মাছ (fish) খেতে ভালোবাসেন না, এরকম বাঙালি (bengali) খুঁজে পাওয়া দুস্কর. সেজন্যই বোধ হয় “মাছে ভাতে বাঙালি” -এই কথাটির প্রচলন হয়েছে. বাঙালির (benagli) রোজকার খাবারে তো নানারকম মাছের (fish) পদ (recipes) থাকেই, মাছ ভাজা (fried fish) থেকে আরম্ভ করে মাছের ঝোল, ঝাল, সর্ষেবাটা মাছ – আরো না জানি কতকিছু. সামনেই বড়দিন (Christmas), আর বড়দিন (Christmas) মানেই উৎসব, আর উৎসব মানেই খাওয়া দাওয়া. তা বাঙালির (bengali) খাওয়া দাওয়াতে মাছের (fish) পদ (recipes) না থাকলে হয় নাকি? আর উৎসবের দিনেও যদি সেই রোজকার মাছের ঝোল খেতে হয়, তাহলে তো খুব মুশকিল! তাই আজ মাছের (Fish) এমন কয়েকটা Delicious Recipes নিয়ে এসেছি, যাতে আপনার বড়দিনের (Christmas) উৎসব হয়ে ওঠে আরো বেশি সুস্বাদু!
আরো পড়ুনঃ পিঠেপুলি ও পায়েসের দুর্দান্ত রেসিপি
শুরু করা যাক তাহলে!
১| তোপসে মাছের ফ্রাই (Topse Fish Fry)
তোপসে মাছের ফ্রাই (Topse Fish Fry) এমন একটা পদ (recipes), যার নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়. কাসুন্দি, টমেটো সস এবং ধনেপাতার চাটনির সাথে পরিবেশন করার জন্য এর থেকে ভালো স্টার্টার ভোজনরসিক বাঙালির কাছে আর কিছু বোধয় নেই.
উপকরণ (ingredients)
তোপসে মাছ – ৫ টা
রসুন – ৮০-১০ কোয়া
আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
বেসন – ২ কাপ
সাদা তেল – ২ কাপ (ভাজার জন্য)
নুন – ২ চা চামচ কিংবা আপনার স্বাদ অনুযায়ী
কাঁচা লঙ্কা – ৪-৫ টা
জল – এক কাপ
কালোজিরে – ১ চা চামচ
ধনেপাতা কুচি – ১ বাটি
প্রণালী (method)
তোপসে মাছগুলোকে (topse fish) ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন. এবার একটা ধারালো ছুরি দিয়ে মাছের দু’পিঠেই আড়াআড়িভাবে চিরে দিন. একটা গ্রাইন্ডারে রসুন কোয়া, ধনেপাতা কুচি আর কাঁচা লংকার পেস্ট বানিয়ে নিন. এর মধ্যে আদা বাটা মিশিয়ে এই পেস্টটা দিয়ে মাছ (fish) গুলোকে ভালো করে ম্যারিনেড (marinade) করুন. ম্যারিনেড (marinade) করে দেড়-দু’ঘন্টা রাখতে হবে. এবারে বেসনে জল দিয়ে একটা ব্যাটার তৈরী করুন. খেয়াল রাখবেন যেন ব্যাটারটা খুব বেশি ঘন বা খুব পাতলা না হয়. ব্যাটারে কালোজিরে আর নুন মেশান. এবারে একটা কড়াইতে তেল গরম করুন. এবারে একটা করে তোপসে মাছ নিয়ে বেসনের ব্যাটারে ডুবিয়ে গরম তেলে ছাড়ুন. এক বারে একটা করে মাছই (fish) ভাজুন. ডুবো তেলে ৩-৫ মিনিট মাছ ভাজতে হবে. এভাবে বাকি মাছগুলোও ভাজুন. গরম গরম তোপসে মাছের ফ্রাই (topse fish fry) ধনেপাতার চাটনি আর কাসুন্দির সাথে পরিবেশন করুন.
