প্রায় হাজার বছর ধরে নানা রোগের চিকিৎসায় নিম পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক স্টাডিতেও একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত, শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে চাঙ্গা রাখতে নিম পাতার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতেও নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু প্রশ্ন হল, নিম পাতায় এমন কী রয়েছে, যা এত উপকারে আসে?
এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে রয়েছে নিমবিন, Nimbinen, নিমবোলাইড এবং Nimandial-এর মতো অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। মজুত রয়েছে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ট্যানিক অ্যাসিডসহ একাধিক মিনারেলও, যা নানা ভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। বিশেষ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারে না। এছাড়াও কি নিম পাতা (Benefits Of Neem Leaves) আর কোনও কাজে আসে? আলবাত আসে! সে সম্পর্কে জানতে চোখ রাখুন বাকি প্রতিবেদনে।
আরো পড়ুনঃ থানকুনি পাতার অবাক করা গুণ
নিয়মিত নিম পাতা খেলে উপকার পাবেন এভাবে (Health Benefits of Neem Leaves)
নিম পাতা খাওয়া শুরু করলে উপরে আলোচিত উপকারগুলি তো মেলেই, সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু শারীরিক সমস্যাও (Benefits of Neem Leaves for Health) দূরে থাকতে বাধ্য হয়। যেমন ধরুন…
১| ভাইরাল ডিজিজ দূরে থাকবে (Prevents From Viral Infection)
নিয়মিত নিম পাতা (Neem Leaves) খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে ভাইরাল ফিবারের মতো রোগ ধরে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। নানা ধরনের সংক্রমণের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। তবে এমন উপকার পেতে নিম পাতা খাওয়ার পাশাপাশি যে জায়গায় ইনফেকশন হয়েছে, সেখানে নিয়মিত নিম পাতার পেস্ট লাগাতে হবে, তাহলেই ফল মিলবে হাতে-নাতে! নিম পাতায় রয়েছে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু বিরোধী নানা উপাদান, যা চিকেন পক্স এবং স্মল পক্সের মতো রোগের চিকিৎসাতেও নানা ভাবে কাজে আসে। আর যদি নিম পাতা ভেজানো জল দিয়ে নিয়মিত স্নান করা যায়, তাহলে একজিমার মতো রোগের প্রকোপ কমতে একেবারেই সময় লাগে না। এমনকী, নানা ধরনের ত্বকের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না।
২| হার্টের খেয়াল রাখে (Keeps Heart Healthy)
নিম পাতায় উপস্থিত নানা উপকারী উপাদান একদিকে যেমন ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, তেমনি সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ যাতে ঠিকমতো হয়, সেদিকেও নজর রাখে। ফলে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। সেই সঙ্গে অনিয়মিত হার্ট বিটের মতো সমস্যাও দূরে থাকে। ফলে অল্প বয়সেই হার্টের ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমন নানাবিধ হার্টের রোগও ধরে কাছে ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত এক দশকে আমাদের দেশে হার্টের রোগের প্রকোপ যে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পয়েছে, সে কথা প্রমাণ হয়ে যায় ২০১০ সালে প্রকাশিত Global Burden of Disease study-এর দিকে নজর ফেরালেই। এই সমীক্ষা অনুসারে আমাদের দেশে প্রতি বছর যতজন মানুষ মারা যান, তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৪.৮ শতাংশেই মৃত্যু ঘটে কোনও না কোনও হার্টের রোগের কারণে। আর ২০১০ সালে যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তাহলে আজকের ডেটে এদেশে হার্টের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যে অনেকটাই বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই এমন পরিস্থিতিতে হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার প্রয়োজন যে বেড়েছে, তা তো বলাই বাহুল্য!
৩| নানা ধরনের ফাঙ্গাল ডিজিজকে দূরে রাখে (Protects From Fungal Disease)
নিম পাতায় (Neem Leaves) প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যেমন রয়েছে, তেমনি এই প্রাকৃতিক উপাদানটি নানা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদানেও ঠাসা, যা ক্ষতিকর ফঙ্গাসদের নিমেষে মেরে ফেলে, যে কারণে ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি রিং ওয়ার্মের মতো ত্বকের রোগেও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, চুল, ত্বক এবং নখে কোনও ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন (Fungal Infection) হওয়ার আশঙ্কাও কমে। তাই তো বলি, এই বর্ষাকালে নানাবিধ সংক্রমণকে যদি দূরে রাখতে হয়, তাহলে নিয়মিত নিম পাতা খেতে ভুলবেন না যেন!
