গান বাজনা ও মনোরঞ্জন

প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের জন্য কয়েকটি দেশাত্মবোধক গানের তালিকা (Bangla Deshattobodhok Gaan)

Doyel Banerjee  |  Jun 27, 2019
প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের জন্য কয়েকটি দেশাত্মবোধক গানের তালিকা (Bangla Deshattobodhok Gaan)

‘হীরক রাজার দেশে’ চরণদাস কবিয়াল বলেছিলেন ‘জান আছে তাই গান আছে!” বড় দামি কথা বলেছিল সে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে গান হল সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি। একটা গান মানুষের মুড পাল্টে দিতে পারে, তাঁকে কাঁদাতে পারে, হাসাতে পারে। মানুষের মন সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে যায় যা সেটা হল দেশের গান। যারা বিদেশে থাকেন তাঁদেরও চোখ ভিজে যায় এমন আবেগভরা দেশপ্রেমের গান শুনলে। একসময় বিপ্লবীদের মনোবল বাড়াতে কলম তুলে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত সবাই। সেই দেশাত্মবোধক গানগুলোর প্রতি পরতে থাকত আগুন, থাকত ব্রিটিশদের প্রতি বিদ্বেষ আর থাকত দেশ মাতৃকার প্রতি গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।  আমরা স্বাধীনতা নিয়ে গান শুনি, সিনেমা দেখি, লোকজনকে দেশাত্মবোধক মেসেজ পাঠাই! এবার একটু অন্যরকম করুন না! এখন তো টেকনোলজির যুগ, তাই চলুন না, একটা প্লেলিস্ট (Patriotic Songs) তৈরি করা যাক, যা ভর্তি থাকবে এমন গানে, যেগুলি শুনলেই গায়ে কাঁটা দেবে। সেটার নাম না হয় দেবেন দেশভক্তি স্পেশ্যাল প্লে লিস্ট! আপনাদের সাহায্য করতে তাই সেরকমই কয়েকটা দেশাত্মবোধক গান (Patriotic Songs) আমরা বেছে নিয়ে এসেছি যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস।

আরো পড়ুনঃ সর্বকালের সেরা কয়েকটি বাংলা গান

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দেশাত্মবোধক গান (Patriotic Songs of Rabindranath Tagore)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করলেও, বরাবরই দেশ বরেণ্য নেতা ও বিপ্লবীদের সমর্থন জানিয়ে এসেছেন তাঁর লেখার মাধ্যমে।সেই সময় দেশের অনেক বড় বড় নেতা যেমন গান্ধীজী, নেতাজি, পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু কবিগুরুর আশ্রম বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিনিকেতনে গিয়েছেন। দেশের এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে দেশবাসীকে উদ্ধার করা যায় সেই নিয়ে নানা বিষয়ে তিনি মতামত দিতেন। ব্রিটিশ সরকার থেকে কবিগুরুকে নাইট উপাধি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জালিওয়ালাবাগে জেনারেল ডায়ার নিরীহদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। তার প্রতিবাদেই নাইট উপাধি ত্যাগ করেন তিনি। দেখে এনয়া যাক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত দেশাত্মবোধক গান (Deshattobodhok Gaan) কোনগুলি। কবি যে অসংখ্য গান লিখে গেছেন সে আমরা সবাই জানি। তাই কবিগুরুর লেখা গান কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত। এগুলো রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ পর্যায়ের গান।এই পর্যায়ে মোট ৪৬টি গান (রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধক গান) আছে।   

১| আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি

২| ও আমার দেশের মাটি/ তোমার পরে ঠেকাই মাথা

৩| এবার তোর মরা গাঙে বাণ এসেছে/ জয় মা বলে ভাসা তরী

৪| যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে

৫| তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে, তা ব’লে ভাবনা করা চলবে না ।

