকাতার ঐতিহ্য দীর্ঘজীবী হোক আধুনিকতার মোড়কে!

ট্রাম: কলকাতার ঐতিহ্য দীর্ঘজীবী হোক আধুনিকতার মোড়কে!

কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে যতটা রসগোল্লা আর মিষ্টি দইয়ের যোগ, ততটাই কিন্তু ট্রামেরও! কিন্তু আজ আমরা সেই ঐতিহ্য (Heritage) ভুলতে বসেছি। তাই তো এক সময় কলকাতার রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানো ট্রাম আজ প্রায় জায়গা পেয়েছে মিউজিয়ামে। একে-একে নানা অজুহাতে উপড়ে ফেলা হয়েছে ট্রামের লাইনগুলি। সেখানে কখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সুউচ্চ উড়ালপুল, তো কখনও মেট্রো। কিন্তু এই ভাবে যদি একে-একে আমরা কলকাতার আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই সব ঐতিহ্য মুছে ফেলি, তা হলে বাঙালি হিসেবে আমাদের কোনও অস্তিত্ব থাকবে কি? 

ঘোড়ায় টানা থেকে বৈদ্যুতিন ট্রাম

tram

image courtesy: facebook

সারা দেশের মধ্যে কলকাতাই এমন শহর যেখানে আজও tram-এর ঘন্টি শোনা যায়। বাকি শহরে তো এই লৌহ যানের কোনও অস্তিত্বই নেই। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যায়, এশিয়ার মধ্যে প্রথম ট্রাম চলাচল শুরু হয় এই কলকাতাতেই, সময়টা ১৯০২ সাল। মূলত তদানীন্তন বাংলার বড়লাট লর্ড কার্জনের উদ্যোগে শুরু হয় এই যাত্রা। যদিও এর ২৯ বছর বছর আগে থেকেই কলকাতায় ট্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের একটা চেষ্টা শুরু হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৮৭৩ সালে শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩.৯ কিমি রাস্তা ব্যাপী ট্রাম লাইন পাতা হয়েছিল। শুরু হয়েছিল পরিষেবাও। তখন ঘোড়ার টানত সেই ট্রাম! কিন্তু টাকার অভাবে সেসময় বন্ধ হয়ে যায় ট্রাম চলাচল। এরপর ১৮৮০ সালে আর একবার চেষ্টা চলানো হয়েছিল। কিন্তু সেবার বেশিদিন কলকাতার রাস্তায় ট্রামের দেখা মেলেনি। শেষে ১৯০২ সালে বৈদ্যুতিন ট্রামের যাত্রা শুরু।

ADVERTISEMENT

কিন্তু লর্ড কার্জন, যাঁকে আপামর বাঙালি চেনে বঙ্গভঙ্গের কারিগর হিসেবে, তিনি হঠাৎ এই ট্রাম ব্যবস্থা শুরু করতে গেলেন কেন? নাঃ, এই পোড়া বাংলার লোকজনের কথা আদৌ ভাবেননি তিনি! বরং ভেবেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কথাই! আসলে কলকাতা তখন বন্দর শহর। গঙ্গায় নিত্য-নতুন মালবাহী জাহাজ এসে ভিড়ত। সেই জাহাজ থেকে মালপত্র নামিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত কোম্পানি বাহাদুরের বিভিন্ন গুদামে পৌঁছনোর জন্য একটি ডেডিকেটেড যানের প্রয়োজন ছিল। সেই কারণেই মূলত ট্রামব্যবস্থা তৈরির কথা ভেবেছিলেন কার্জন! সে ময় ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত ছিল ট্রাম যোগযোগ ব্যবস্থা, যা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পরে কলকাতার অন্যান্য প্রান্তেও। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কলকাতা শহর তার সঙ্গীর হাত ছাড়েনি। 

আরও পড়ুন: বলিউডের এই ১৫টি ছবিতে ফুটে উঠেছে কলকাতার সৌন্দর্য আর সংস্কৃতি

কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি বা “সি টি সি” (CTC) এর ইতিহাসও কম চমকপ্রদ নয়