৪| ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় কাজে আসে (Drugs for Treatment of Malaria)
বর্ষাকালে মশার প্রকোপ খুব বেড়ে যায়, যে কারণে বছরের এই সময় ম্যালেরিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সময় থাকতে-থাকতে নিম পাতা খাওয়া শুরু করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ, এতে উপস্থিত Gedunin নামক উপাদান, ম্যালেরিয়ার মতো রোগকে দূরে রাখতে যেমন বিশেষ ভূমিকা নেয়, তেমনি ম্যালেরিয়ার চিকিৎসাতেও দারুণ কাজে আসে। আর যদি ঘরের প্রতিটা কোণায় অল্প করে নিম পাতা থেঁতো করে রেখে দিতেন পারেন, তা হলে নিমের (Neem) গন্ধে মশার উপদ্রব কমতে দেখবেন সময় লাগবে না।
৫| ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে (Prevents Cancer)
আমাদের দেশে যে হারে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তাতে আট থেকে আশি, সকলেরই যে নিয়মিত নিমপাতা খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, নিমে (Neem Leaves) রয়েছে Polysaccharides এবং Liomnoids নামে দুটি উপাদান, যা রক্তে মেশামাত্র ক্যান্সার এবং টিউমার কোষদের ধ্বংস করে দেয়। ফলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৬| বাতের যন্ত্রণা কমবে (Heal Arthritis Pain)
নিম পাতায় (Neem Leaves) রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে প্রদাহের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে বাতের যন্ত্রণা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিমপাতা খাওয়ার পাশাপাশি যদি ব্যথা জায়গায় নিয়মিত নিম তেল লাগিয়ে মিনিটপাঁচেক ভাল করে মালিশ করা যায়, তা হলেও কষ্ট কমতে একেবারেই সময় লাগে না। বিশেষ করে পিঠের ব্যথা এবং Osteoarthritis-এর যন্ত্রণা কমে নিমেষেই।
আরও পড়ুনঃ কালমেঘ পাতার নানা উপকারিতা
৭| পোকামাকড় কামড়ানোর যন্ত্রণা কমায় (First Aid for Insect Bites & Stings)
যে জায়গায় পোকা কামড়েছে, সে জায়গায় অল্প করে নিম পাতার রস বা নিমপাতার পেস্ট লাগিয়ে দিলে যন্ত্রণা কমতে সময় লাগে না। কারণ বেশ কিছু স্টাডি অনুসারে নিম পাতায় রয়েছে Anti-Clotting Agent, রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানও, যা এই ধরনের জ্বালা-যন্ত্রণা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮| আলসারের চিকিৎসায় কাজে আসে (Helps To Treat Ulcer)
স্টমাক আলসারের কারণে কি খুব কষ্ট পাচ্ছেন? তাহলে কাল থেকেই নিয়মিত নিম পাতা (Neem Leaves) খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন, উপকার মিলবে অল্প সময়েই। কারণ, নিমে রয়েছে অ্যান্টি-আলসার উপাদান, যা এমন রোগের চিকিৎসায় নানা ভাবে কাজে এসে থাকে।
৯| চিকেন পক্সের দাগ মিলিয়ে যাবে (Prevents Chickenpox Scars)
এক বালতি জলে গোটা পনেরো নিম পাতা ভিজিয়ে মিনিটপাঁচেক অপেক্ষা করুন। সময় হওয়া মাত্র সেই জল দিয়ে স্নান সেরে নিন। নিয়মিত নিম পাতা ভেজানো জলে স্নান করলে পক্সের দাগ দ্রুত মিলিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে নানা ত্বকের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমবে।
১০| দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটবে (Improves Vision)
সারাদিন কি কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতে হয়? তাহলে নিয়ম করে নিম পাতা খেতে ভুলবেন না যেন! কারণ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে নিম পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এক বাটি জলে খানপাঁচেক নিম পাতা ফেলে সেই জলটা ফুটিয়ে নিন। জলটা ঠান্ডা হওয়া মাত্র সেই জল দিয়ে যদি চোখ ধোয়া যায়, তাহলে চোখের সংক্রমণের মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই চুলকানি এবং লাল ভাব কমতেও সময় লাগে না।
১১| দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে (Good For Teeth)
নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে ক্যাভিটির মতো সমস্যা দূরে থাকে ঠিকই। তবে নিমপাতা খেলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়। কারণ, নিম পাতায় উপস্থিত নানা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলিকে মেরে ফেলে। সেই সঙ্গে স্যালাইভা বা থুতুতে Alkaline-এর ভারসাম্যও ঠিক থাকে, যে কারণে Plaque এবং Gum Infections-এর মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে দাঁতের হলুদ ছোপ দাগও আর থাকে না। ফলে দাঁতের সৌন্দর্য বাড়ে চোখে পড়ার মতো।