৬| নিশিদিন ভরসা রাখিস হবেই হবে

৭| আমি ভয় করব না, ভয় করব না

৮| আপনি অবশ হলি তবে

৯| আমরা মিলেছি আজ মায়ের সাথে

১০| আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে

১১| সঙ্কটের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান

১২| নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়

১৩| আমাদের যাত্রা হল শুরু

১৪| জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে

১৫| হে মোর চিত্ত পুণ্যতীর্থ

১৬| দেশ দেশ নন্দিত

১৭| মাতৃমন্দির পুণ্য অঙ্গন

১৮| আগে চল আগে চল ভাই

১৯| বাংলার মাটি বাংলার জল

২০| আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে এখন আপনি

২১| আমায় বোলো না গাহিতে

২২| ওই ভুবনমন মোহিনী  

২৩| সার্থক জনম আমার

২৪| যে তোমায় ছাড়ে

২৫| যে তোরে পাগল বলে

২৬| ওরে তোরা নাই বা কথা বললি 

২৭| যদি তোর ভাবনা

২৮| মা কি তুই পরের

২৯| আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে

৩০| ছি ছি চোখের

৩১| ঘরে মুখ মলিন

৩২| এখন আর দেরি নয় ধরগো তোরা হাতে হাতে ধরগো 

৩৩| বুক বেঁধে তুই

৩৪| আমরা পথে পথে যাব

৩৫| এ ভারতে রাখো

৩৬| রইল বলে রাখলে কারে

৩৭| জননীর দ্বারে আজি

৩৮| আজি এ ভারত লজ্জিত হে

৩৯| চলো যাই চলো

৪০| শুভ কর্মপথে ধরো

৪১| ওরে নূতন যুগের ভোরে

৪২| ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো

৪৩| ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে

৪৪| বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান

৪৫| খ্যাপা তুই আছিস

৪৬| সাধন কি মোর আসন নেবে

প্রজাতন্ত্র দিবসে দেখার বাংলা দেশাত্ববোধক সিনেমার তালিকা

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা দেশাত্মবোধক গান (Patriotic Songs of Kazi Nazrul Islam)

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুলকে বলা হত ‘বিদ্রোহী কবি’। কারণ নজরুলের বেশিরভাগ গান ও কবিতায় থাকত বিদ্রোহের আগুন। তিনি নিজেও সরাসরি স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বহুবার জেল খেটেছেন। ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করেছে তাঁর গান তাঁর কবিতা। কিন্তু নজরুলের আগুন ঝরানো গান ও কবিতা বন্ধ করা যায়নি। এক সময় তাঁর লেখা গান গাইতে গাইতেই কারা বরণ করেছেন অনেক নামকরা বিপ্লবী। দেখে নেওয়া যাক কাজী নজরুলের লেখা কয়েকটি বিখ্যাত দেশাত্মবোধক বাংলা গান (Deshattobodhok Song)।

১| কারার ওই লৌহ কপাট

২| জাগো অনশন বন্দী

৩| জাতের নামে বজ্জাতি

৪| ওরে আজ ভারতের নব যাত্রাপথে

৫| আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল

৬| বলো ভৈ মা ভৈ

৭| আমার শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা দেশাত্মবোধক গান (Patriotic Songs of Dwijendralal Roy)

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় পরিচিত ছিলেন ডি এল রায় নামে। উনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, গীতিকার ও সুরকার। জাতীয়তাবাদী গান লেখা ও সুর দিতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। তাঁর গানগুলিকে দ্বিজেন্দ্রগীতি বলা হয়। ভারতীয় দেশাত্মবোধক গানের তালিকায় (Deshattobodhok Gaan) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা কয়েকটি বিখ্যাত বাংলা দেশাত্মবোধক গান হল – 

১| আমার ভারত

২| ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা (জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান)

৩| যে দিন সুনীল জলধি হইতে উঠিল জননী ভারতবর্ষ

৪| পতিত দ্বারিনি গঙ্গে

৫| ভারত যাত্রী প্রবাহিত রাত্রি

অতুলপ্রসাদ সেনের লেখা দেশাত্মবোধক গান (Patriotic Songs of Atul Prasad Sen)

অতুলপ্রসাদ সেন ছিলেন পেশায় আইনজীবী। কিন্তু পেশার বাইরে তাঁর নেশা ছিল গান লেখা ও সুর দেওয়া। তাঁর রচিত গানগুলোর মধ্যেও ছিল ভারত মাতার প্রতি তীব্র প্রেম। অতুলপ্রসাদের লেখা কয়েকটি বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গানের লিস্ট (Patriotic Songs In Bengali) হল – 

১| উঠ গো ভারত লক্ষ্মী, উঠ আদি জগত জন পুজ্যা।

২| হও ধরমেতে ধীর, হও করমেতে বীর, হও উন্নত শির নাহি ভয়।

৩| বল বল সবে শত বীণা বেনু রবে, ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।

৪| দেখ মা আবার দুয়ার খুলে গলে গলে এনু মা তোর হিন্দু মুসলমান দুই ছেলে।

৫| মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলাভাষা (জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান)

সলিল চৌধুরীর লেখা ও গাওয়া দেশাত্মবোধক গান (Patriotic Songs of Salil Chowdhury)

চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে ভারতের উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান লিখতে শুরু করেন সুরকার সলিল চৌধুরী। তিনি সেই গানগুলিতে সুরও দেন। পরে বাংলার গণসঙ্গীত আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দেখে নেব সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুর দেওয়া কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দেশাত্মবোধক গান (Bangla Patriotic Songs)।