২| মাছের বিরিয়ানি (Fish Biryani)
চিকেন বা মাটনের বিরিয়ানি তো খেয়েছেন, মাছের বিরিয়ানি (fish biryani) খেয়েছেন কখনো? দেখে নিন কিভাবে করবেন মাছের বিরিয়ানি.
উপকরণ (Ingredients)
মাছের জন্য (for fish)
মাছের ফিলে – ১ কিলো (২ ইঞ্চি কিউব করে কাটা)
পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
গোটা জিরে – ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো – ১ টেবিল চামচ
গরম মশলা – ১ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
হলুদ – ১ চা চামচ
তেল – ২ টেবিল চামচ
জল ঝরানো টক দই – ১ কাপ
নুন – স্বাদমতো
ধনেপাতা – ১ কাপ (কুচিকুচি করে কাটা)
কাঁচা লঙ্কা – স্বাদমতো (কুচিকুচি করে কাটা)
বিরিয়ানি মশলা – ১ চা চামচ
বেরেস্তা – আধ কাপ
ভাতের জন্য (for rice)
চাল – ২ কাপ (ধোয়া এবং জল ঝরানো)
তেল – ২ টেবিল চামচ
লবঙ্গ – ৪-৫ টা
গোলমরিচ – ৪-৫ টা
দারচিনি – ১ টা স্টিক (ছোট করে ভাঙা)
ছোট এলাচ – ৪-৫ টা
নুন – ১ চা চামচ
গরম জল – ৪ কাপ
জাফরান মেশানো গরম দুধ – ১ কাপ
প্রণালী (Method)
মাছ রান্না (to cook the fish)
একটা করাইতে তেল গরম করে জিরে ফোড়ন দিন. এরপর পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা দিয়ে ভালো করে কষান. কষতে কষতে যখন তেল আর মশলা আলাদা হয়ে যাবে তখন গরম মশলা, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ, নুন আর দই দিয়ে কিছুক্ষন ভাজুন. এরপর দেখবেন আবার তেল ছাড়ছে. তেল ছেড়ে গেলে মাছের (fish) টুকরোগুলো দিয়ে দিন. আঁচ বাড়িয়ে দিয়ে মাছগুলো ভাজুন. এরপর একে একে বেরেস্তা, ধনেপাতা কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি এবং বিরিয়ানি মশলা দিয়ে নাড়তে থাকুন. হয়ে গেলে আলাদা সরিয়ে রাখুন.
ভাত রান্না (to cook the rice)
তেলের মধ্যে লবঙ্গ, গোলমরিচ, এলাচ এবং দারচিনি ফোড়ন দিন. একটু লালচে হয়ে এলে আগে থেকে ধুয়ে রাখা চাল, জল আর নুন দিয়ে দিন. এরপর কিছুক্ষনের জন্য ঢাকা দিয়ে দিন. ভাত রান্না করার সময় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে ভাত যেন গোলে না যায়, কিন্তু সেদ্ধ হয়.
বিরিয়ানি রান্না (the final touch)
এবার হলো আসল রান্না. একটা বড় পাত্রে (ডেকচি বা হাঁড়ি) ভাত আর মাছের (fish) লেয়ার তৈরী করুন, অর্থাৎ একবার মাছ দিন তার ওপরে ভাত, এই ভাবে কয়েকটা লেয়ার তৈরী করুন. এরপর ওপর থেকে জাফরান মেশানো দুধ ছড়িয়ে দিন. পাত্রের ঢাকনা ভালো করে বন্ধ করে একটা তাওয়ায় কম আঁচে মিনিট ১৫ দমে বসিয়ে রাখুন. বিরিয়ানির গন্ধ ছাড়লে একটা হাতা দিয়ে ভালো করে লেয়ার গুলো ভেঙে মিশিয়ে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন মাছের বিরিয়ানি.
৩| দই মাছ (fish with curd)
মাছের এই রেসিপিটা (recipes) একটু টক-টক খেতে হয়. বড়দিনের (Christmas) লাঞ্চের (lunch) জন্য একেবারে পারফেক্ট!
