মা হওয়া একজন মেয়ের কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। বলা হয় যে দিন শিশুর জন্ম হয় সেদিন মায়েরও পুনর্জন্ম হয়। গর্ভাবস্থার ৯ মাসের মধ্যে পেটের আকার (Pregnancy) যত বাড়তে থাকে ঠিক ততটাই বাড়তে থাকে মায়ের আনন্দ। কিন্তু তার সঙ্গে এটাও হয় যে বাচ্চার জন্মের পর তার দেখাশোনা করতে করতে মা তার নিজের খেয়াল রাখতে ভুলে যান। কিন্তু শিশুর জন্মের পর মায়ের শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে। তিনি মোটা হয়ে যান (Weight) এবং চেহারাও পাল্টে যায়। তাছাড়া শিশুর জন্মের পরেও মায়ের পেট কমে না উল্টে সেটা বেড়ে (Weight) যায় এবং পেটের চামড়া ঢিলে হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় যে বড় আকারের পেট মায়ের আনন্দের কারণ ছিল সেটাই শিশুর জন্মের পর দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন সেই ঢিলে ত্বকের থলথলে পেট জামা কাপড়ের নীচে লুকিয়ে রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। সদ্য মা হওয়া এই মহিলাদের সমস্যা দূর করতে আমরা নিয়ে এসেছি কয়েকটি দরকারি টিপস এবং ঘরোয়া উপায় যার দ্বারা আপনি প্রেগনেন্সির পর (Post Pregnancy) বাড়তি মেদ কমিয়ে আবার আগের মতো তন্বী সুন্দরী হয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন সিজারিয়ান ডেলিভারির পর পেট বা ওজন কম (Lose Weight After Pregnancy In Bengali) করার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। প্রথমে আপনি নিজে আগে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুন তারপর পেট কম (Lose Weight) করার কথা ভাববেন। পেট কমানোর নানা উপায় সম্পর্কে জানার আগে এটা জেনে নেওয়া দরকার যে প্রেগনেন্সির পর কেন বেড়ে যায় আমাদের পেট।
জেনে নিনঃ প্রেগন্যান্সি স্ট্রেচ মার্ক দূর করার ঘরোয়া উপায়
মা হওয়ার পর একজন মহিলার শরীরে নানা রকম পরিবর্তন দেখা দেয়। যার জন্য ওজন খুব দ্রুত বেড়ে যায় এবং পেটের চর্বিও বেড়ে যায়।
বাচ্চা যাতে মায়ের শরীর থেকে ঠিকঠাক পুষ্টি পায় তাই মহিলারা এই সময় অতিরিক্ত খাবার খায়। এগুলোই অতিরিক্ত ফ্যাট হিসেবে শরীরে আস্তে আস্তে জমা হতে থাকে। প্রেগনেন্সির পর এই অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় এবং পেটের চর্বিকে নিয়ন্ত্রণে আনতেও অনেক কসরত করতে হয়।
গর্ভাবস্থায় এবং প্রেগনেন্সির পর শারীরিক শ্রম কম করতে হয় বলেও ওজন বাড়তে থাকে এবং পেটের আশেপাশে বাড়তি ম্যাড জমতে থাকে।
অনেক সময় থাইরয়েড থাকার দরুনও ওজন বৃদ্ধি ও পেটের আকার বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দেয়।
এমনি সময় ওজন কম করা বা বাড়তে থাকা পেট নিয়ন্ত্রণে আনা আর প্রেগনেন্সির পর একজন মহিলার পেট কমানো আলাদা ব্যাপার। তাই তাদের ক্ষেত্রে যে যে উপায় অবলম্বন করা হয় সেটাও আলাদাই হয়। নর্মাল ডেলিভারির পর পেট ধীরে ধীরে কমতে থাকে কিন্তু সিজারিয়ান ডেলিভারির পর মায়েদের একটু বেশি যত্ন নিতে হয়। তাই ওজন কম করার কোনও ওষুধ খাবার আগে একবার অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। আমরা এখানে আপনাদের এমন কিছু ঘরোয়া উপায় বলে দিচ্ছি যার সাহায্যে আপনি প্রেগনেন্সির পর নিজের পেটের চর্বি কম করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ পাবলিক প্লেসে স্তন্যদান মায়েদের অধিকার
জোয়ান ভেজানো জল প্রেগনেন্সির পর পেট কমাতে খুব সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে এক পাত্রে এক গ্লাস জল আর বড় চামচ ভর্তি জোয়ান নিয়ে সেটা গ্যাসে বসিয়ে খানিকক্ষণ ফোটাতে হবে। একটু ফুটতে শুরু করলেই গ্যাস বন্ধ করে দিন। ঠান্ডা করে ছেঁকে ওই জল পান করুন। এতে আপনার পেটের ভিতরটা পরিষ্কার হয়ে যাবে আর অতিরিক্ত মেদও কমে যাবে।