১২| শরীর বিষ মুক্ত হয় (Detoxify Body)
Journal of Pharmacology and Experimental Therapeutics-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে প্রতিদিন নিম পাতা (Benefits Of Neem Leaves) খাওয়া শুরু করলে লিভারের ক্ষমতা বাড়ে, যে কারণে রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে নানা রোগ-ব্যাধির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই মেটাবলিক রেটের উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না।
১৩| ক্ষতের চিকিৎসায় কাজে আসে (Can Be Used As A First Aid)
কোথাও কেটে গেলে সেখানে যদি নিম পাতা বেটে লাগিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে উপকার মেলে হাতে-নাতে! কারণ, নিম পাতায় (Neem Leaves) এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ক্ষতের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১৪| হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে (Improves Digestion)
গ্য়াস-অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যাকে যদি দূর রাখতে হয়, তা হলে নিয়মিত নিম পাতা খাওয়া মাস্ট! কারণ নিম পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, Gastrointestinal Tract-এ প্রদাহের মাত্রা কমায়। ফলে আলসারের মতো রোগের প্রকোপ কমতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে। সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং Bloating-এর মতো সমস্যাও দূরে পালায়।
১৫| ডায়াবেটিসের মতো রোগ দূরে থাকে (Cure Diabetes)
Indian Journal of Physiology and Pharmacology-তে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে নিয়মিত নিম পাতা খাওয়া (Benefits Of Neem Leaves) শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে শরীরের প্রয়োজন মতো ইনসুলিনের উৎপাদন হতে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
ত্বকের যত্নেও নানাভাবে কাজে আসে নিম পাতা (Amazing Benefits of Neem for Skin)
শরীরকে সুস্থ রাখতে তো যেমন নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার, তেমনি ত্বকের যত্নেও (Neem Leaves for Skin) এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে নানাভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন ধরুন…
১| দাগ-ছোপ দূর করে (Spot Removal)
চামচ দুয়েক নিম পাউডারের সঙ্গে এক চিমটে হলুদ এবং অল্প করে জল মিশিয়ে তৈরি পেস্ট নিয়মিত দাগের উপর লাগালে উপকার মিলবে হাতে-নাতে। ব্রণ এবং পোড়া দাগও মিলিয়ে যাবে নিমেষেই।
২| ব্রণর প্রকোপ কমায় (Cures Acne & Pimple)
একটা বাটিতে চার-পাঁচটা নিম পাতা (Neem Leaves) নিয়ে তার সঙ্গে সম পরিমাণে তুলসি পাতা এবং চামচ দুয়েক গোলাপ জল মিশিয়ে ভাল করে বেঁটে নিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এবার সেই পেস্টটা সারা মুখে লাগিয়ে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, যতক্ষণ না মিশ্রণটা একেবারে শুকিয়ে যায়। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে বার তিনেক এই পেস্ট মুখে লাগালে ত্বকের ভিতরে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করবে, যে কারণে ব্রণোর প্রকোপ কমতে দেখবেন একেবারেই সময় লাগবে না।
৩| ত্বকের তেলতেলে ভাব কমে যায় (Removes Excess Oil From Your Face)
অয়েলি ত্বকের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তা হলে নিম পেস্ট মুখে লাগাতে ভুলবেন না যেন! এক্ষেত্রে খানপাঁচেক নিম পাতা নিয়ে ভাল করে বেটে নিয়ে তার সঙ্গে চামচদুয়েক দই এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রেস মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে মিনিটকুড়ি অপেক্ষা করুন। সময় হওয়ামাত্র মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রায় দিনই এইভাবে ত্বকের যত্ন নিলে তেলা ভাব কমতে সময়ই লাগবে না। সেই সঙ্গে কোনও ধরনের ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
৪| ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে (Moisturizes Skin)