উপকরণ (Ingredients)
রুই মাছ – ১ কিলো
ম্যারিনেশনের জন্য (for marinating)
হলুদ গুঁড়ো – আধ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো – ৩/৪ চা চামচ
সর্ষের তেল – ২ টেবিল চামচ
নুন – স্বাদ মতো
মাছের গ্রেভির জন্য (for the gravy)
তেজ পাতা – ২-৩টি
দারচিনি – এক টুকরো
লবঙ্গ – ৩-৪ টি
ছোট এলাচ – ৩-৪ টি
গোটা জিরে – আধ চা চামচ
হলুদ – আধ চা চামচ
আদা-রসুন বাটা – ১ চা চামচ
পেঁয়াজ – ১ টা
দই – ৫০০ গ্রাম
সর্ষের তেল – ২ টেবিল চামচ
নুন – স্বাদ অনুযায়ী
ধনেপাতা কুচি – সাজানোর জন্য
প্রণালী (Method)
ম্যারিনেশন
মাছের (fish) টুকরোগুলো ভালো করে ধুয়ে হলুদ, নুন, লঙ্কাগুঁড়ো এবং এক চামচ তেল দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে রাখুন. এভাবে মিনিট ১৫ রেখে দিন. এবার অন্য একটা পাত্রে দইটা নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে রেখে দিন.
রান্না
একটা ফ্রাইং প্যানে দু’টেবিল চামচ সর্ষের তেল নিয়ে ভালো করে গরম করুন. ধোঁয়া উঠলে ম্যারিনেড (marinade) করা মাছগুলো (fish) এপিঠ-ওপিঠ করে ভেজে নিন. গোল্ডেন রং ধরলে একটা প্লেটে তুলে রেখে দিন. এবার ওই একই প্যানে বাকি তেলটা দিয়ে গরম হলে একে একে তেজপাতা, লবঙ্গ, ছোট এলাচ, দারচিনি এবং জিরে দিয়ে ফোড়ন দিন. এরপর পেঁয়াজ বাটা, আদাবাটা, রসুন বাটা দিয়ে কষে নিন. প্রয়োজনে একটু একটু জলের ছিটে দিয়ে কষুন. তেল ছাড়তে আরম্ভ করলে ফেটিয়ে রাখা দইটা দিয়ে নাড়তে থাকুন. কিছুক্ষন কষানোর পরে ভেজে রাখা মাছ গুলো দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন. এভাবে কম আঁচে ৫-৭ মিনিট রান্না করুন. দেখবেন তেল ভেসে উঠছে. তার মানে আপনার দই মাছ (fish with curd) তৈরী. গরম গরম সাদা ভাতের সাথে পরিবেশন করলে বড়দিনের (Christmas) দুপুরের খাওয়াটাই (lunch) জমে যাবে!
৪| ডাব চিংড়ি (Prawn in Tender Coconut)
চিংড়ি মাছ (prawn) খেতে ভালোবাসেনা এরকম কেউ আছে নাকি? কিন্তু ডাব চিংড়ি বাড়িতে বানানো শক্ত, তাই ভাবছেন তো? একেবারেই না! সহজ করে করা যায়. বিশ্বাস হচ্ছে না? চিংড়ি (prawn)-প্রেমীদের জন্য রইলো এই রেসিপিটা (recipes).