ট্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থার সেই শুরুর দিন থেকেই তার লাগাম এই কোম্পানিটির হাতে। আজও কলকাতার মুষ্টিমেয় কিছু রুটে যে ট্রাম চলে, তা নিয়ন্ত্রণ করে এই সি টি সি-ই। কিন্তু মজার বিষয় কী জানেন, এই কোম্পানিটির জন্ম এ রাজ্যে নয়। ১৮৮০ সালে লন্ডনে রেজিস্টার করা হয় এই কোম্পানির নাম। এর প্রায় ৮৭ বছর পরে ১৯৬৭ সালে রাজ্য সরকার নিজের অধীনে নিয়ে আসে ট্রাম কোম্পানিকে।

ক্লাস ছিল, আজ নেই

tram-2
সেই শুরুর দিন থেকেই ট্রামে ছিল দুটো আলাদা কামরা। প্রথমটা ফার্স্ট ক্লাস, যার ভাড়া একটু বেশি। আর দ্বিতীয়টা সেকেন্ড ক্লাস। সেভাবেই এতদিন চলছিল। এই নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেনি কেউই। শেষে ২০১৩ সালে এসে টনক নড়ে অনেকের। স্বাধীন সমাজে এখনও এমন ক্লাস সিস্টেম থাকলে যে নাক কাটা যাবে বাঙালির! তাই সে বছরের ১৫ অগস্ট থেকে তুলে দেওয়া ক্লাস সিস্টেম। সেই থেকে ট্রামে আর ফার্স্ট বা সেকেন্ড ক্লাস নেই, সবই এক।

ADVERTISEMENT

আরও পড়ুন: দূর্গা পুজোর সময় কলকাতায় আবার চলতে পারে ডাবল ডেকার বাস!

শেষ হয়েও হইল না শেষ

এক সময় কলকাতার রাস্তায় যেখানে শুধু ট্রামেরই দেখা মিলত, সেখানে আজ সেই সংখ্যাটা একশোরও নীচে এসে এসে দাঁড়িয়েছে। কলকাতার বেশ কিছু ট্রাম ডিপো থেকে কম বেশি ১২৫টি ট্রাম এখন বিশেষ কিছু রুটে চলছে। বর্তমানে শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা, বিধাননগর থেকে হাওড়া, গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা, খিদিরপুর থেকে শহিদ মিনার, টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ এবং রাজাবাজার থেকে বিধাননগর পর্যন্ত ট্রাম পরিষেবা চালু রয়েছে। এছাড়াও শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এক কামরার একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ট্রামও চলে।

ট্রামকে কি সত্যিই বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়?

যত দিন যাচ্ছে ট্রামের আয় কমছে চোখে পড়ার মতো। পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যাত্রী সংখ্যা ৭৫ হাজার থেকে কমে এসে দাঁড়়িয়েছে ১৫ হাজারে! কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এই এসি সিঙ্গল কোচ ট্রাম চালানোর পর থেকে ওই একটি রুটে ট্রাম কোম্পানির আয় বেড়েছে চোখে পড়ার মতো! একটি দুই কামরার সাধারণ ট্রামের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ২৮ ফুটের মতো। সেখানে এসি সিঙ্গল কামরার ট্রামের দৈর্ঘ্য ৩৬ ফুট! সাধারণ ট্রামে যেখানে ন্যূনতম ভাড়া ৬ টাকা, এসি ট্রামে তা ২০ টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই চাঁদিফাটা গরমে এসি ট্রামে লোকে চাপছেন! এসি ট্রামটি লাভও করেছে প্রায় সাধারণ ট্রামের তিন গুণ! সুতরাং, ট্রাম ব্যবস্থা অকেজো, আধুনিক জীবনে মেট্রোই সেরা, একথা বলা ভুল। আসলে ট্রাম চালু রাখাটাও সম্ভব! প্রয়োজন শুধু ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা এবং টেকনোলজির সঠিক মেলবন্ধন (Makeover)! 

তা হলেই কলকাতার এই সুপ্রাচীন যানটি আর পথ হারাবে না!

ADVERTISEMENT

picture courtesy: youTube, wikipedia, Instagram

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!

03 Jun 2019

Read More

read more articles like this
good points

Read More

read more articles like this
ADVERTISEMENT