সারা বছরই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকুক, এমনটা যদি চান, তা হলে চার-পাঁচটা নিম পাতা (Neem Leaves for Skin) থেঁতো করে নিয়ে তার সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি সারা মুখে লাগিয়ে মিনিট পনেরো অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে বারতিনেক এই মিশ্রণটি মুখে লাগাতে শুরু করলে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকবে না।
৫| ত্বকের জেল্লা বাড়ায় (Skin Brightening)
খানদশেক নিম পাতার সঙ্গে সম পরিমাণ গোলাপের পাপড়ি আর চামচদুয়েক গোলাপ জল মিশিয়ে তৈরি পেস্ট মুখে লাগিয়ে ততক্ষণ অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ না ফেসপ্যাকটা একেবারে ড্রাই হয়ে যায়। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে বারতিনেক এইভাবে ত্বকের যত্ন (Neem Leaves for Skin) নিলে বলিরেখা তো কমবেই, সঙ্গে ত্বকের উপরে জমে থাকা মৃত কোষের স্তরও সরে যাবে।
ত্বকের যত্নে কাজে লাগান নিম দিয়ে তৈরি এই ফেসপ্যাকগুলি (Neem Face Pack)
নিম পাতার (Neem Leaves) সঙ্গে আরও নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক (Face Packs) মুখে লাগালে নানা উপকার মেলে। বিশেষত, ব্রণর প্রকোপ তো কমেই। সেই সঙ্গে আরও একাধিক ত্বকের সমস্যাও দূরে থাকতে বাধ্য হয়।
১| নিম এবং লেবু (Neem & Lemon Face Pack)
দশ-কুড়িটার মতো নিম পাতা নিয়ে শুকিয়ে নিন। এবার ড্রাই পাতাগুলি গুঁড়ো করে নিয়ে তার থেকে এক চামচ পাউডার নিয়ে তার সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস এবং চামচ দুয়েক গোলপ জল মিশিয়ে তৈরি পেস্ট, সারা মুথে লাগিয়ে ধীরে-ধীরে মিনিটদুয়েক মালিশ করুন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে বারতিনেক এই পেস্ট (Neem Face Pack) মুখে লাগালে ত্বকের তেলতেলে ভাব তো কমবেই, সেই সঙ্গে কোনও ধরনের ধরনের ত্বকের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
২| নিম এবং পেঁপে (Neem & Papaya Face Pack)
অল্প সময়েই ত্বকের জেল্লা বাড়াতে চাইলে ঝটপট সাত-আটটা নিম পাতা নিয়ে ভাল করে বেঁটে নিন। এবার সেই পেস্টের সঙ্গে হাফ কাপ পেঁপের পেস্ট মিশিয়ে সেই মিশ্রণ সারা মুখে লাগিয়ে মিনিটদুয়েক সার্কুলার মোশনে মালিশ করার পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে বারদুয়েক এভাবে ত্বকের যত্ন নিলে দাগ-ছোপ দূর হবে। কমবে ব্রণর প্রকোপও। সেই সঙ্গে ত্বকের লাবণ্যও বাড়বে চোখে পড়ার মতো।
৩| নিম এবং হলুদ দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক (Neem & Turmeric Face Pack)
ত্বকের হারিয়ে আর্দ্রতাকে ফিরিয়ে আনতে এই ফেসপ্যাকর যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি ত্বকের সংক্রমণের পিছনে দায়ী ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসগুলিকেও মেরে ফেলে। ফলে বর্ষাকালে কোনও ধরনের ত্বকের সংক্রমণের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা আর থাকে না। এতসব উপকার পেতে একেবারে প্রথমে একটা বাটি জলে খানদশেক নিম পাতা ফেলে মিনিটদুয়েক ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার জলটা ছেঁকে নিয়ে নিমপাতাগুলি বেঁটে (Neem Face Pack) নিয়ে তার সঙ্গে এক চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং এক চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে তৈরি পেস্ট মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে মিনিটপনেরো অপেক্ষা করুন। সময় হওয়া মাত্র মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে বারচারেক এই ফেসপ্যাক মুখে লাগালে উপকার মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
৪| নিম, দই এবং বেসন (Neem, Yogurt & Besan Face Pack)
ব্রণর কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তা হলে এক চামচ নিম পাউডারের সঙ্গে সম পরিমাণ বেসন, দই এবং জল মিশিয়ে থকথকে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার সেই পেস্ট সারা মুখে এবং গলায় লাগিয়ে মিনিটপাঁচেক ধীরে-ধীরে মালিশ করুন। যখন দেখবেন পেস্টটা শুকিয়ে গেছে, তখন মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে বার তিনেক এই মিশ্রণটি মুখে লাগালে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলি মারা পরবে। ফলে ব্রণর প্রকোপ কমতে দেখবেন সময়ই লাগবে না।
চুলের যত্নে নিম (Neem Leaves for Hair)
অল্প দিনেই চুলের সৌন্দর্য বাড়ুক, এমনটা যদি চান, তা হলে চুলের যত্নে নিম পাতা (Neem Leaves for Hair) কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন!