উপকরণ (Ingredients)
চিংড়ি মাছ (prawn) – ৫০০ গ্রাম (খোসা ছাড়ানো এবং ভালো করে পরিষ্কার করা)
ডাব – ১টা (বড়)
পেঁয়াজ – ১ টা (ছোট)
রসুন – ২ কোয়া
কাঁচা লঙ্কা বাটা – আধ চা চামচ
সর্ষে বাটা – ২ টেবিল চামচ
পাঁচফোড়ন – এক চিমটি
সর্ষের তেল – ৩-৪ টেবিল চামচ
সামান্য হলুদ এবং স্বাদানুসারে নুন
এলুমিনিয়াম ফয়েল (ডাবের মুখ বন্ধ করার জন্য)
প্রণালী
ডাবের মুখটা চওড়া করে কেটে নিয়ে ভেতর থেকে জল আর স্বাস বার করে নিন. মাথাটা আলাদা করে রেখে দিন. এবারে একটা কড়াইতে তেল গরম করে পাঁচ ফোড়ন দিন. ফোড়ন হয়ে গেলে পেয়াজ এবং রসুন দিয়ে ভাজতে থাকুন. ভাজা হয়ে গেলে একটা বড় মিক্সিং বোলে ভাজা মশলাগুলো ঢেলে নিয়ে তাতে সর্ষে বাটা, লঙ্কা বাটা, হলুদ, নুন, নারকোলবাটা আর ডাবের জল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন. এর মধ্যে এবারে চিংড়ি (prawn) মাছ গুলো দিয়ে দিন. এবারে পুরো মিশ্রণটাকে ডাবের ভেতরে ভরে মুখ বন্ধ করে এলুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢেকে দিন. ২২০ ডিগ্রিতে মাইক্রোওয়েভ প্রি-হিট করে রাখুন আগে থেকে. প্রি-হিট হয়ে গেলে সাবধানে মাইক্রোওয়েভ-এ দিয়ে ৩০ মিনিট রান্না করুন.
৫| তেল কৈ
শীতকালে কৈ মাছের নানা পদ (recipes) বাঙালির পাতে পর্বেই, কিন্তু তেল কৈ হলে তো আর কথাই নেই. এই রেসিপিটা (recipes) খেতে যতটা ভালো, রান্না করাও কিন্তু ততটাই সহজ. জেনে নিন রেসিপিটা (recipes).
উপকরণ (Ingredients)
কৈ মাছ – ৫ টা
জিরে বাটা – ২ টেবিল চামচ
শুকনো লঙ্কা – ২ টো
কাঁচা লঙ্কা – ৩-৪টে
লঙ্কা গুঁড়ো – আধ চা চামচ
সর্ষের তেল – ১ কাপ
হলুদ – ২ চা চামচ
নুন – স্বাদানুসারে
প্রণালী (Method)
কৈ মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন. এবারে একটা চওড়া পাত্রে (থালা হলে ভালো হয়) মাছগুলোকে (fish) পাশাপাশি রেখে সব মশলার একটা পেস্ট তৈরী করে পেস্টটা মাছে ভালো করে মাখিয়ে নিন. সামান্য কাঁচা সর্ষের তেল দেবেন. এভাবে আধ ঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট মতো ম্যারিনেড (marinade) করে রেখে দিন. এবারে একটা কড়াইতে তেল গরম করে গোটা জিরে ফোড়ন দিন. মশলা মাখানো মাছ (fish) গুলো দিয়ে ঢেকে দিন. আঁচ কমিয়ে রাখবেন, নাহলে পুড়ে যেতে পারে. মাঝে মাঝে ঢাকা খুলে দেখে নিন যে মাছ গুলো ঠিক করে ভাজা হচ্ছে কিনা. এপিঠ ওপিঠ করুন মাঝে মাঝে. সাবধানে করবেন কারণ কৈ মাছ থেকে তেল ছেটে. মাছ ভাজা ভাজা হয়ে এলে (রং পরিবর্তন হলে বুঝবেন যে মাছ ভাজা হয়ে গেছে) বাকি মশলাটা দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন. ২-৩ মিনিট এভাবে রেখে একবার দেখুন যে মাছ থেকে তেল ছাড়ছে কিনা, আর ব্রাউন রং ধরেছে কিনা. যদি রান্নাটা ব্রাউন হয়ে আসে এবং মাছ থেকে তেল ছাড়ে, তাহলে বুঝবেন যে আপনার তেল কৈ তৈরী. ওপর থেকে ধনেপাতা কুচি আর কাঁচা লঙ্কা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন.
কেমন লাগলো মাছের এই রেসিপিগুলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু! বড়দিনের জন্য আগাম শুভেচ্ছা POPxo-র তরফ থেকে…
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!