প্রেগনেন্সির পর পেটের চর্বি কম করতে হলে দারচিনি আর লবঙ্গের সাহায্য নিন। দু তিনটে লবঙ্গ আর আধখানা দারচিনি স্টিক নিয়ে সেটা ফুটিয়ে নিন। তারপর ওই জল ঈষদুষ্ণ অবস্থায় পান করুন। এই কৌশলে পেট খুব দ্রুত কমতে থাকে।দু তিন মাস এই লবঙ্গ আর দারচিনির জল পান করলে ভালো ফল পাবেন।
গ্রিন টি হল এমন একটি ভেষজ যা পেটের অতিরিক্ত চর্বি কম করতে খুব কাজে দেয়। এমনিতে যারা মোটা হয়ে গেছেন বা যাদের পেট বেড়ে গেছে তারা যেমন এই গ্রিন টি পান করে উপকার পেটে পারেন ঠিক সেরকমই প্রেগনেন্সির পর পেটের অতিরিক্ত মেদ নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন মায়েরাও এই গ্রিন টি অনায়াসে পান করতে পারেন। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে গ্রিন টি সবার ক্ষেত্রেই সমান কার্যকরী হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যানটি অক্সিডেন্ট থাকে। এটা পান করলে মায়ের এবং তার থেকে শিশুর কোনও রকম কোনও ক্ষতি হয় না এবং এতে ওজনও কমে যায়।
মেথির অনেক গুণ আছে তার মধ্যে একটা হল প্রেগনেন্সির পর পেটের বাড়তি মেদ কমিয়ে দেওয়া। পেট কমাতে মেথির দানা খুব কাজে আসে। সবচেয়ে ভালো কথা হল মেথি একজন মহিলার শরীরে নিঃসৃত হরমোন নিয়ন্ত্রণে রেখেই পেটের চর্বি কম করে। রাত্রে এক চামচ মেথি এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে ফোটান। তারপর ঈষদুষ্ণ অবস্থায় পান করুন। পেট তাড়াতাড়ি কমে যাবে।
আমন্ড বাদাম ও অন্যান্য পেট কম করতে বেশ কাজে দেয়। বাদামের মধ্যে থাকে কারবোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন বি ২ ও ভিটামিন ই থাকে। এছাড়াও থাকে ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক আর ক্যালসিয়ামও থাকে। নর্মাল ডেলিভারি হলে ১০ টা আমন্ড বাদাম মিক্সিতে পিশে দুধে মিশিয়ে ১০ দিন পর্যন্ত পান করুন। পেটের অতিরিক্ত মেদ আর বাড়বে না।
এই তিনটে জিনিসও প্রেগনেন্সির পর বাড়তি মেদ কমাতে যথেষ্ট সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জলে এক চামচ মধু, আধা চামচ গোল মরিচ আর আধ চামচ আদার রস মিশিয়ে সকালবেলা খালি পেটে পান করুন। এই ঘরোয়া উপায়ে শুধু পেট কমবে তা নয় আপনার শরীরে শক্তিও আসবে।
শোয়ার এক ঘণ্টা আগে একের চার ভাগ চামচ জায়ফল পাউডার এক গ্লাস গরম দুধে মিশিয়ে পান করুন। দেখবেন এতে পেট অনেক কমে গেছে।
ডেলিভারি নর্মাল হোক বা সিজারিয়ান ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার সাথে সাথে আপনাকে পেট কম করতে এক্সারসাইজ ও যোগব্যায়ামও করতে হবে। আমরা এখানে আপনাদের এমন কিছু এক্সারসাইজ ও যোগব্যায়ামের কথা বলব যেগুলো অনুসরণ করলে প্রেগনেন্সির পর পেটের অতিরিক্ত চর্বি আর অতিরক্ত ওজন দুটোই কমে যাবে। মজার বিষয় হল এই এক্সারসাইজগুলো করার জন্য আপনাকে জিমে যেতে হবে না, বরং বাড়িতে বসেই আপনি এই এক্সারসাইজগুলো করতে পারবেন। তবে একটা জরুরি কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। আপনার ডেলিভারি যদি সিজারিয়ান হয় তাহলে এইগুলো এবং যে কোনও এক্সারসাইজ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিয়ে নেবেন।
ডেলিভারির পর এমন কোনও এক্সারসাইজ করা উচিৎ নয় যার ক্ষতিকর প্রভাব আপনার শরীরের উপর পড়ে। সবচেয়ে ভালো হয় হাল্কা এক্সারসাইজ দিয়ে আপনি প্রেগনেন্সির পর ফিটনেস রুটিন শুরু করুন। আর হাল্কা এক্সারসাইজের মধ্যে জগিংয়ের চেয়ে ভালো আর কি কিছু হতে পারে? রোজ সকাল আর বিকেলে হাঁটতে বেরন আর জগিং করুন। ওজন কম করার জন্য যা যা এক্সারসাইজ আছে সেগুলো সব ডেলিভারির দু তিন মাস পড়ে শুরু করুন।
যোগব্যায়ামের কথা উঠলে বলি প্রেগনেন্সির পর প্রাণায়াম সবচেয়ে লাভজনক। প্রাণায়াম ধীরে ধীরে হলেও আপনার পেটের চর্বি কমিয়ে দেবে আর আপনি পেয়ে যাবেন একদম পারফেক্ট শেপ।