১| ঢেউ উঠেছে কারা টুটেছে

২| কারার দুয়ার ভাঙো, ভাঙো ঐক্যের বজ্র কঠিন হাতে

৩| আগে চলো আগে চলো

৪| ভাঙো ভাঙো ভাঙো ভাঙো কারা

৫| বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা

৬| আমার প্রতিবাদের ভাষা

৭| ও মোদের দেশবাসীরে

৮| ধন্য আমি জন্মেছি মা তোমার ধূলিতে

৯| নজোয়ান নজোয়ান বিশ্বে জেগেছে নজোয়ান

১০| পথে এবার নামো সাথী পথেই হবে এ পথ চেনা

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় যে দেশাত্মবোধক গানগুলি প্রচলিত ছিল (Songs of Banga Bhanga Movement)

১৯০৫ সাল ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময় ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেন যে তাঁরা বাংলা ভাগ করবেন। এই ধরনের বিভাজন কেউই চাইছিলেন না। সমাজের শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী মহল এগিয়ে আসে এবং সাধারণ ভারতবাসীকে বোঝায় যে তাঁরা যেন এটির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এই সময় যে গানগুলি (প্রজাতন্ত্র দিবসের গান) প্রচলিত ছিল বা গাওয়া হত সেগুলি হল,

১| মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান (রচয়িতা – কাজী নজরুল ইসলাম)।

২| ধন ধান্য পুষ্পে ভরা (রচয়িতা- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়)।

৩| ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি (রচয়িতা- কাজী নজরুল ইসলাম)

স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যে দেশাত্মবোধক গানগুলি জড়িয়ে আছে (Songs of Swadeshi Movement)

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পাশাপাশিই শুরু হয়েছিল স্বদেশী আন্দোলন। ব্রিটিশ সরকার আমাদের দেশ ছেড়ে না গেলে সমূহ বিপদ, সেটা ভারতীয়রা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তাঁরা ঠিক করেন যে ব্রিটিশদের তৈরি কোনও জিনিস তাঁরা ব্যবহার করবেন না, কোনও খাদ্যদ্রব্য খাবেন না এবং ব্রিটিশ মিলে তৈরি কোনও কাপড় তাঁরা পরবেন না। হাজার হাজার মহিলা রাস্তায় বেরিয়ে তাঁদের সাধের রেশমের শাড়ি ও কাচের চুড়ি পোড়াতে থাকেন। কারণ এগুলো সবই বিলেত থেকে আসত। স্বদেশী আন্দোলনের সময় যে গানগুলি (Bangla Patriotic Songs) প্রচলিত ছিল বা গাওয়া হত সেগুলি হল,

১| মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই (রচয়িতা – রজনীকান্ত সেন)।

অর্থাৎ দেশজ যা জিনিস তা যেমনই হোক সেটাই আমাদের গ্রহণ করা উচিৎ।

২| ফেলে দাও রেশমি চুড়ি বঙ্গনারী আর পরো না (Deshattobodhok Gaan)।

৩| একই সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন (রচয়িতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।

৪| একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি (গানটির রচয়িতা কে সঠিক জানা নেই।বলা হয় সম্ভবত শহিদ ক্ষুদিরামের ফাঁসিতে ব্যথিত হয়ে কোনও গ্রাম্য চারণ কবি এটির রচনা করেন। পরে লোকমুখে ঘুরতে ঘুরতে সেটি জনপ্রিয় হয়ে যায়।)।

ভারতের স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত অবিচ্ছেদ্য দেশাত্মবোধক কিছু গান (Popular Patriotic Songs on Independence Day)

ভারতের দেশাত্মবোধক গানের তালিকাতে বেশ কিছু গান (প্রজাতন্ত্র দিবসের গান) আছে যেগুলি স্বাধীনতার পরে লেখা হয়েছিল অর্থাৎ আধুনিক সুরকার ও গীতিকাররা সেই অগ্নিজুগের বিপ্লবীদের শ্রদ্ধা জানাতে এই গানগুলি রছনা করেছেন। পরে গানগুলি এত জনপ্রিয় হয় যে সেগুলি ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। সেই দেশাত্মবোধক গান (Bangla Deshattobodhok Gaan) গুলি হল –

১| মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হল বলিদান (রচয়িতা –কৃষ্ণচন্দ্র দে)

২| ভারত আমার ভারতবর্ষ (রচয়িতা – শিবদাস ব্যানার্জি)

৩| ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম (রচয়িতা- শিবদাস ব্যানার্জি)

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

এগুলোও আপনি পড়তে পারেন

অন্ধকারে পথ দেখাবে গান্ধীজির এই বাণীগুলি

প্রজাতন্ত্র দিবসে পাঠানোর মতো কিছু শুভেচ্ছা বার্তা

আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!

Read More From গান বাজনা ও মনোরঞ্জন