১| মাত্রতিরিক্ত চুল পড়ার মতো সমস্যা দূরে থাকবে (Reduces Excessive Hair Fall)
মাত্রাতিরিক্ত হারে চুল পড়ার কারণে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা আজ থেকেই নিম পাতা খাওয়া শুরু করুন। সঙ্গে নিম পাতার পেস্ট লাগান চুলে এবং স্ক্যাল্পে। এমনটা করলে চুলের গোড়ায় বেশ কিছু উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ার কারণে চুল পড়ার হার তো কমবেই, সঙ্গে স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। ফলে চুলের সৌন্দর্য বাড়বে চোখে পড়ার মতো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিয়মিত নিম তেল চুলে লাগিয়ে মাসাজ (Neem Leaves for Hair) করলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।
২| খুশকির প্রকোপ কমবে (Helps To Get Rid Off Dandruff)
একটা বাটিতে চামচ পাঁচেক নারকেল তেল নিয়ে তার মধ্যে খান পাঁচেক নিম পাতা এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ফেলে মিশ্রণটি মিনিটপাঁচেক ফুটিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটা একটু ঠান্ডা করে নিয়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে চুল ধুয়ে নিন। প্রায় দিনই এই তেল চুলে লাগালে দেখবেন খুশকি কমে যেতে সময় লাগবে না।
৩| একজিমার চিকিৎসায় কাজে আসে (Treats Eczema)
নিম পাতায় উপস্থিত ‘nimbidin’ নামক উপাদানটি একজিমার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই নিয়মিত নিম পাতার পেস্ট স্ক্যাল্পে লাগালে উপকার মেলে হাতে-নাতে!
৪| চুলের জেল্লা বাড়ে (Add Shine On Your Hair)
বর্ষাকালে নানা কারণে চুলে এত জট পরে যে চুলের সৌন্দর্যের বারোটা বেজে যায়। এক্ষেত্রে নিম তেলকে কাজে লাগালে কিন্তু বেশ উপকার মিলবে। দিনে বার দুয়েক চুলে এবং স্ক্যাল্পে নিম তেল লাগিয়ে মাসাজ করলে (Neem Leaves for Hair) জট ছেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে চুলের গোড়া এতটাই শক্তপোক্ত হয়ে উঠবে যে হেয়ার ফলের মাত্রাও কমবে চোখে পড়ার মতো।
নিম পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (Side Effects of Neem Leaves)
দিনে দুটোর বেশি নিম পাতা (Neem Leaves) খাওয়া উচিত নয়। কারণ বেশি পরিমণে নিম পাতা খাওয়া শুরু করলে উপকারের থেকে অপকার হয় বেশি। এক্ষেত্রে বারে বারে বমি হওয়া, ডায়রিয়া এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা যেমন হতে পারে, তেমনি শরীরের মারাত্মক কোনও ক্ষতি (Side Effects) হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, টানা কতদিন নিম পাতা খাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে একজন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ এক টানা বেশি দিন নিম পাতা খেলে নাকি শরীরের নানা ক্ষতি হয়।
নিম পাতা নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর (FAQs)
১| ভাবী মায়েরা কি নিম পাতা খেতে পারবেন?
একেবারেই নয়! কারণ এই সময় নিম পাতা খেলে নাকি মা এবং বাচ্চার নানা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২| খালি পেটে কি নিম পাতা খাওয়া যেতে পারে?
খালি পেটে নিম পাতা খেলে নানা উপকার মেলে ঠিকই। কিন্তু তাই বলে টানা এক মাসের বেশি খালি পেটে নিম পাতা খাবেন না যেন! তাতে উপকারের থেকে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যাবে বেড়ে। প্রয়োজনে এই বিষয়ে কোনও এক আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
৩| নিম পাতা খেলে কি ওজন কমে?
নিমের রস খাওয়া শুরু করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, যে কারণে শরীরের ইতি-উতি মেদ জমার আশঙ্কা আর থাকে না। ফলে ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন
স্বাস্থ্যরক্ষায় কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!