পিম্পল! কত ছোট্ট শব্দ একটা। কিন্তু সমস্যাটা মোটে ছোট্ট নয়। কারণ পিম্পল হলে ত্বকের সৌন্দর্যের বারোটা বেজে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে লেজুড় হয় একরাশ অস্বস্তি। আর যদি অজান্তে একবার পিম্পল (Pimples) চুলকে ফেলা হয়, তাহলে তো আরও সমস্যা। কারণ সেক্ষেত্রে সারা মুখ জুড়ে দাগ দেখা দেয়। ফলে সৌন্দর্য কমে চোখে পড়ার মতো। তাই তো এমন সমস্যা থেকে চিরস্থায়ী মুক্তি মিলবে কীভাবে, সে সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। আর সেই কারণেই ভরসা রাখতে হবে আয়ুর্বেদের উপরে। কারণ প্রাচীন এই শাস্ত্র (Ayurveda) মতে এক্ষেত্রে যদি বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে পিম্পলের (Ayurvedic Treatment for Pimples In Bengali) মতো ত্বকের রোগের খপ্পর থেকে নিস্তার মিলতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে যে কোনও ধরনের দাগও মিলিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ত্বকের জেল্লাও বাড়ে।
পিম্পল কমাতে কাজে লাগাতে পারেন এই প্রোডাক্ট গুলিও
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে শরীরের ভিতরে বাত, পিত্ত এবং কফের ভারসাম্য যদি বিগড়ে যায়, তাহলে পিম্পলের মতো ত্বকের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা যায় বেড়ে। তবে পিম্পল যে শুধুমাত্র মুখেই হবে, এমন নয় কিন্তু! বরং শরীরের যেখানে যেখানে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড রয়েছে, যেমন ধরুন মুখ, পিঠ এবং কাঁধেও কিন্তু পিম্পল প্রকাশ পেতে পারে।
শরীরে পিত্তের মাত্রা বেড়ে গেলে প্রদাহের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে, যার সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়ে ত্বকের কোষের উপরে, যে কারণেই মূলত পিম্পল প্রকাশ পায়। তাই এমন পরিস্থিতিতে প্রথমেই পিত্ত দোষ কমাতে হবে, তাহলেই দেখবেন ধীরে ধীরে পিম্পলও গায়েব হতে শুরু করেছে। অনেক সময় বাত বা কফ দোষ দেখা দিলেও কিন্তু এমন ধরনের ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কারণ যাই হোক না কেন, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যদি নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদানকে (Ayurvedic Treatment) কাজে লাগানো যায়, তাহলে উপকার মিলতে একেবারেই সময় লাগে না।
যে যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলি (Home Remedies) এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল…
২০ টা তুলসি পাতা এবং ২ চামচ হলুদ নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার সেই মিশ্রণটি একটা পাত্রে আলাদা করে রেখে দিন। প্রতিদিন সেখান থেকে আধ চামচ করে নিয়ে পরিমাণ মতো জলে মিশিয়ে খাবার খাওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে খাওয়া শুরু করুন। এইভাবে দিনে তিনবার, মানে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনারের আগে যদি এই মিশ্রণটি খাওয়া যায়, তাহলে পিম্পলের (pimples) প্রকোপ তো কমবেই, সেই সঙ্গে আরও নানাবিধ উপকারও মিলবে। কারণ তুলসি পাতায় উপস্থিত নানাবিধ উপকারী উপদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের ধ্বংস করে দেয়। ফলে ছোট-বড় কোনও রোগের পক্ষেই ধারে কাছে ঘেঁষা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে হলুদে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা নানা ধরনের সংক্রমণের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পরিমাণ মতো নিম পাতা নিয়ে এর বাটি জলে ফেলে ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর জলটা ছেঁকে নিয়ে নিমপাতাগুলি পিষে নিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার সেই পেস্টে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ততক্ষণ অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ না পেস্টটা একেবারে শুকিয়ে যায়। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন।
সপ্তাহে ৩-৪ দিন এই পেস্টটি মুখে লাগানো যায়, তাহলে ত্বকের ভিতরে একদিকে যেমন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, তেমনি অন্যদিকে পিএইচ লেভেলও ঠিক থাকে। ফলে পিম্পলের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
একটা কাপে পরিমাণ মতো লেবুর রস নিয়ে তাতে ২ চামচ ডিস্টিল ওয়াটার মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি তুলোর সাহায্যে পিম্পলের উপরে লাগাতে হবে। এইভাবে সারা রাত রেখে দেওয়ার পরে পরদিন সকালে উঠে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে এইভাবে ত্বকের যত্ন নিলে পিম্পলের সমস্যা তো দূরে পালাবেই, সেই সঙ্গে ত্বকের লাল ভাব কমে যেতেও সময় লাগবে না।
একটা মাঝারি মাপের লাউ নিয়ে খোসাটা ছাড়িয়ে নিন। তারপর ছোট ছোট টুকরো করে নিয়ে সেগুলি মিক্সিতে ফেলে জুস বানিয়ে ফেলুন। এবার তাতে অল্প করে জল এবং নুন মিশিয়ে পান করুন। দিনে এক গ্লাস করে এই রস খাওয়া শুরু করলে শরীরের ভিতরে বাত, পিত্ত এবং কফের হারিয়ে যাওয়া ভারসাম্য ফিরে আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পিম্পলের মতো সমস্যা কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে শরীরের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে শরীর যখন ভিতর থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে, তখন যে কোনও ধরনের রোগ সেরে যেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি ত্বকের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় চোখে পড়ার মতো। তাই তো নিয়মিত যদি ধনে পাতার রস খাওয়া যায়, তাহলে দারুন উপকার মেলে। বিশেষত পিম্পলের প্রকোপ কমতে একেবারেই সময় লাগে না।
এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো ধনে পাতা নিয়ে তার রস বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে দারচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। এবার প্রতিদিন সেই মিশ্রণটি থেকে ২ চামচ করে নিয়ে খেতে হবে। এমনটা করলে দেখবেন উপকার মিলতে সময় লাগবে না। আসলে ধনে পাতা এবং দারচিনিতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারী উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ ত্বকের রোগের প্রকোপ কমতে সময় সাগে না, তেমনি নানাবিধ শারীরিক উপকারও মেলে।
এই প্রাকৃতিক উপাদানটি শরীরের ভিতরে কফ, পিত্ত এবং বাতের ভারসাম্য ঠিক রাখে। সেই সঙ্গে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে যাতে অতিরিক্ত মাত্রায় তেলের ক্ষরণ না হয়, সেদিকেও নজর রাখে। ফলে স্বাভাবিকবাবেই বারে বারে পিম্পল (pimples) প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। এক্ষেত্রে ১ গ্লাস জলে ১ চামচ ত্রিফলার পেস্ট মিশিয়ে নিয়মিত একবার করে পান করতে হবে, তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!
