রোগ না জেনে ওষুধ খেলে কি শরীর সুস্থ হয়? হয় না বলেই তো জানি! আচ্ছা সেকথা জানেন যখন, তখন নিজের শরীর না বুঝে অন্ধের মতো আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী ব্যবহার করছেন কেন? আয়ুর্বেদ অনুসারে, শরীরের সুস্থ থাকা নির্ভর করে বায়ু, পিত্ত এবং কফ, এই তিনটি বিষয়ের ভারসাম্যের উপর। আয়ুর্বেদীয় ভাষায়, এগুলো হচ্ছে এক-একটা ‘দোষ’ (Ayurvedic Dosha), তবে এই দোষ মানে হল ‘কাল’। আরও বিশদে বোঝাতে গেলে, আমাদের শরীরে বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল উপাদানের অবস্থান! তবে অত তত্ত্বকথায় গিয়ে তো লাভ নেই। মোদ্দা কথা হল, এর কোনওটার মাত্রা যদি বেড়ে যায়, তা হলেই দেখা দেয় নানা সমস্যা। তাই আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী কেনার আগে জেনে নিন, আপনি কোন দোষে দোষী! না হলে যতই মুখে আয়ুর্বেদিক ক্রিম ঘষুন না কেন, ফুটফুটে সুন্দরী হয়ে ওঠার স্বপ্ন কিন্তু পূরণ হবে না।
বায়ু দোষ
আপনি বায়ু দোষ-এ দোষী কিনা, কীভাবে বুঝবেন?
নিম্নলিখিত পাঁচটি ব্যাপার যদি আপনার সঙ্গে মেলে, তা হলে বুঝবেন আপনার বায়ুর ধাত!
১। আপনি রোগাসোগা মানুষ এবং চট করে আপনার ওজন বাড়ে না।
২। পাতলা শব্দটা আপনার জন্যই তৈরি হয়েছে! আপনার চুলের ধাত পাতলা, নখ নরম ও ভঙ্গুর, আঙুলগুলো রোগা-রোগা!
৩। আপনার কখনও খুব খিদে পায়. কখনও একেবারেই পায় না!
৪। আপনার হাতের তালু আর পায়ের পাতা সব সময় বরফ ঠান্ডা থাকে!
৫। শীত বা বর্ষা নয়, চাঁদিফাটা গরমই আপনার পছন্দের ঋতু!
বায়ু দোষ কীভাবে প্রভাব ফেলে
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, আমাদের শরীরের ক্ষমতা এবং চলনশক্তি নির্ভর করে ‘বায়ু’র উপর। নার্ভাস সিস্টেমের গতি প্রকৃতিকেও নিয়ন্ত্রণ করে এই বায়ু। তাই তো এর ভারসাম্য বিগড়ে গেলে শরীরের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। সেক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা, বদ-হজম, ত্বকের জেল্লা কমে যাওয়া, শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা, পরিশ্রম করার ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং অনিদ্রার মতো রোগ পিছু নিতে পারে। বায়ু দোষের কারণে অ্যাংজাইটির প্রকোপও বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত হারে ওজন কমে যাওয়া এবং খিদে কমে যাওয়ার মতো লক্ষণেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে।
কোন প্রসাধনী ব্যবহার করবেন
১। স্নানের জলে নিয়মিত নানা হার্বাল ইনফিউশন তেল মিশিয়ে স্নান করুন।
২। সাইট্রাস এসেনশিয়াল অয়েল, অর্থাৎ পাতিলেবু বা কমলালেবুর এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে স্নানের আগে সারা শরীর মালিশ করুন।
৩। অ্যাভোকাডো আর বেদানার এসেনশিয়াল অয়েল বা এই এসেনশিয়াল অয়েল আছে এমন কোনও শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং মাথার তেল ব্যবহার করুন চুলের যত্ন নিতে।
আরও পড়ুন: ত্বক-চুলের যত্ন নিতে বাড়িতেই তৈরি করে ফেলুন নানা উপকারী এসেনশিয়াল তেল!
পিত্ত দোষ
আপনি পিত্ত দোষ-এ দোষী কিনা, কীভাবে বুঝবেন?
নিম্নলিখিত পাঁচটি ব্যাপার যদি আপনার সঙ্গে মেলে, তা হলে বুঝবেন আপনার পিত্তর ধাত!
১। আপনার শরীরে জোয়ার-ভাঁটা খেলে! এই রোগা, তো এই ওজন বাড়িয়ে ফেললেন!