প্রেগনেন্সির পর আপনি ওজন কম করতে হিল স্লাইডস এক্সারসাইজ করতে পারেন। উপরে যে ছবিটা দেওয়া আছে সেই অনুযায়ী আপনি প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করতে পারেন আর পেটের চর্বি থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারেন।
এই এক্সারসাইজ প্রেগনেন্সির পর ওজন কমাতে খুব সাহায্য করে এবং এই এক্সারসাইজ করতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়না।
যদি আপনি পেটের চর্বি কম করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের কোমরের শেপও ঠিক করতে চান তাহলে অ্যারোবিক্স হল সবচেয়ে ভালো উপায়। এতে শুধু পেটের চর্বি কমবে তা নয় আপনার ফিগারও সুন্দর হয়ে যাবে।
যেসব মহিলারা অফিসে যান তারা লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করলে ভালো হয়। আর যদি আপনি গৃহবধূ হন তাহলে ঘরের কাজ আস্তে আস্তে করা শুরু করুন কারণ এটাও একটা এক্সারসাইজ।
ঘরোয়া উপায় আর এক্সারসাইজ ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয় আছে যা আপনার প্রতিদিনের দিনলিপিতে রাখা খুব দরকার। তাই আপনাদের জন্য রইল আরও কয়েকটি জরুরি টিপস।
বাচ্চার জন্মের পর তাকে স্তন্যপান করাবেন অবশ্যই। শরীর ফ্যাট আর ক্যালোরি দিয়ে দুধ তৈরি করে তাই বাচ্চা যত বেশি মায়ের দুধ খাবে তত মায়ের ওজন কমবে। শিশুর জন্মের পর অন্তত ছ’মাস তাকে বাইরের দুধ না খাওয়ানোই ভালো।
প্রেগনেন্সির পরে আপনি কি খাচ্ছেন আর কি পান করছেন তার সরাসরি প্রভাব পড়ে আপনার শিশুর উপর। শিশুকে জতদিন স্তন্যপান করাচ্ছেন ততদিন ওজন কম করার জন্য এমন কিছু খাবেন না যার প্রভাব আপনার শিশুর উপরে পড়ে। ডায়েট বা উপোস করে কোনও ব্রত করবেন না কারণ এতে আপনার চেয়ে আপনার সন্তানের ক্ষতি বেশি হবে।
বাচ্চার জন্মের পর পান করার জন্য শুধু গরম জল বেছে নিন। গরম জল শুধু পেট কম করে তা নয় এটা আপনার অতিরিক্ত মোটা হওয়াও রোধ করে।
প্রতিদিনের খাবারে প্রচুর শাকসবজি ও ফল রাখুন। এই ফল আর সবজি শরীরে ক্যালসিয়াম আর প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে। সবজির মধ্যে লাউ, বিনস, ব্রোকোলি, গাজর আর শালগম, রাখুন। আর ফলের মধ্যে রাখুন আঙুর, কমলালেবু, পেয়ারা আর স্ট্রবেরি রাখুন। এই সময় বাইরের প্যাকেট ফুড না খাওয়াই ভালো। তার চেয়ে ভালো হয় বাড়িতে তৈরি তাজা খাবার খাওয়া।
এটা ঠিক যে বাচ্চার জন্মের পর মায়ের ঘুম ভালো করে হয় না। কারণ বেশিরভাগ বাচ্চাই রাতে ঘুমোয় না আর দিনের বেলা ঘুমোয়। আর আপনি সকালে সংসারের শতেক কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন আবার রাতে বাচ্চা সামলাতে হয়। ফলে ঘুম প্রায় হয়না বললেই চলে। আমরা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি সকালে বাচ্চা যখন ঘুমোবে তখন আপনিও তার সঙ্গে একটু ঘুমিয়ে নিন। তাছাড়া রাতে বাচ্চার দায়িত্ব কিছু সময়ের জন্য নিজের স্বামী বা বাড়ির অন্য কোনও সদস্যের সঙ্গে ভাগ করে নিন। তারা যে সময় এই দায়িত্ব নেবেন আপনি সেই সময় একটু ঘুমিয়ে নিতে পারবেন।
১| প্রশ্ন: প্রেগনেন্সির পরেই ঠিক কতটা ওজন কম করা সম্ভব?
উত্তর: এটা অনেক সময় আপনার সদ্যজাত শিশুর ওজনের উপরেও নির্ভর করে। সাধারণত প্রেগনেন্সির পর একজন মহিলা ৪ থেকে ৫ কেজি ওজন কম করতে পারেন।
২| প্রশ্ন: ডেলিভারির পর একজন মহিলার শারীরিক অবস্থা ঠিক হতে কতটা সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত প্রেগনেন্সির পর একজন মহিলার ঠিক হতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে পুরোপুরি রিকভার হতে সময় লাগে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ।
Picture Courtsey: Instagram
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন
গর্ভাবস্থায় স্লিপিং পজিশন কেমন হওয়া উচিৎ
কর্মরতা মহিলাদের গর্ভাবস্থায় ভালো থাকার টিপস