প্রথমে পরিমাণ মতো পেঁপে নিয়ে তা চটকে নিন। তারপর তাতে অল্প করে চন্দন গুঁড়ো এবং জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার সেই মিশ্রণটি সারা মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় গেলে ধুয়ে ফেলুন পেস্টটা।
সপ্তাহে ৩-৪ দিন এইভাবে ত্বকের যত্ন নিলে স্কিনের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা তো কমবেই, সেই সঙ্গে ত্বকের ছিদ্রগুলিও খুলতে শুরু করবে। ফলে পিম্পল কমে যেতে দেখবেন একেবারে সময়ই লাগবে না।
এই বিশেষ ধরনের ত্বকের রোগের চিকিৎসায় এই দুই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনও বিরল্প হয় না বললেই চলে। কারণ আলু যেমন পিম্পল সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে, তেমনি কিশমিশি ত্বকের ভিতরে রক্তের প্রবাহকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভবিকভাবেই ত্বকের সৌন্দর্য যেমন বাড়ে, তেমনি নানাবিধ স্কিন ডিজিজের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না।
এক্ষেত্রে একটা মাঝারি মাপের আলু নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। তারপর সেই টুকরোগুলি মিক্সিতে নিয়ে তার সঙ্গে পরিমাণ মতো কিশমিশ মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবার সেই পেস্টটি সারা মুখে লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। যখন দেখবেন মিশ্রণটি ড্রাই হতে শুরু করেছে, তখন মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩-৪ টে আমলকি নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। তারপর তা মিক্সিতে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো মৌরি মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবার সেই পাউডারটা একটা পাত্রে সংগ্রহ করে রেখে দিতে হবে। প্রতিদিন তার থেকে ১ চামচ করে পাউডার নিয়ে এক গ্লাস জলের সঙ্গে মিশিয়ে যদি দিনে দুবার করে পান করা যায়, তাহলে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়তে তো সময় লাগেই না, সেই সঙ্গে শরীরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ নানাবিধ উপকারী উপাদানের মাত্রা বূদ্ধি পাওয়ার কারণে এরাধিক রোগ-ব্যাধি দূরে থাকতেও বাধ্য হয়।
মিক্সিতে ২-৩ টে পেয়ারা পাতা এবং ৩-৪ টে আম পাতা নিয়ে তাতে অল্প করে জল মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার সেই পেস্টটা সারা মুখে লাগিয়ে কম করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এই মিশ্রণটি মুখে লাগাতে শুরু করলে পিম্পলের প্রকোপ তো কমবেই, সেই সঙ্গে যে কোনও ধরনের দাগ মিলিয়ে যেতেও দেখবেন সময় লাগবে না।
এমন সমস্যাকে দূরে রাখতে আরও কতগুলি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। যেমন ধরুন…
১| পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। না হলে কিন্তু বিপদ!
২| প্রতিদিন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সেই সঙ্গে রোজের ডায়েটে যেন থাকে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবারও।
৩| যতটা সম্ভব অয়েলি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকী পছন্দের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে জাঙ্ক ফুডকেও।
৪| প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস জল পান করা মাস্ট!
৫| নিয়ম করে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। সেই সঙ্গে যতটা সম্ভব কমাতে হবে কসমেটিক্স ব্যবহার।
ত্বকের যত্নে এই প্রোডাক্টটির (Patanjali) কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ নিয়মিত এই জেলটি মুখে লাগিয়ে মাসাজ করলে পিম্পলের প্রকোপ তো কমেই, সেই সঙ্গে ভিতর থেকে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। ফলে স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পড়ার মতো।
গরমকালে নিয়মিত এই ফেস ওয়াশটির সাহায্যে মুখ ধুলে পিম্পল সৃষ্টকারী জীবাণুরা তো মারা যায়ই, সেই সঙ্গে ত্বকের ভিতরে পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকে। ফলে পিম্পলের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা আর থাকে না।
এতে রয়েছে হলুদের নির্যাস এবং বিশেষ কিছু তেল, যা একদিকে ত্বককে জীবাণু মুক্ত করতে যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি পিম্পল সহ নানাবিধ ত্বকের রোগকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে। তাই তো গরমকালে নিয়মিত এই ফেস ওয়াশটি দিয়ে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
১| পিম্পলের (Pimples) ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিত চিকিৎসা করলে কি ফল মিলতে অনেক সময় লেগে যায়?
উ: সময় একটু লাগে বাটে। কিন্তু ১০০ শতাংশ উপকার মেলে। আসলে নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগানো হয় বলে মূল সমস্যার থেকে মুক্তি তো মেলেই, সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকার মিলতেও সময় লাগে না। এই কারণেই তো সময় সাগলেও ধৈর্য ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
২| যাদের সংবেদনশীল ত্বক তারা কী করবেন?
উ: যদি দেখেন বিশেষ কোনও প্রাকৃতিক উপাদানের কারণে অ্যালার্জি হচ্ছে তাহলে সেটি বাদ দেওয়াই শ্রেয়। পরিবর্তে অন্য কোনও প্রাকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগানো উচিত।
ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: wikipedia
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন
ত্বকের সমস্যা দূর করতে পতঞ্জলি বিউটি প্রোডাক্ট এর ব্যবহার মাস্ট