২। আপনাকে দেখতে বেশ চোখাচাখি, তবে উচ্চতা মাঝারি।
৩। আপনার খিদেটা অনেকটা বাঁটুল দ্য গ্রেটের মতো! যখনই খান, একগাদা খান!
৪। আপনার ত্বক তেলতেল এবং একটু লালচে আভা আছে তাতে।
৫। আপনার পছন্দের ঋতু হল শীত!
পিত্ত দোষ কীভাবে প্রভাব ফেলে
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, শরীরে পিত্তের মাত্রা বাড়লে ব্রণর প্রকোপ বাড়ে। এছাড়াও জয়েন্টে ব্যথা, গ্যাস-অম্বলের সমস্যা, মাথা ঘোরা, শরীর গরম হয়ে যাওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া এবং মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
কোন প্রসাধনী ব্যবহার করবেন
১। সপ্তাহে অন্তত বারদুয়েক অ্যালোভেরা জেলযুক্ত কোনও হার্বাল জেল দিয়ে মুখে মালিশ করুন। তারপর বরফ-ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নেবেন।
২। এই ধরনের ত্বকের জন্য সবচেয়ে উপকারী হল চন্দন আর গোলাপের এসেনশিয়াল অয়েল। এ ছাড়া, ল্যাভেন্ডার, জোজোবা ও মোরিঙ্গা এসেনশিয়াল অয়েলও এই ত্বকে কাজে আসে। কাজেই এই ধরনের এসেনশিয়াল অয়েলযুক্ত প্রসাধনীই একমাত্র ব্যবহার করবেন। তবে এটা স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে। মেকআপ নয়।
৩। রোজ সকালে মুখে নিয়মিত শসার রস এবং মধু মাখুন। তারপর ক্যামোমিল তেল দিয়ে আলতো করে মালিশ করুন।
কফ দোষ
আপনি কফ দোষ-এ দোষী কিনা, কীভাবে বুঝবেন?
১। আপনার ওজন খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে, কিন্তু কমাতে হালত খারাপ হয়ে যায়!
২। মোটা, এই শব্দটা আপনার জন্যই তৈরি হয়েছে! আপনার চামড়া মোটা, চুলের ধরন মোটা, হাতের আঙুল মোটা, ঠোঁট মোটা।
৩। আপনার চট করে সর্দি-কাশি হয়।
৪। একটু কিছু খেলেই আপনার পেট ভরে যায়।
৫। আপনি হয় বেঁটে-রোগাপাতলা নয়তো গাঁটাগোট্টা-ইয়া লম্বা!
কফ দোষ কীভাবে প্রভাব ফেলে
এক্ষেত্রে সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ে। সঙ্গে হজম ক্ষমতা কমে যাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া, সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনিচ্ছে, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং ছোট-ছোট বিষয়ে দুঃখ পাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
কোন প্রসাধনী ব্যবহার করবেন
১। লবঙ্গর তেল বা টি-ট্রি অয়েলযুক্ত কোনও ক্রিম দিয়ে নিয়মিত মুখে মালিশ করুন। ত্বকের দাগছোপ কাটাতে তা সাহায্য করবে।
২। মধু আর সৈন্ধব লবণের মিশ্রণ দিয়ে সপ্তাহে তিনদিন মুখ স্ক্রাব করুন। তারপর গরম জলে পুদিনা পাতা ফেলে তা দিয়ে স্টিম নিন।
৩। হলুদ অথবা সেজ এসেনশিয়াল অয়েলযুক্ত ফেস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন: চাপ-ধকল কমাতে আয়ুর্বেদিক স্নানের জুড়ি মেলা ভার
আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী কেনার সময় মাথায় রাখুন
ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট, ১৯৪০ অনুসারে যে কোনও আয়ুর্বেদিক প্রডাক্টের গায়ে তার নাম, ওজন এবং কোম্পানির ঠিকানা থাকাটা জরুরি। সেই সঙ্গে থাকতে হবে ব্যাচ নং, ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট, কী-কী উপাদান ব্যবহার হয়েছে তার তালিকা, ড্রাগের পরিমাণ এবং সতর্কতা সম্পর্কিত তথ্য। এছাড়াও অ্যালকোহল ব্যবহার হয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও তথ্য থাকাটা জরুরি। এই সব তথ্যের কোনওটা যদি না থাকে, তা হলে সেই প্রসাধনী না কেনাই ভাল।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!