খাবার পাতে কোনওদিন পেঁপে সেদ্ধ বা পেঁপের তরকারি দেখে নাক কুঁচকেছেন নাকি অথবা স্কুলের লাঞ্চে পাকা পেঁপে দেখে মন খারাপ হয়েছে? আমার তো হয়েছে বাবা! তবে পেঁপে, সে কাঁচাই হোক বা পাকা, এই ফলটির কিন্তু গুণ অনেক! পেটের সমস্যা দেখা দিলে বেশিরভাগ বাঙালি বাড়িতেই পেঁপের ঝোল খাওয়ানো হয়, আর অদ্ভুতভাবে কিন্তু পেটের গোলমাল কমেও যায়! পেঁপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং আরও নানা পৌষ্টিক উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে পুষ্টি তো জোগায়ই তার সঙ্গে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে এবং টক্সিন দূর করে আমাদের শরীরের নানা রোগব্যাধি দূর করতেও সাহায্য করে। তা ছাড়া পাকা পেঁপে শুধু খেতেই নয়, রূপচর্চার ক্ষেত্রেও বিশেষ উপকারী। পেঁপের আর কী-কী গুণ আছে (Benefits of Papaya In Bengali) সবই জানব একে-একে।
আরও পড়ুনঃ HIV/AIDS এর লক্ষণগুলো কী কী?
সুস্বাস্থ্যের জন্য পেঁপের উপকারিতা
পেঁপের কোনো অপকারিতাও আছে নাকি?
পেঁপে সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নোত্তর
পেঁপে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ-তে সমৃদ্ধ। একটি মাঝারি আকারের পেঁপের যা-যা পুষ্টিগুণ আছে,
ক্যালোরি - ১২০
কার্বোহাইড্রেট - ৩০ গ্রাম
ফাইবার - ৫ গ্রাম
প্রোটিন - ২ গ্রাম
পেঁপের পুষ্টিগত গুণাবলীর কথা তো জানলেন, কিন্তু ত্বকের যত্নে কীভাবে পেঁপে উপকারী সেকথা কি জানেন?
হ্যাঁ, পেঁপে কিন্তু একটি ন্যাচারাল ময়শ্চারাইজার। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকে। ফলে পেঁপে খেলেই যে শুধু উপকার পাওয়া যায় তা নয়, ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও পেঁপে সাহায্য করে। কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে ভাল করে ব্লেন্ড করে তাতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে নিন। সপ্তাহে দু’তিন বার ওই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
অনেকেরই একটা বয়সের পর ত্বকে বলিরেখার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক রকমের অ্যান্টি-রিঙ্কল ক্রিম ব্যবহার করেও যদি ফল না পান, সেক্ষেত্রে আপনি ঘরোয়া টোটকা হিসেবে কিন্তু পেঁপে ব্যবহার করতে পারেন। পেঁপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা অকালে ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। সামান্য পাকা পেঁপে থেঁতো করে নিয়ে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে ভাল করে মুখে মালিশ করে নিন। যখন মালিশ করবেন, খেয়াল রাখবেন যেন আঙুলের ডগা দিয়ে সার্কুলার মোশনে মালিশটা হয়। নিয়মিত করলেই বলিরেখা দূর হবে।
ত্বকে ব্রণ-ফুসকুড়ি হয় দূষণ এবং নানা ময়লা থেকে। ঠিকভাবে যদি আমরা ত্বকের যত্ন না নিই, বারবার করে মুখ না ধুই, মেকআপ ঠিকভাবে না তুলি, ত্বক তৈলাক্ত হয়, এসব নানা কারণে আমাদের ত্বকে ময়লা জমতে থাকে এবং এর ফলেই ব্রণ, ফুসকুড়ি, অ্যাকনের মতো নানা সমস্যা শুরু হয়। অনেকরকমের প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পরেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এই সমস্যার সমাধান তো হয়ই না, বরং আরও চারটে সমস্যা তৈরি হয়! ঘরোয়া টোটকা হিসেবে কিন্তু পেঁপে ব্যবহার করতে পারেন। পেঁপে শরীরের টক্সিন বা দূষিত পদার্থ দূর করে ফলে ত্বকও থাকে সুস্থ!
