বিবাহ

বাঙালি বিয়ের কিছু ইউনিক আচার অনুষ্ঠান, এগুলো ছাড়া বিয়েবাড়ি জমে নাকি!

popadmin  |  May 3, 2019
বাঙালি বিয়ের কিছু ইউনিক আচার অনুষ্ঠান, এগুলো ছাড়া বিয়েবাড়ি জমে নাকি!

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। মানে আমাদের কাছে বছরের প্রতিটি দিনই উৎসবের সমান। আমরা আনন্দে থাকতে, সবাই মিলে মজা করতে ভালোবাসি। তাই তো জীবন মানে আমাদের কাছে উৎসব। আর যে জাতি এমনভাবে দিন কাটায়, তাদের বিয়েতে (bengali marriage) চমক থাকবে না, তা কীভাবে হয়! তাই তো বাঙালি বিয়ে মানে চুটিয়ে মজা, সঙ্গে দেদার খানা-পিনা। আর যদি বিয়ের প্রসঙ্গে আসেন, তাহলে বলতে হয় বাঙালি বিয়ের এমন কিছু আচার অনুষ্ঠান (bengali wedding rituals) আছে, যা বাস্তবিকই অনন্য! যেমন ধরুন…

১. আইবুড়ো ভাত:


বাঙালিরা হলেন জাত খাদ্যরসিক। তাই তো যেন তেন প্রকারেণ পাত পেড়ে খাওয়ার রেওয়াজটা বাঙালির বিয়ের নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও কেমন যেন অন্তর আত্মার মতো মিশে গেছে। এই যেমন আইবুড়ো ভাতের কথাই ধরুন না, বিয়ের দিন অথবা কয়েক দিন আগে বর-বউ নিজের নিজের বাড়়িতে ব্যাচেলর হিসেবে তার শেষ খাবার খাবেন, যে পাতে থাকবে হরেক রকমের ভাজা, মাছ, মাংস আরও কত কী! মোট কথা বাঙালি বিয়ের উৎসব কিন্ত এই আইবুড়োভাত নামক অনুষ্ঠানের (bengali marriage rituals) মধ্যে দিয়েই শুরু হয়ে যায়।

২. গায়ে হলুদ:

বাঙালি বিয়ের এই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান টি সত্যিই খুব স্পেশাল। কারণ এই অনুষ্ঠানেই হবু বউ প্রথম বারের জন্য শাঁখা পলা পরেন। আর পরনে থাকে হলুদ লাল পেড়ে শাড়ি, যাতে প্রতিটি মেয়েকেই বড় সুন্দর দেখায়। আর সেই সময় ছেলের বাড়ি থেকে আসা হলুদের জন্য যে অপেক্ষা, তা সত্যিই না ভোলার মতো। আর সেই হলুদ এসে পৌঁছানো মাত্র তা মা,মামি, মাসিরা একসঙ্গে মিলে উুলু আর শঙ্খধ্বনির মাঝে লাগিয়ে দেন মেয়ের গায়ে। আর তখনই শুরু হয়ে যায় এক নতুন যাত্রা।

ছেলেদের কিন্তু গায়ে হলুদ হয়। সাদা ধুতি আর জোর গায়ে দাঁড়িয়ে হবু বর। আর তাকে ঘিরে বাড়ির বড়রা। সব একে একে এসে লাগিয়ে দিচ্ছেন হলুদ। আমাদের ছেলে আজ নতুন জীবন শুরু করছে। তাই তো এই অনুষ্ঠান আবেগ আর আনন্দের মিশেলে এক অন্য মাত্রা পায়।

৩. লক্ষ্মীর পায়ে আলতা:


বাঙালি বাড়িতে বউরা হলেন মা লক্ষী। তাই তো বিয়ের দিন মেয়ের পায়ে আলতা পরানো হয়। হাতেও লাগে আলতার ছোঁয়া। আসলে এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে আলতা পায়ে বউ যখন ছেলের বাড়িতে প্রবেশ করেন, তখন মা লক্ষীর আগমণ ঘটে বাড়িতে। ফলে ছেলের পরিবারে লাগে সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া।

৪. বর আসা:

বাঙালি বিয়েতে (wedding) যারা অংশ নিয়েছেন তারা এই কথাটা নিশ্চয়ই শুনেছেন! আসলে প্রায় সব জাতির বিয়েতেই “বারাত”এর চল রয়েছে। তবে সেই বারাতের প্রকৃতি যেমন হয়, বাঙালির বারাত কিন্তু তেমন হয় না। আমাদের এখানে বরকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন বর কর্তা। মানে বাড়ির বড়় কেউ। আর গাড়ি থেকে নামার পরে বরকে মেয়ের পরিবারের প্রবীণ কোনও সদস্যা প্রথমে বরণ করে নেন। তারপর মিষ্টি মুখ করিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যান। ওহো, আরেকটা মজার কথা তো বলাই হল না। বর, মেয়ের বাড়িতে আসার পরে কিন্তু তিনি বউয়ের মুখ দেখতে পারবেন না। তাই তো তাকে আলাদা ঘরে বসানো হয়। বর, বউয়ের মুখ দেখতে পান শুভ দৃষ্টির সময়ে, যে অনুষ্টানও বেজায় অনন্য!

৫. উুলু দেওয়া:


এই একটা জিনিসের উপর বাঙালি ছাড়া আর কারও পেটেন্ট নেই। কারণ কোনও জাতিই যে উুলু দিতে পারে না। আসলে যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে বাড়ির মেয়েরা জিভ নাড়িয়ে এক ধরনের আওয়াজ সৃষ্টি করেন, যাকে উুলু বলা হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে বিয়ের সময় উুলু দিলে এবং শঙ্খ বাজালে খারাপ শক্তি দূরে পালিয়ে যায়। ফলে বর-বউয়ের আগামী জীবন সুখে-শান্তিতে ভরে ওঠে (9 Things That Happen At A Bengali Wedding)।

৬. শুভ দৃষ্টি:

এই সংস্কৃতিও কিন্তু বাঙালি (bengali) ছাড়া আর কারও মধ্যে সে ভাবে দেখা যায় না। বিয়ের সময় মন্ডপে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বর। আর উুলু-শঙ্খধ্বনির মাঝে বউকে পিঁড়িতে চড়িয়ে নিয়ে আসছেন তার ভাইরা । বউরের মুখ পান পাতায় ঢাকা। এবারই তো হবে শুভ দৃষ্টি। মানে বউ ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলবেন পানের পাতা, আর বর প্রথম বারের জন্য দেখতে পাবেন তার নব বধুকে। এই মুহূর্তটা বর-বউয়ের কাছে সত্যিই খুব স্পেশাল, অনেকটা না ভোলা স্বপ্নের মতো।

৭. বাসর ঘর:


ওই যে আগেই বললাম, বাঙালি বিয়ে মানেই হল উৎসব। তাই সেই উৎসব শুধু বিয়ে পর্যন্তই সিমিত থাকবে, তা কীভাবে হয় বলুন! তাই তো বিয়ের পরে বর-বউ আর মেয়ের বাড়ির সবাই মিলে গান-বাজনায় মেতে ওঠেন। মাঝে মধ্যে বড়রাও অংশ নেন! আর এইভাবেই গান-বাজনা আর গল্পের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয় প্রতিটি বাঙালির জীবনেরই সবথেকে বড় ইভেন্টের।

৮. বাসি বিয়ে:

অনেক পরিবারেই বিয়ের দিন সিঁদুর দেওয়া হয় না। বরং পরের দিন সিঁদুর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এই অনুষ্ঠানের নামই বাসি বিয়ে। এমনটা শোনা যায় যে বাঙাল পরিবারেই নাকি শুধুমাত্র বাসি বিয়ের চল রয়েছে। ঘটিরা সাধারণত এই নিয়ম মানেন না। তাদের ক্ষেত্রে বিয়ের দিনই সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে বলুন এমন বৈচিত্রময় জাতি আর আছে কি?

৯. ভাত-কাপড়:


এই অনুষ্ঠানটিও বেশ মজাদার। বউ, ছেলের বাড়িতে আসার পরের দিন থালা ভর্তি হরেক স্বাদের খাবার, সঙ্গে কাপড় এবং অলতা তুলে দেওয়া হয় তার হাতে। দেন স্বামী। আর প্রতিজ্ঞা করেন আজ থেকে বউয়ের সব দায়িত্ব তার। এই অনুষ্ঠানের নামই ভাত-কাপড়। যেমন হাটকে নাম, তেমনি মজার এই আচার অনুষ্ঠান।

ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: wikipedia, youtube, instagram

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

এগুলোও আপনি পড়তে পারেন

কলকাতার সেরা ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্টের তালিকা

Read More From বিবাহ