আপনার ত্বক যদি সংবেদনশীল হয়, তা হলে স্থান-কাল-পাত্রভেদে আপনাকে যে ত্বকের সমস্যায় পড়তে হয় সেকথা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, কাঁচা পেঁপে দিয়ে আপনি sensitive skin-এর নানা সমস্যা দূর করতে পারেন? কাঁচা পেঁপেতে প্যাপাইন নামে একটি এনজাইম রয়েছে যা ত্বকের জ্বালা-পোড়া, চুলকানি, র্যাশ ইত্যাদি দূর করতে খুবই কার্যকরী। কয়েক টুকরো কাঁচা পেঁপে নিয়ে ভাল করে ধুয়ে থেঁতো করে নিন। এবারে কিছুক্ষন ওই থেঁতো করা পেঁপে মুখে মেখে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। যদি আপনার ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়, সেক্ষেত্রে পাকা পেঁপে ব্যবহার করুন।
উজ্জ্বল দাগ-ছোপহীন ত্বকের অধিকারিণী হতে কে না চায়? কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন স্ট্রেস, দূষণ এবং জীবনযাত্রার প্রভাব আমাদের ত্বকের উপরে পড়ে এবং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য দিন-দিন কমতে থাকে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে এবং এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মালিশ করুন। সপ্তাহে দুবার করে নিয়মিত কিছুদিন করলে নিজেই তফাতটা দেখতে পাবেন।
চুলের যত্নেও যে পেঁপে খুবই উপকারী সেকথা কি জানেন?
একটু-আধটু চুল আমাদের সবারই পড়ে, কিন্তু সেখানে নতুন চুল না গজালে তখন সেটাকে hair fall-এর সমস্যা বলা যায়। বাজারচলতি অনেক প্রোডাক্টই আছে যেগুলো দাবি করে যে, তা দিয়ে চুল পড়ার সমস্যার সমাধান করা যায়। তবে ঘরোয়া টোটকার চেয়ে ভাল কিছু হয় না। পেঁপে কিন্তু চুল পড়ার সমস্যা সমাধান করে। তিন টেবিল চামচ পাকা পেঁপের পেস্ট, এক টেবিল চামচ মধু আর এক টেবিল চামচ নারকেলের দুধ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ঘণ্টাখানেকের জন্য ওই প্যাক চুলে ভাল করে লাগিয়ে নিন। পরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। নিয়ম করে বেশ কিছুদিন করলে চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
পেঁপের বীজ খুশকি দূর করতে খুবই কার্যকরী। একটা ছোট মাপের পেঁপের অর্ধেকটা বীজ সহ পেস্ট করে নিয়ে ভাল করে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। ঘণ্টাখানেক পর মাইল্ড কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। পেঁপের বীজে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা স্ক্যাল্পের ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর করে খুশকির সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে।
আগেই বলা হয়েছে পেঁপে নানারকমের মিনারেল, ভিটামিন এবং এনজাইমে সমৃদ্ধ। নিয়ম করে পাকা পেঁপে খেলে শরীরে নানা ভিটামিন, মিনারেল এবং এনজাইমের ঘাটতি পূরণ হয়। পেঁপে একটি ন্যাচারাল হেয়ার কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে। পাকা পেঁপের পেস্ট এবং নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে লাগালে তা চুলে কন্ডিশনারের কাজ করে। এই প্যাক লাগানোর পর কিন্তু অবশ্যই শ্যাম্পু করে নেবেন।
কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে থেঁতো করে নিন। এবারে ওই থেঁতো করা পেঁপের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ টক দই মেশান। পেঁপে এবং টক দই ভাল করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে তা স্ক্যাল্পে, চুলের গোড়ায় এবং চুলের ডগা পর্যন্ত ভাল করে লাগান। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলএর টেক্সচার নরম হবে এবং চুলে একটা আলাদা জেল্লা আসবে।
আগেই বলেছি, যাঁরা পেটের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা যদি নিয়মিত পেঁপে খান, তা হলে তাঁদের এই সমস্যা অনেকটাই কমে। পেঁপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। এছাড়াও পেঁপের মধ্যে অন্যান্য ফল বা সব্জির তুলনায় অনেকটাই বেশি পরিমাণে ক্যারোটিন থাকে।
যাঁরা মধুমেহ বা ডায়াবেটিসের শিকার, তাঁরা অনেক ফলই খেতে পারেন শুধুমাত্র এই কারণে যে সেগুলো মিষ্টি। কিন্তু পেঁপে একমাত্র মিষ্টি ফল, যা সেই সব মানুষরাও খেতে পারেন যাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি অর্থাৎ যাঁরা ডায়াবেটিক।
এছাড়াও পেঁপে হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, কানের ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে, চোখের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং সর্দিকাশি থেকেও মুক্তি দেয়।
পেঁপেতে যেহেতু পটাশিয়ামও রয়েছে, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হাইপার টেনশন কমাতেও সাহায্য করে।
শুধু কি পেটের সমস্যার সমাধানে, পেঁপে অতিরিক্ত ওজন কমাতেও কিন্তু সাহায্য করে! যেহেতু পেঁপের মধ্যে অন্যান্য ফলের তুলনায় ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে, কাজেই আপনি যত খুশি পেঁপে খেতে পারেন কিন্তু ওজন বাড়বে না। তা ছাড়া পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি।
ঝটপট যদি বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে চান, তা হলে প্রতিদিন প্রাতঃরাশে এক বাটি পাকা পেঁপে খান। সকালবেলা উঠেই যদি পেঁপে খেতে ইচ্ছে না করে, তা হলে দুপুরের খাবারের আগে এক বাটি পাকা পেঁপে খেতে পারেন অথবা সন্ধেবেলা খিদে পেলেও এক বাটি পাকা পেঁপে খেতে পারেন।
অতিরিক্ত কাঁচা পেঁপে খেলে শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেঁপে কিন্তু গর্ভবতী নারীদের জন্যও ক্ষতিকর। পেঁপে খেলে গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
পাকা পেঁপের বীজ শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে কারপাইন নামক একটি এনজাইম রয়েছে যা মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন রোধ করে কার্ডিয়াক ডিপ্রেশন বা প্যারালাইসিস পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
কাঁচা পেঁপের রস বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। কাঁচা পেঁপের নির্যাস শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এটি পান করলে বদহজম, বিষক্রিয়া ও তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
১| প্রশ্ন: প্রতিদিন কি পেঁপে খাওয়া যায়?
উত্তর: কোনও কিছুই প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে কাঁচা পেঁপে প্রতিদিন না খাওয়াই ভাল। যদিও কাঁচা পেঁপে সেদ্ধ বা তরকারি খেলে পেটের নানা ধরনের সমস্যার উপশম হয়, কিন্তু প্রতিদিন খেলে লিভারের সমস্যা হতে পারে। কারণ, আপনার লিভার তখন অন্য কোনও খাবার আর হজম করতে পারবে না। তবে পরিমিতভাবে আপনি পাকা পেঁপে প্রতিদিন খেতেই পারেন।
২| প্রশ্ন: দিনের মধ্যে কোন সময়ে পেঁপে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়?
উত্তর: সকালে প্রাতঃরাশের সঙ্গে আপনি ফল হিসেবে দু’টুকরো পেঁপে খেতে পারেন। এরপর যেমন দুপুরের খাবার খান তেমন খেলেন। অথবা প্রাতঃরাশে যদি ফল না খান, তা হলে মিড-মর্নিং স্ন্যাক হিসেবে অর্থাৎ প্রাতঃরাশ আর দুপুরের খাবারের মাঝের সময়ে কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে খেতে পারেন। যদি ইচ্ছে করে রাতের খাওয়ার তিন ঘণ্টা আগে কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে খেতে পারেন। সকাল ৪টে থেকে রাত ৯টার মধ্যে যে-কোনও সময়ে আপনি পাকা পেঁপে খেতে পারেন।
৩| প্রশ্ন: খালি পেটে কি পাকা পেঁপে খাওয়া যায়?
উত্তর: পেঁপে শরীরের ভিতর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। আপনি যদি খালি পেটে পাকা পেঁপে খান, তা হলে খুব সহজেই আপনার শরীরের টক্সিন বেরিয়ে আসবে। পেঁপে খাওয়ার আগে এবং পরে অন্তত ৪৫ মিনিটের একটা গ্যাপ দিন অন্য খাবার খাওয়ার জন্য।
৪| প্রশ্ন: পেঁপে খাওয়ার পর কি জল খাওয়া যায়?
উত্তর: কোনও ফল খাওয়ার পরেই সঙ্গে-সঙ্গে জল খাওয়া উচিত নয়। এতে হজমের সমস্যা হতে পারে। আপনি পেঁপে খাওয়ার পর তরমুজ অথবা শশা খেতে পারেন এবং তার অন্তত মিনিটপনেরো পর জল খেতে পারেন।
৫| প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় কি পেঁপে খাওয়া যায়, নাকি তা খেলে মিসক্যারেজ হতে পারে?
উত্তর: এই মতবাদ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে পাকা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে, যেহেতু পাকা পেঁপে শরীরে পুষ্টি জোগায়। আবার কারও মতে, কাঁচা পেঁপে খেলে গর্ভপাত হতে পারে, কারণ কাঁচা পেঁপে নাকি ন্যাচারাল কন্ট্রাসেপ্টিভ! আমাদের মতে, গর্ভাবস্থায় কোন-কোন ফল খাওয়া উচিত এবং উচিত নয়, সে ব্যাপারে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!